ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন

রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ চাই

প্রকাশিত: ১১:০৬, ২৮ এপ্রিল ২০১৯

রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ চাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্ষায় রাজধানীতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার স্থায়ী নিরসনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে সিটি কর্পোরেশনকে দায়িত্ব দিলে তা গ্রহণে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন। একইসঙ্গে নাগরিক দুর্দশা লাঘব ও জনভোগান্তি কমাতে মহানগরের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চার সংস্থা কাজ করে তাই জলাবদ্ধতা দূর করতে নির্দিষ্ট একটি সংস্থাকে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। শনিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতা নিরসনে ‘জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা ও নাগরিকদের করণীয়’ শীর্ষক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এসব কথা বলেন। ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি মশিউর রহমান খানের সভাপতিত্বে ও তোফাজ্জল হোসেন রুবেলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে মেয়র সাইদ খোকন আসন্ন বর্ষায় সম্ভাব্য জলাবদ্ধতা নিয়ে ডিএসসিসির প্রস্তুতি নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় সংগঠনের সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম শামীমসহ সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় ৪ বছর পর এই প্রথমবারের মতো মিট দ্য প্রেসের মুখোমুখি হলেন মেয়র। সাঈদ খোকন বলেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা দূর করতে সবার আগে সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। এরপরই নাগরিক সচেতনতা তৈরি হলেই কেবল জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, বর্তমান নিয়মানুযায়ী চললে কোনক্রমেই এবছরও জলাবদ্ধতা হবে না তা নিশ্চিত করা যাবে না। কারণ একটানা ৫০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে রাজধানীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা সাপোর্ট করে না। তবে অতিবর্ষণে জলাবদ্ধতা হবে না এটা শতভাগ বলতে পারব না। কারণ, বিশ্বের অনেক শহরে ভারি বর্ষণ হলে জলাবদ্ধতা হয়। এ সমস্যা শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বেই। মেয়র বলেন, তবে আমরা এটাকে (জলাবদ্ধতা) একটা সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনতে চাই। ভারি বর্ষণ হবে, আর সঙ্গে সঙ্গে পানি নেমে যাবে এটা বলা যাবে না। একেবারে জলাবদ্ধতা নিরসন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র বলেন, ঢাকা শহরে যদি এক ঘণ্টা অতিমাত্রায় বৃষ্টি হয় তাহলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবেই। তবে সেই পানি নেমে যাবে, কিন্তু তা নামতে তিন-চার ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। এখান থেকে বের হয়ে আসা খুব সহজ নয়। তবে চেষ্টা চলমান রয়েছে। রাজধানী ও আশপাশের যেসব খাল দিয়ে পানি নেমে যাবে, সেই খালগুলোর চারদিক দখল হয়ে গেছে। যেখানে গিয়ে পানি জমা হয়। এছাড়া নিম্নাঞ্চল ইতোমধ্যেই বালুতে ভরাট হয়ে গেছে। পথের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে পানি নামা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। মেয়র বলেন, ভারি বর্ষণজনিত জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বা সরকার যদি মনে করে এই দায়িত্ব জনগণের কাছে যাদের জবাবদিহিতা আছে, জনগণের কাছে যারা দায়বদ্ধ তারা দেবে, তাহলে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এই দায়িত্ব আমরা নিতে প্রস্তত আছি। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা ওয়াসা একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে আমরা আমাদের আওতাধীন ড্রেনগুলো পরিষ্কার করে ফেলেছি। মেয়র বলেন, নাগরিক সেবায় যেভাবে আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ এসেছে সেভাবে সেবা সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বাড়েনি, দুর্বলতা রয়েছে। আমাদের ব্যাপক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সাঈদ খোকন বলেন, আমরা যখন ড্রেন পরিষ্কার করি তখন লাখ লাখ বোতল পলিথিন পাওয়া যায়। এগুলো ড্রেন ব্লক করে দেয়। ফলে পানি ঠিকমতো নামতে পারে না। সাধারণ মানুষ যদি একটু সচেতন হয়, এগুলো যদি যেখানে-সেখানে না ফেলে তাহলে আমাদের জন্য জলাবদ্ধতা নিরসন করা সহজ হবে। ডিএসসিসি মেয়র বলেন, তবে আমরা বসে নেই। রাজধানীবাসীকে যেন জলাবদ্ধতার ভোগান্তি পোহাতে না হয়, সেজন্য আমরাও কাজ করছি। শান্তিনগর, নাজিমুদ্দিন রোড, গণকটুলির মতো জায়গায় ৪০ বছর আগেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো। জরিপকৃত মোট ১১ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা কাজ করেছি। এখন আর আগের মতো এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় না। খাল রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা সম্পর্কে মেয়র বলেন, আমি বলতে চাই যেসব খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন হবে সেই খালগুলোর দায়িত্বে রয়েছে জেলা প্রশাসক। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ঢাকা ওয়াসা। আর এসব খালে মানুষের ফেলে দেয়া ময়লা আবর্জনা যেন না যায় সেই বিষয়ে মানুষকে বোঝানো, সচেতন করার দায়িত্ব হচ্ছে আমাদের। এসব বিষয়ে এত কমপ্লিকেটেড খাতে না হয় যদি একটি সংস্থার আন্ডারে নিয়ে আসা যায় তাহলে সেবা দেয়া বা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হবে। রাজধানীর জলাবদ্ধতার দায় কারÑ এ প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, একটা বিষয় স্বীকার করেই নিতে হবে, যেটা হচ্ছে বাস্তবতা। কাজেই অতিবর্ষণ হলে জলাবদ্ধতা হবে, নাগরিক ভোগান্তি বাড়বেই। এমনটা সম্ভব না অতিবর্ষণ হলো জলাবদ্ধতা একেবারেই হলো না। সেরকম কোন মেকানিজম আমাদের নেই। সেজন্য নগরবাসীর মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে। ঢাকা শহরে ঘণ্টায় যদি ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়, তাহলে কয়েক ঘণ্টার জন্য পানি জমে যাবে। তবে সেই জমা থাকা পানি যদি ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে নেমে যায় তাহলে খুব বড় আকারে সমস্যা হিসেবে নাও দেখতে পারি। বিষয়টা হচ্ছে আমরা কিভাবে দেখব। এজন্য তিনি আবহাওয়া অফিসকে আগাম সর্তকবার্তা জারির অনুরোধ জানিয়ে সাইদ খোকন বলেন, যদি আবহাওয়া অফিস আগাম বার্তা দেয় তাহলে নগরবাসী খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বা অফিস থেকে বের হবে না। আবার বের হলেও যেন ছাতা নিয়ে বের হতে পারি। নগরবাসী যেন মানসিক প্রস্তুতি নিতে পারেন। হাতিরঝিলের কারণে গতবছর কলাবাগান, কাঁঠালবাগানসহ ধানম-ি এলাকায় যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় তার সমাধান এবছর হবে কি না সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাঈদ খোকন বলেন, সৌন্দর্যের কারণে জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া যাবে না। জীবনের গতিটা যেন স্বাভাবিক থাকে সেভাবেই সেবা সংস্থাগুলোকে কাজ করতে হবে। পলিথিন তৈরি ও বাজারজাতের অপরাধ সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থার বিদ্যমান আইনী কাঠামোর দুর্বলতা প্রশমনে মেয়র বলেন, বাস্তবতার নিরিখে আমাদের আইন কাঠামো খুব বেশি শক্ত নয়। কাজেই আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনিক ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা একটা অবৈধ কারখানার বিরুদ্ধে মাত্র ৫ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারি, যা অনেকটা হাস্যকর। এর বেশি শাস্তি দেয়ার বিধান আমাদের নেই। সে কারণে প্রশাসনিক সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। প্রশাসনিকভাবে শক্তিশালী করার সময় এসেছে। এ সময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, রাজউকের কতটা ক্ষমতা রয়েছে। অন্যান্য সংস্থার কতটুকু ক্ষমতা রয়েছে। মহানগরের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অতি জরুরী।
×