ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক মিশরাত জাহান মৌসুমীর

দুই ম্যাচে বেশি গোলে জিততে না পারায় আক্ষেপ

প্রকাশিত: ১১:৪২, ২৮ এপ্রিল ২০১৯

দুই ম্যাচে বেশি গোলে জিততে না পারায় আক্ষেপ

রুমেল খান ॥ একটি অতীতের ঘটনা দিয়েই শুরু করা যাক। ৭ অক্টোবর, ২০১৮। সাফ অনুর্ধ-১৮ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসর। ভুটানের চাংলিমিথাং স্টেডিয়াম। ফাইনালে নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। শিরোপা নিয়ে ক্যামেরার সামনে হাসিমুখে পোজ দিলেন অধিনায়ক মিশরাত জাহান মৌসুমী। এবার নিকট ভবিষ্যতের একটি ঘটনার বর্ণনা দেয়া যাক। ৪ মে, ২০১৯। বঙ্গমাতা অনুর্ধ-১৯ মহিলা আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের প্রথম আসর। বাংলাদেশের ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। ফাইনালে লাওসকে ‘১-০’ (?) গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন স্বাগতিক বাংলাদেশ। শিরোপা নিয়ে ক্যামেরার সামনে হাসিমুখে (অথচ চোখে অশ্রুজল টলটল করছে) পোজ দিচ্ছেন অধিনায়ক মিশরাত জাহান মৌসুমী। বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা আগামী ৪ মে এই দৃশ্যটিই যে মনেপ্রাণে দেখে প্রাণ জুড়াতে চান সেটা নিশ্চয়ই আর বলার দরকার নেই। কিন্তু সেখানে স্বপ্ন-আশা থাকে, সেখানে আশঙ্কা-হতাশাও থাকে। কারণ বঙ্গমাতা ফুটবলে বাংলার বাঘিনীরা টানা দুই ম্যাচ জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন এবং সেমিফাইনালে নাম লেখালেও তাদের খেলায় মন ভরছে না কারুর। আক্রমণের পসরা সাজালেও কোন ম্যাচেই খুব বেশি গোল করতে পারেনি গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যারা। রংপুরের মেয়ে মৌসুমী। বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল দিয়ে ২০১১ সালে ক্যারিয়ারের শুরু। সেবার ফাইনালে মৌসুমীদের রংপুর সদরের পালিচড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হেরে গিয়েছিল (প্রতিপক্ষ রাঙামাটির কাউখালীর মঘাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়)। তবে পরের বছর অধরা শিরোপা জেতে মৌসুমীদের পালিচড়া স্কুল। ফাইনালে হারায় সিলেটের জৈন্তাপুরের নিশ্চিন্তপুর রেজিঃ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে। তারপরই বাফুফের চোখ পড়ে মৌসুমীর ওপর। ট্রায়ালে ডাকা হয় তাকে। সেই থেকে লাল-সবুজ জার্সি পরে মাঠ মাতাচ্ছেন সুদর্শনা মৌসুমী। ২০১১ ও ২০১২ সালে ওই আসরে পালিচড়া স্কুলের অধিনায়ক ছিলেন মৌসুমী। মজার ব্যাপারÑ আট বছর পর বঙ্গমাতার নামে আরেকটি টুর্নামেন্টে (আন্তর্জাতিক) এবার জাতীয় অনুর্ধ-১৯ দলের অধিনায়কও সেই মৌসুমীই। বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক ফুটবলে সাফল্য পেতে হলে চারটি ধাপ পেরোতে হবে বাংলাদেশকে। ইতোমধ্যেই আরব আমিরাতকে (২-০) এবং কিরগিজস্তানকে (২-১) হারিয়ে গ্রুপসেরা হবার পাশাপাশি সেমিতেও পৌঁছে গেছে লাল-সবুজরা। এখন বাকি আরও দুই ধাপ পেরোনো। এ প্রসঙ্গে শনিবার জনকণ্ঠকে মৌসুমী বলেন, যেখানে ড্র করলেই আমাদের চলতো, সেখানে আমরা কিরগিজস্তানকে হারিয়েই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এ জন্য অবশ্যই অধিনায়ক হিসেবে আমি খুশি। তাছাড়া সেমিতে যাওয়ার লক্ষ্যও আমাদের পূরণ হয়েছে। খেলায় জিততে গেলে গোল করতে হয়। আর গোল করতে গেলে সুযোগ তৈরি করতে হয়। মৌসুমীরা গত দুই ম্যাচেই সেই সুযোগই অসংখ্যবার তৈরি করতে পেরেছেন, এটা