ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ;###;অধিকাংশ জমিতেই পেকে গেছে ধান;###;ঝড়বৃষ্টির আগেই ঘরে তোলার চেষ্টায় কৃষক

বোরোয় বাম্পার ফলন ॥ আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ২৮ এপ্রিল ২০১৯

বোরোয় বাম্পার ফলন ॥ আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি

ওয়াজেদ হীরা ॥ মাঠের পর মাঠ বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালি ধান। মাঠে সোনালি ধান আর কৃষকের হাসিমাখা মুখ জানিয়ে দিচ্ছে বোরোর বাম্পার ফলনের সুখবর। বোরো ধানের গন্ধে ভরপুর সর্বত্রই। কৃষকরা কেউ ধান কাটছেন, কেউ আঁটি বাঁধছেন। কেউ সেই ধান নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ির উঠানে, মাড়াই করে বস্তাবন্দী করছেন। আবহাওয়া ভাল থাকায় শহরের আশপাশের কৃষি জমি থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকালয় সর্বত্রই সবাই মেতেছেন ধান কাটা উৎসবে। কৃষকের মাঠ ভরে গেছে বোরোর বাম্পার ফলনে। সেই ফলন ঘরে তুলতে ব্যস্ত সবাই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ জমিতে আবাদ হয়েছে এবার বোরো ধান। ফলনও হয়েছে বেশ। মাঠের ৯০ শতাংশেরও বেশি ধান পেকে গেছে। গরমে নগরবাসীর যেখানে হাঁসফাঁস অবস্থা সেখানে মাঠের সোনা ফলানো মানুষগুলো চান আর কয়েকটা দিন থাকুক এমন রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়িয়ে কষ্টার্জিত ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত চাষীরা। তাইতো বৈশাখের তীব্র গরমে আকাশে মেঘ দেখলেই কালো হয়ে আসে চাষীর মুখ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) তথ্যানুযায়ী, এবার বোরো আবাদের জন্য জমির পরিমাণ ধরা হয় ৪৮ লাখ ৪২ হাজার হেক্টর। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৪৭ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর। তবে নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে বেশি জমিতে প্রায় ৪৯ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে বোরো ধান। এছাড়াও গত অর্থবছরেও নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হয়েছিল। আর এ বছর সরকার বোরোর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এক কোটি ৯৬ লাখ ২৩ হাজার টন। সরেজমিন উইংয়ের একাধিক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ে যে ফলন দেখেছি এবং যে খবর পাচ্ছি আশা করছি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ফলন পাব। এ দিকে ধানের বাম্পার ফলন হলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। ধানের উপযুক্ত মূল্য না হলে আগামীতে ধান চাষ ব্যাহত হবে বলে মনে করছেন তারা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, এবার বোরো উৎপাদনের আবহাওয়াটা খুবই ভাল ছিল। না একটু কম না একটু বেশি। সব দিক থেকে এমন পারফেক্ট আবহাওয়া পাওয়া যায় না। এবার খুবই ভালো ছিল। আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে যেখান থেকে ১ কোটি ৯৬ লাখ টন চাল সংগ্রহ হবে। সচিব আরও বলেন, ঠা-ার কারণে হবিগঞ্জের কিছু এলাকায় আবাদকৃত ধানের ভেতরে চিটা হয়েছে তবে সার্বিক উৎপাদনে এটি কোন প্রভাব ফেলবে না। উৎপাদন নিয়ে এক প্রশ্নে সচিব বলেন, সরকারের নানামুখী উদ্যোগ রয়েছে এই উৎপাদন বৃদ্ধির পেছনে। আমরা নতুন জাতগুলোকে তিন বছরের মধ্যে একটি কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে মাঠে নিয়ে যাচ্ছি। এতে করে কৃষকরা চাষাবাদের মাধ্যমে ভাল ফলন পাচ্ছেন। হাওড় এলাকায় ধান কাটায় শ্রমিক সঙ্কট হয় জানিয়ে সচিব বলেন, সেখানে পাথর উত্তোলন করা শ্রমিকরাই ধান কাটে। এসকল শ্রমিক যাতে পাওয়া যায় সে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। ফলে