ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মনিরামপুরে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার

প্রকাশিত: ০৮:২৮, ২৯ এপ্রিল ২০১৯

 মনিরামপুরে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥মনিরামপুরে অবৈধভাবে একের পর এক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে ওঠেছে। এভাবে গড়ে ওঠা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর অধিকাংশেরই নেই কোন নিয়মনীতি, নেই কোন সরকারী অনুমোদন। শুধু অনুমোদনের জন্য অনলাইনে আবেদন করে, আবার কোন প্রতিষ্ঠান কোন কিছু না করেও বহাল তবিয়তে দীর্ঘদিন ধরে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। নিয়মনীতি না থাকার কারণে এ সকল প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনরা নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন, আবার কেউবা লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, দেশের অন্যতম বৃহত্তম উপজেলা মনিরামপুর। বৃহত্তম এ উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নেই কোন উপকরণ, নেই এক্স-রে মেশিন, আল্ট্রাসনো মেশিন, ইসিজি মেশিন, এমনকি রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের রিএজেন্টও নেই, রোগী বহনের জন্য একমাত্র এ্যাম্বুলেন্সটি বছরের ছয় মাস থাকে গ্যারেজবন্দী। নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, যা আছে তারাও ব্যক্তিগত প্র্যাকটিস নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এসকল কারণে একের পর এক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে ওঠেছে। এদিকে, স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা গ্রামের সহজ-সরল রোগী ও রোগীর স্বজনরা বাধ্য হয়ে ক্লিনিকে ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে, আবার কখনও কথিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন, আবার কেউবা লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৮ ক্লিনিক ও ১৪ ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে ওঠেছে। ক্লিনিকগুলো হলো-মনোয়ারা ক্লিনিক, মুন হসপিটাল, ফাতেমা ক্লিনিক, বোরহান উদ্দীন সার্জিক্যাল, তফি ক্লিনিক, কপোতাক্ষ সার্জিক্যাল, রোকেয়া ক্লিনিক ও রিজু হসপিটাল এবং কপোতাক্ষ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জিনিয়া প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি, সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, দি-প্যাথ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাব-সাদ মেডিক্যাল সার্ভিসেস, মেডিকো ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রাজগঞ্জ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডক্টরস ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রগতি ডিজিটাল ডি-ল্যাব, মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সেফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ লাইফ ডায়াগনস্টিক এ্যান্ড কনসালট্যান্ট সেন্টার, তফি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বোরহান উদ্দীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনটির হালনাগাদ রেজিস্ট্রেশন নেই, শুধুমাত্র অনলাইনে আবেদন করা হয়েছে। তাছাড়া কপোতাক্ষ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ লাইফ ডায়াগনস্টিক এ্যান্ড কনসালট্যান্ট সেন্টার, সেফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রাজগঞ্জ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কপোতাক্ষ সার্জিক্যাল, ফতেমা ক্লিনিক প্রতিষ্ঠানগুলো কোন ধরনের আবেদন ছাড়াই স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে চিকিৎসক না থাকায় বোরহান উদ্দীন সার্জিক্যাল ও বোরহান উদ্দীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার বর্তমানে বন্ধ আছে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসকল প্রতিষ্ঠানে নেই কোন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স, নেই আধুনিক উপকরণ, নেই কোন আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার। ফলে সেবা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনরা প্রতারিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত, ঠকছেন বারংবার। সম্প্রতি মনিরামপুর পৌর শহরের পাইলট হাইস্কুল সংলগ্ন মনোয়ারা ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে, পরে প্রশাসনের তদন্তে জানা যায় ওই প্রসূতির অপারেশন করেন ক্লিনিকটির মালিক কথিত সার্জিক্যাল চিকিৎসক আব্দুল হাই (যার কোন চিকিৎসক সনদ নেই)। এ নিয়ে গত ১৯ এপ্রিল মনিরামপুর থানায় ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। বর্তমানে ওই কথিত সার্জিক্যাল চিকিৎসক জেলহাজতে আছেন এবং প্রশাসন ওই ক্লিনিকটি সিলগালা করে রেখেছে। ভুক্তভোগী রোগীর স্বজন উপজেলার স্বরূপদহ গ্রামের আতিয়ার রহমান বলেন, মনোয়ারা ক্লিনিকের দালালের খপ্পরে পড়ে আমার প্রসূতি বোনকে গত বছর এই সময় ভর্তি করি। ভুল অপারেশন করার কারণে আমার বোন মারা যায়। উন্নয়নকর্মী ও মনিরামপুর উপজেলা শুভসংঘের সভাপতি মোঃ শফিকুজ্জামান বলেন, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
×