অবশ্যই ভাল দিক। তবে সেই সুযোগগুলোর বেশিরভাগই আমরা কাজে লাগাতে পারিনি, এটা স্বীকার করতেই হবে। তবে আমরা জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছুতে পেরেছি, দলের সবাই ৯০ মিনিটই একই গতিতে, একই দমে খেলতে পেরেছি, এটাও তো দেখতে হবে। মৌসুমীরা আগে অনুর্ধ-১৪, ১৫, ১৬ লেভেলে খেলতে গেলে প্রতিপক্ষ দলগুলোকে ম্যাচে দাঁড়াতেই দিতেন না, স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে হালি হালি গোল করেছে। অথচ এখন অনুর্ধ-১৯, ২৩ বা সিনিয়র লেভেলে খেলতে গেলে সে রকম গোল করতে পারেন না। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘আবার এটাও ঠিক, বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের শুরুর দিকে বাংলাদেশ দলও কিন্তু এ রকম হালি হালি গোল হজম করতো। এক্ষেত্রে বলব, অন্য দলগুলোও কিন্তু এখন বসে নেই। তারাও প্রতিনিয়ত উন্নতি করছে। এ জন্য তাদের সঙ্গে আমাদের ব্যবধান কমে আসছে। আগে মৌসুমীরা অনুর্ধ-১৪ বা ১৬ দলে খেলার সময় বেশি গোলে জিততেন। এটা অনেকবারই হওয়াতে তাদের নিয়ে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেছে। ফলে এখন অনুর্ধ-১৯ দলে খেলতে গিয়ে বেশি গোলে জিততে না পারায় তারা যে হতাশ হচ্ছে এটা বেশ বুঝতে পারছেন মৌসুমী, তাদের এই প্রত্যাশা মেটাতে না পারায় আমরা দুঃখিত। তবে আমাদের চেষ্টার কোন কমতি নেই, এটা জোর দিয়ে বলতে পারি। এই আসরে লাওসকেই বেশি ভাল দল মনে হচ্ছে মৌসুমীর। এর আগে এএফসি অনুর্ধ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের মূলপর্বে বাংলাদেশের পাশাপাশি লাওসও খেলেছিল। ওদের সঙ্গে সেবার মৌসুমীদের খেলতে হয়নি, তবে ওদের খেলা দেখে তখনই ভাল দল মনে হয়েছিল মৌসুমীদের। লাওসকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই : সানজিদা ॥ শনিবার বাফুফে আর্টিফিসিয়াল টার্ফে গিয়ে দেখা গেল বাংলাদেশ দল অনুশীলন শুরু করেছে। কিন্তু দলের মূল একাদশের ও বদলি খেলোয়াড়রা অনুশীলন করছেন না। রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়রা অনুশীলন করছেন। তবে টার্ফে দাঁড়িয়ে মৌসুমীর সঙ্গে খুনসুটি করতে দেখা গেল রাইট উইঙ্গার সানজিদা আক্তারকেও। আগের ম্যাচে কিরগিজস্তানের সঙ্গে এক গোল করেছেন। ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন (সঙ্গে ৫০০ ডলারও)। হাসিমুখে জানালেন, রাতে খুব ভাল ঘুমও হয়েছে। আরও জানালাম, খেলায় আরও গোল করতে পারতাম যদি সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারতাম। আরও গোল পাইনি বলে এ নিয়ে কোন আফসোস নেই। দল জিতেছে, এটাই আমার কাছে বড় আনন্দ। ম্যাচে সানজিদারা যেসব ভুল করেন, সেগুলো নিয়ে কোচিং স্টাফ সানজিদাদের নিয়ে মিটিং করেন, ভিডিও দেখান, মাঠে কাজ করেন, আশাকরি পরের ম্যাচে এসব ভুল অনেক কম হবে। আজ আমরা প্র্যাকটিস করিনি। আজ আমাদের রিকভারি ছিল। রবিবার প্র্যাকটিস করব। লাওস প্রসঙ্গে সানজিদার সাহসী উচ্চারণ, ‘লাওস অনেক ভাল খেলে। আমরাও অনেক ভাল খেলি। ওরা ফাইনালে খেলবে। আমরাও ফাইনালে খেলব। তাদের সঙ্গে আমাদের অনেক ফাইট হবে। আমরা জেতার জন্যই মাঠে নামব। আমরা লাওসকে মোটেও ভয় পাচ্ছি না। আমরা এর আগে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কোরিয়ার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে খেলেছি। লাওস তো তাদের চেয়ে শক্তিশালী না। তাহলে লাওসকে এত ভয় পাওয়ার কী আছে? এখন দেখার বিষয়, সত্যিই এ রকম কিছু ঘটাতে পারে কি না বাংলার বাঘিনীরা?
×