শ্রমিক এখন পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে ইতোমধ্যেই অনেক জায়গায় ধান কাটা শুরু হলেও কোথাও কোথাও শুরু হয়নি। কৃষকরা প্রতিদিনই আকাশ পানে তাকান। কোথাও আবার রয়েছে শ্রমিক সঙ্কটও। প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে কৃষকদের মনে শঙ্কা বিরাজ করছে। যে কোন সময় শিলা বৃষ্টি বা ঝড় ধানের ক্ষতি করে কৃষকের স্বপ্ন ভাসিয়ে দিতে পারে। সারা দেশে তীব্র দাবদাহের মধ্যে যেখানে নগরের মানুষ ভ্যাপসা গরমে ঘরের মধ্যেই হাঁসফাঁস করছেন সেখানে গ্রামের দৃশ্য উল্টো। গ্রামের মানুষ ঘরে নেই। শিশু-কিশোর থেকে বৃদ্ধ সবাই দাবদাহ উপেক্ষা করে বোরো ধান ঘরে তুলতে মাঠে কাজ করছেন। দিন-রাত সমানতালে কাজ চলছে। শহরের মানুষ বৃষ্টির জন্য বার বার আকাশ পানে তাকায় আর কৃষকরা সেখানে বলছেন আর কয়েকটা দিন থাকুক এই অবস্থা। আর কয়েকটি দিন এমন রৌদ্রোজ্জ্বল থাকলে ফলন ঘরে উঠানো যাবে বলে একাধিক কৃষক জানিয়েছেন। এদিকে আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, উত্তরাঞ্চলে গরম কিছুটা কমেছে, দক্ষিণাঞ্চলে কমেনি। বৃষ্টি কিছু কিছু জায়গায় অল্প করে হলেও হচ্ছে। মে মাসে একটি নি¤œচাপ আছে। যা ইতোমধ্যেই গভীর নি¤œচাপে পরিণত হয়েছে ফলে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা আছে। মে মাসের প্রথম দিকে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়বে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ। হাওড় এলাকা সুনামগঞ্জ। প্রতিবছরই ধান কাটা হয় উৎসবের মাধ্যমে। একসপ্তাহ পূর্বেই সেই ধান কাটা উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এরপর থেকে মাঠের ধান কাটা চলছেই। যদিও শ্রমিক সঙ্কট অন্যতম সমস্যা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে জানা যায়, এ বছর সুনামগঞ্জে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমি। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে এবার বোরোর আবাদ হয়েছে। এ বছর ২ লাখ ২৪ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। হাওড়ের ফসল ভাল হলেও ধান কাটার শ্রমিক সঙ্কট নিরসনের জন্য বালু পাথর কোয়ারির শ্রমিকদের ধান কাটার কাজে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। হাওড়ের কৃষক মানিক মিয়া জানান, আল্লাহর রহমতে খুব ভাল ধান হইছে। ২০১৭ সালের মতো যদি বৃষ্টি হইতো তাইলে আমরা হক্কলের সব ধান পানিত গেলো নে। বৃষ্টির আগে সব ধান কাটতে পারলে খুব ভাল অইবো। কৃষক শরিফ মিয়া বলেন, এইবার গতবারের চেয়ে অনেক ভাল ধান হইছে। আমরা খুব খুশি। কারণ আমরার একমাত্র ফসল বোরো। বোরো ফসলের ফলন ভাল অইছে। ন্যায্য দাম পাইলেই হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ বশির আহম্মদ সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, এবার হাওড়ে ফলন খুবই ভালো হয়েছে। এখন পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলায় ৫৭ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। যদি আবহাওয়ার সমস্যা না হয় তাহলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে। মাঠে শ্রমিক সঙ্কটের জন্য আমরা বালু ও পাথর কোয়ারির শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রাখার কথা বলেছিলাম। হবিগঞ্জের হাওড়গুলোতে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। হাওড়জুড়ে এখন শুধু পাকা ধানের রঙিন ঝিলিক আর ম ম ঘ্রাণ। সপ্তাহখানেক আগ থেকেই হবিগঞ্জের হাওড়ে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। তবে শ্রমিক সঙ্কট থাকায় ধান কাটায় অন্য বছরের তুলনায় অনেকটা ধীরগতি বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় বোরো ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তাই বোরো ধানের উৎপাদনও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। জেলায় এবার মোট পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৭৫০ টন বোরো ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ধানের এমন ফলনে খুশি হবিগঞ্জের কৃষকরা। প্রচ- দাবদাহেও কণ্ঠে ভাটিয়ালি গান ধরে ধান কাটছেন কৃষকরা। বসে নেই নারীরাও। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে ধান তোলার ব্যস্ততা। হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আলী জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের ফলন এবার ভাল। এরিয়াও বেড়েছে। এখন পর্যন্ত হাওড়ে ৪০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। আশা করছি মে প্রথম সপ্তাহে হাওড়ে সব ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চলে বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এ বছর বোরো (ব্রি ধান-২৮ জাতের) ধানে চিটা হওয়ায় ফসলে এই অঞ্চলের কয়েক জায়গায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। যে কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষীরা। নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনা জেলার পাঁচটি হাওড় উপজেলাসহ ১০টি উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত করা হয় ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৫২ হেক্টর জমি। শেষ পর্যন্ত আবাদ করা হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি। এ বছর পাহাড়ী ঢল ও আগাম বন্যা দেখা না দিলেও মোহনগঞ্জ উপজেলার ডিঙ্গাপুতা হাওড়, শনির হাওড়, তেঁতুলিয়া, গাগলাজুর, সুয়াইর, হাটনাইয়া, আদর্শনগর, খালিয়াজুরী উপজেলার চাকুয়া, জগন্নাথপুর, পাংগাসিয়া, কির্তনখোলা, কটিচাপরা, সেনের বিল, জালর বন, সোনাতোলা, বল্লীর চৌতরা, জগন্নাথপুরের বড় হাওড়, বাজোয়াইল, পাঁচহাট, নগর, বোয়ালী, মদন উপজেলার মাঘান, হাওড়সহ বিভিন্ন হাওরে ধানে ব্যাপক চিটা দেখা দিয়েছে। উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা বলছেন, এটা শীতজনিত সমস্যা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এক কর্তকর্তা বলেন, ‘খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, মদন এবং কলমাকান্দা উপজেলার হাওড়াঞ্চলের প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছে। বিষয়টি সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। এদিকে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে নতুন ধানের বাজার মূল্য কম থাকায় হতাশ কৃষকরা। এ দামে তাদের উৎপাদন ব্যয়ও উঠবে না বলে জানান একাধিক কৃষক। কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের হাওর এলাকা থেকে প্রতিদিন ভৈরব বাজারে হাজার হাজার মণ নতুন ধান আসছে। তবে দাম খুবই কম। এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। তবে বৈশাখের শুরুতে হাওরে ধান কাটা শুরু হলেও শ্রমিকের অভাব দেখা দেয়। ধান কাটতে দিনমজুরের প্রতিদিনের মজুরি ৬০০-৭০০ টাকা। জানা যায়, ভৈরববাজারে প্রতিমণ মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪৫০ টাকা। তবে চিকন ধানের বাজার দর ৫০০ টাকা। কৃষকরা বলছেন, প্রতিমণ ধান উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে ৬০০-৬৫০ টাকা। বর্তমান বাজার দরে ধান বিক্রি করে কৃষকরা লোকসানে পড়ছে। ভৈরবের আড়ৎদার এমএ মান্নান জানান, প্রতি বছর বৈশাখ মাসে নতুন ধানের দাম কমই থাকে। কারণ এখন আমদানি করা ধান আধা শুকনা ও ভেজা। পুরোপুরি শুকনা ধান এখনো আমদানি শুরু হয়নি। কৃষকরা জমিতে ধান