ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এক্সিবিশন সেন্টার দ্রুত নির্মাণের নির্দেশ

প্রকাশিত: ১২:০৪, ২৮ এপ্রিল ২০১৯

এক্সিবিশন সেন্টার দ্রুত নির্মাণের নির্দেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশী পণ্যের ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার দ্রুত নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন বলে তার দফতর সূত্রে জানা গেছে। জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত তিনবার প্রকল্প পরিবর্তন হওয়ায় কিছুটা বিরক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দিয়েছেন। আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বে বাংলাদেশী পণ্যের নতুন ক্রেতাদের আকর্ষণ করার লক্ষ্যে পণ্য প্রস্তুতকারক এবং রফতানিকারকদের পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে এখানে। এই সেন্টারের মাধ্যমেই ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। সূত্র জানিয়েছে, রফতানিকারক, উৎপাদন এবং ভোক্তাদের নতুন ডিজাইন, আধুনিক প্রযুক্তি এবং সেসবের প্রয়োগ সম্পর্কে পরিচিতি করতেই বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণ খুবই প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে রাজধানীর কাওরান বাজারের রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়িত করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হলেও কাজ সেভাবে আগায়নি। ঠিক সময়ে শেষ হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে (জিওবি) ৪৭৫ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য বাবদ ৬২৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ২০২ কোটি ৮০ লাখ টাকা জোগান দেয়া হবে। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ১০ জুলাই অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, প্রকল্প ঋণ বাবদ ৬২৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা চীন সরকারের অনুদান হিসেবে পাওয়া যাবে। এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো কর্তৃক বাস্তবায়িত হবে। আশা করা হচ্ছে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে। সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল নিউ টাউনের ৪নং সেক্টরের ৩১২নং রোডের, ০০২নং প্লটে ৩৫ একর জমির ওপর নির্মিত হবে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার। সেন্টারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক সিসিটিভিসহ আধুনিক সুবিধা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শেষ হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণ নামে স্থায়ী বাণিজ্যমেলা কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো চীনে তৈরি করা হচ্ছে। সেখান থেকে নিয়ে এসে বাংলাদেশে শুধু সেটিং করা হবে। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই এটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, ‘প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। এটি নির্মিত হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলাসহ সব ধরনের মেলা সেখানেই অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়বে।’ এদিকে এই প্রকল্পের প্রক্রিয়ার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অগ্রগতির ধারাবাহিকতার ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়েছে ইপিবি ও বিআইএডি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানায়, প্রকল্পটি ২০০৯-এর জুলাই থেকে ২০১২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরের উত্তর-পশ্চিম কর্নারের খালি জায়গায় বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল। সেসময় প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৭৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে চীন সরকারের অনুদান ছিল ২১০ কোটি টাকা। এবং জিওবি সুদমুক্ত ঋণ ও অনুদান ছিল ৬৫ কোটি টাকা। ২০০৯ সালের ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পটির বিষয়ে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, সেগুলো হচ্ছে- প্রকল্পটি চীনা অনুদান, জিওবি সুদবিহীন ঋণ ও অনুদান এবং ইপিবির নিজস্ব অর্থায়নে ২০১২ সালর ৩০ জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন হবে। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভূমির মূল্য অন্তর্ভুক্ত করে আন্ডারগ্রাউন্ডে কার পার্কিং, ইউটিলিটি সার্ভিসের ব্যবস্থা রেখে সংশোধিত প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসহ পুনর্গঠন করে এবং প্রকল্প ব্যয় পুনর্নির্ধারণ করে ডিপিপি জরুরীভিত্তিতে পেশ করার জন্য বলা হয়। এরপর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে রাজউক পূর্বাচল উপশহরে মোট ২০ একর জমি বরাদ্দ দেয়। ওই জমি বিবেচনায় রেখে বেইজিং ইনস্টিটিউট অফ আর্কিটেকচারাল ডিজাইন (বিআইএডি) কর্তৃক প্রস্তাবিত সেন্টারের একটি পরিকল্পিত ডিজাইন প্রণয়ন করা হয়। ডিজাইন চূড়ান্ত করার আগেই বিআইএডি প্রকল্প এলাকায় সমীক্ষা পরিচালনা করে। সমীক্ষা পরিচালনার পর বিআইএডি জানায় যে, একনেক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পের ডিজাইনে ভূগর্ভস্থ কার পার্কিং ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা অর্থনৈতিক এবং কারিগরি দৃষ্টিকোণ থেকে যৌক্তিক হবে না। এজন্য ডিজাইন পরিবর্তন করে সারফেস-এ কার পার্কিং ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এটি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর রাজউক কর্তৃক বরাদ্দ ২০ একর জায়গায় প্রস্তাবিত সেন্টার নির্মাণের লক্ষ্যে মোট ৭৯৬ কোটি ১ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে বাড়িয়ে ২০১৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৫ সালে ৪ আগস্ট একনেকের বৈঠকে অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে অতিরিক্ত জমি ক্রয়, নতুন স্থাপনা নির্মাণ, সেন্টারের পরিসর বৃদ্ধি, সেন্টারটি রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাকরণসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্পটি মোট ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে সংশোধনের প্রস্তাব করা হলে ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল প্রকল্পটির ওপর পিইসির (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তের আলোকে আরডিপিপি পুনর্গঠন করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।
×