ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গঙ্গা চুক্তি নবায়ন নিয়ে ফের আলোচনার সময় আসছে ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:০১, ২৮ এপ্রিল ২০১৯

গঙ্গা চুক্তি নবায়ন নিয়ে ফের আলোচনার সময় আসছে ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন ॥ গঙ্গার পানি চুক্তির নবায়ন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি নবায়ন নিয়ে আবার আলোচনার সময় আসছে এবং এটি একটি ক্রিটিক্যাল টাইম।’ শনিবার সকালে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একাডেমিতে পানি কূটনীতি বিষয়ক এক কর্মশালার উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। ১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি সই করে বাংলাদেশ ও ভারত। আর সাত বছরের মধ্যে আবার দর কষাকষি করে নতুন চুক্তি করতে হবে দুই দেশকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে যে অবস্থা আছে সেটি চলমান থাকলে ভাল। আমি যখন ভারতে গিয়েছিলাম তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সাক্ষাত হয়। এ সময় তারা বলেছেন তারা বাকি নদীগুলোর সমস্যার বিষয়েও নীতিগতভাবে সম্মত এবং এটি এই অববাহিকার উপকারের জন্য হবে।’ নদীর পানিবণ্টন ইস্যুতে উভয় দেশের মানসিক অবস্থান একইরকম, তবে এখন কিছুটা দেনদরবার চলছে বলে তিনি জানান। ‘বিসমিল্লাহ বলে সই করে দেন’ ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ২০০৯ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি থাকার সময়ে তিনি সুমদ্রসীমার বিরোধ সংক্রান্ত মামলায় ভূমিকা পালন করেন। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা না হলে সুমদ্রসীমা জয় হতো না। আমার নিজের কথা বলি। বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে আমার ওপর দায়দায়িত্ব ছিল একটি আইনী সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠান অনেক টাকা চায়। আমি যেদিন সই করতে গেলাম সেদিন আমার মনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হলো, এতগুলো টাকা দেব, আবার মামলায় জিতব কিনা।’ মন্ত্রী বলেন, ‘আমি নেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। নেত্রী বললেন, আপনি বিসমিল্লাহ বলে সই করে দেন, সব ক্ষেত্রে রিস্ক নিতে হয়। এরপরে আমি আইনী সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করলাম।’ মিয়ানমারে অনেক বিদেশী তেল কোম্পানি কাজ করছে কিন্তু বাংলাদেশে কেন আসছে না জানতে চাইলে তিনি জানান, বিদেশী কোম্পানিগুলো হঠাৎ করে বিনিয়োগ করে না। বিনিয়োগের আগে তারা অনেক কিছু বিবেচনা করে। তিনি বলেন, ‘আমি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিলাম। সেখানে দেখেছি যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বিশেষ করে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুমদ্র বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী, তারা এখানে কাজ করতে চায়।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করেন, ‘চুক্তির দর কষাকষিতে আমরা মনে হয় কিছুটা দুর্বল আছি। একটা কোর্স মনে হয় চালু করা উচিত কন্ট্রাক্ট নেগোসিয়েশনে কীভাবে পরিপক্বতা অর্জন করা যায়।’ এসডিজি দর কষাকষি ॥ কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তব্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যেখানে পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেটি নিয়ে দর কষাকষি সংক্রান্ত তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করি আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। আমরা নদীর অববাহিকার বিষয়টি তুলে ধরেছিলাম এবং এটা তুলে ধরতে অনেক কষ্ট হয়েছিল।’ তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের প্রতিবেশী এটা চায়নি। আমরা চেয়েছিলাম উজান ও ভাটির দেশের ক্ষেত্রে অববাহিকা ব্যবস্থাপনায় সমান অধিকার থাকবে। কিন্তু তারা চাচ্ছিলেন এটার ওপর এককভাবে তাদের অধিকার থাকবে। আমাদের তখন জ্ঞানেরও অভাব ছিল। ইউরোপের রাইন নদীর তীরবর্তী দেশগুলো এবং আফ্রিকার নীল নদের দেশগুলোর কাছে গেলাম এবং জানতে চাইলাম তারা কীভাবে করে। তারা বলল তারা সবাই মিলে এটি ঠিক করে। কোন একক দেশের এটি ক্ষমতা নেই। গঙ্গা পানি চুক্তি ও জাতিসংঘ ॥ ’৭০-এর দশকে বাংলাদেশে যখন সামরিক সরকার ছিল তখন গঙ্গা পানি চুক্তি নিয়ে বেশ সমস্যা হয় বলে মন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, তখন একটি সামরিক সরকার ছিল দেশে। আমার মনে হয় সেটি ১৯৭৭ সাল। তখন সেই সরকার ঠিক করল তারা গঙ্গা পানি চুক্তি বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপন করবে। সে সময় আমরা যারা শিক্ষকতা করতাম তারা বলেছিলাম এই বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘে গেলে এটি খুব ভাল কাজ করবে না। যখন বাংলাদেশ সরকার এটি জাতিসংঘে নিয়ে গেল, একটি বিপর্যয়কর অবস্থার সৃষ্টি হলো। ভারতের অনেক প্রভাব আছে, অনেক বন্ধু আছে। তারা ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘে কোন অধিবেশন করতে দেয়নি।
×