কাটার পর আধা শুকনা ধান বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে আসছে। আড়ৎদার মোঃ আলী হোসেন জানান, আশপাশের রাইস মিলগুলো এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি। সরকারী গুদামগুলো নতুন ধান কেনা শুরু করেনি। মে-জুন মাসে সরকার নতুন ধান কেনা শুরু করলে ধানের দাম আরও বাড়বে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, এবার হাওড়ে বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কয়েক লাখ টন ধান কৃষকের ঘরে উঠবে। তবে বাজার দর কম থাকাটা দুঃখজনক। এদিকে কোন কোন স্থানে বোরো চাষীদের দ্রুত ধান কাটার জন্য আগাম সতর্কতামূলক পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পাকা ধানের সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে কৃষকদের সাবধান করতেই এ পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বগুড়ায়ও বাম্পার ফলন হয়েছে বোরোর। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় কৃষি অফিসের তথ্যে জানা গেছে, বৃষ্টির পানি ও সেচের মাধ্যমে জমিতে প্রয়োজনমতো পানি, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করায় উপজেলায় এবার বোরো ধানের ফলন ভাল হয়েছে। পাকা ধানে ভরে উঠছে মাঠের পর মাঠ। উপজেলায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পেকে যাওয়া ধান কাটতে কৃষকদের উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। জেলার একাধিক কৃষকের সঙ্গে মুঠো ফোনে কথা বলে জানা গেছে ফলন এবার ভাল তবে শ্রমিক সঙ্কট ও শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় ফসল ঘরে উঠানো নিয়ে দুশ্চিন্তা কাজ করছে। মাগুরায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে পাকা ধান কাটা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি বোরে ধানের চাষ হয়েছে। কৃষকরা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চারদিকে শুধু ধান আর ধান। কৃষি শ্রমিকদের দম ফেলার সময় নেই। টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার কৃষক আলী আমজাদ জনকণ্ঠকে বলেন, যে পরিশ্রম করেছি এই ধানের জন্য, এখন ভালোয় ভালোয় ফলন ঘরে তুলতে চাই। আমজাদের প্রতিবেশী সোরহাবের অবশ্য ধান কাটা শেষ এখন মাড়াই চলছে। তিনি বলেন, কড়ারোদে ধান কেটেছি কষ্টের ফসল বলে কথা, বৃষ্টি হলেই সব শেষ! তাইতো দেড়ি করিনাই। খুলনা জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, খুলনা জেলায় গত মৌসুমে ৫১ হাজার ৮২৪ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে ৫৮ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ হয়। এ মৌসুমে ৫৮ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদেও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, আবাদ হয়েছে বেশি। নওগাঁ জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত কোথাও কোথাও ফসল সংগ্রেহের কাজ চলছে। সারা দিনের কাটা ধান সন্ধ্যার পর বাড়ির উঠোনে আনা হচ্ছে। ২০১৭ সালে আগাম বন্যায় লোকসান গুনেছিলেন কৃষকরা। পরের বছর সেই লোকসান অনেকটাই কেটে যায়। বাম্পার ফলন হয় বোরোতে। এবারও ভাল ফলন হবে শুরু থেকেই আশায় বুক বেঁধেছিল কৃষকরা। আশার বাণি শুনিয়েছিলেন কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও। কৃষি সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বোরো আবাদে কৃষকদের নানা পরামর্শ সহায়তা দেয়া হয়। যার সুফল হলো এই ফলন। সরকার ফলন বৃদ্ধিতে যে বার্তা দিচ্ছে কর্মকর্তারা সেই বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষকের কাছে। কৃষকরা বলছেন ফলন যেমন ভাল হয়েছে ভালোয় ভালো ঘরে উঠিয়ে দামটা ভাল পেলেই খুশি তারা।
×