ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খন্দকার শাহ আলমের ‘আমি’ নাটকের রজতজয়ন্তী প্রদর্শনী আজ

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ২৮ এপ্রিল ২০১৯

খন্দকার শাহ আলমের ‘আমি’ নাটকের রজতজয়ন্তী প্রদর্শনী আজ

সাজু আহমেদ ॥ বাংলাদেশ থিয়েটারের শুধু নয় বাংলাদেশের নাট্য অঙ্গনের অন্যতম নন্দিত শিল্পী ও সংগঠক খন্দকার শাহ আলম। শক্তিমান অভিনেতা শাহ আলম নিজ দলের হয়ে বিভিন্ন নাটকে ব্যতিক্রমী চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রতিভাবান শিল্পী হিসেবে অসংখ্যবার নিজেকে মেলে ধরেছেন। অভিনয়শিল্পী জীবনের দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা সত্তার চূড়ান্ত জানান দেন ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট। এদিন বাংলাদেশ থিয়েটারের ১৭তম প্রযোজনা, খন্দকার শাহ আলমের একক অভিনয় সমৃদ্ধ নাটক ‘আমি’ মঞ্চে আসে। এরপর দেড় বছরে নাটকটির ২৪টি মঞ্চায়ন হয়েছে। বিদেশের মাটিতেও নাটকটি প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে গত বছর ভারতের বীজপুর চতুর্থ সূত্র আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব এবং মুর্শিদাবাদসহ আরও কয়েকটি স্থানে নাটকটির একাধিক মঞ্চায়নের পর প্রশংসিত হয়। খন্দকার শাহ আলমের একক অভিনয় বাংলাদেশের নাট্যকর্মীদের জন্য সুনাম বয়ে নিয়ে আসেন। দেশে-বিদেশে নিয়মিত প্রদর্শনীর ধারাবাহিকতায় ‘আমি’ নাটকটির রজতজয়ন্তী মঞ্চায়ন হতে যাচ্ছে আজ। দলসূত্রে জানা গেছে আজ সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাটকটির বিশেষ মঞ্চায়ন হবে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ থিয়েটারের উদ্যোগে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ থিয়েটারের সভাপতি আবদুল আজিজ। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক ও ‘আমি’ নাটকের অভিনেতা খন্দকার শাহ আলম, নির্দেশক ড. আইরিন পারভীন লোপা, নাট্যকার মাহবুব আলমসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। রজতজয়ন্তী মঞ্চায়ন উপলক্ষে ‘আমি’ নাটকের অভিনেতা খন্দকার শাহ আলম তার অনুভূতি জানিয়ে বলেন আমি খুবই আপ্লুত, আনন্দিত। খুবই ভাল লাগছে যে একক অভিনয়ের ‘আমি’ নাটকটির ২৫তম মঞ্চায়ন করতে পারছি। এই সফলতার জন্য আমি প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের সুপ্রিয় নাট্য দর্শকদের। যাদের কারণে আমরা মঞ্চে উঠি। যাদের একটু ভালবাসা, হাততালি, একটু প্রশংসা বা উৎসাহের কারণে আমরা মঞ্চে প্রাণ পাই। মূলত দর্শকদের কারণে আমরা সব কিছু করি। তাদের ভালবাসা পেলেই আমাদের শ্রম সার্থক হয়। তাদের ভালবাসার কারণেই আজ ‘আমি’ নাটকের রজতজয়ন্তী প্রদর্শনী করতে পারছি। বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই, তরুণ প্রতিভাবান নাট্যকার মাহবুব আলমকে। সুন্দর একটি স্ক্রিপ্ট দিয়ে তিনি আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছেন বলে। আর আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই আমার নির্দেশক, বাংলাদেশের অত্যন্ত গুণী একজন নির্দেশক ড. আইরিন পারভীন লোপার প্রতি। কারণ মঞ্চে তিনিই আমাকে এই নাটকের চরিত্র রূপায়নে ভূমিকা রেখেছেন। তার কারণেই এই নাটকে আমি নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছি। আরও ধন্যবাদ জানাই আমার দলের কর্মীদের। যারা বিভিন্নভাবে আমাকে এবং নাটকের টিম সহায়তা করেছেন। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি একটি ভাল কাজের জন্য অনেকের সহায়তাই প্রয়োজন হয়। একজন মঞ্চকর্মী হিসেবে ‘আমি’ নাটকে একজন শিল্পীর চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে আমি গর্বিত। এ প্রযোজনায় প্রতিনিয়ত অনেকেই আমাকে নানাভাবে সহায়তা করেছেন। সবার প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং ভালাবাসা। তাদের সঙ্গে নিয়েই আমি নাটকটির শততম মঞ্চায়ন করতে চাই। একাধিক শতরজনী পার করতে চাই। বাংলাদেশ থিয়েটারের ১৭তম প্রযোজনা ‘আমি’ নাটকটি রচনা করেছেন বাংলাদেশের আরেক সম্ভাবনাময় তরুণ নাট্যকার মাহবুব আলম। নির্দেশনা দিয়েছেন দেশের প্রথিতযশা নির্দেশক ড. আইরিন পারভীন লোপা। নাটকে একক অভিনয় করেন খন্দকার শাহ আলম। নাটকের মঞ্চ পরিকল্পনায় ফজলে রাব্বী সুকর্ণ, আলোক পরিকল্পনা কলকাতার জয়ন্ত মুখার্জী। আবহসঙ্গীত শেখ জসিম। অভিনয় দক্ষতার গুণে ‘আমি’ নাটকে খন্দকার শাহ্ আলম নিজেকেই অনন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন। ‘আমি’ নাটকের গল্পে দেখা যায় একজন মানুষের যাপিত জীবন ব্যাপ্ত থাকে নানাবিধ কর্মময়তায়। রুশদু তেমনি একজন মানুষ যার পুরো জীবন জড়িয়ে আছে শিল্পের বাতাবরণে। আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো তার জীবন নয়। সৃষ্টিশীল এই মানুষটা বেঁচে থাকতে চায় তার শিল্পের জীবনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু শিল্পের মাঝে যাপন করা শিল্পীর জীবন মসৃণ নয়, কারণ শিল্প সাধনায় যে সুখ তা শুধু শিল্পের জন্য বাঁচা যায়, যা শিল্পের সুদীর্ঘ কণ্টকাকীর্ণ পথকে মসৃণ করে। শিল্প স্রষ্টার এই বেঁচে থাকা সমাজের জন্য, শিল্প সৃষ্টির জন্য। তাই শিল্পীর ব্যক্তি জীবনের সঙ্কট কখনই লোকচক্ষুর সামনে দৃশ্যমান হয় না। শিল্পের জীবনযাপনের একজন শিল্পী বা শিল্পস্রষ্টা তার ব্যক্তি জীবনে কত কঠিন পরীক্ষা আর ত্যাগের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা কেবল শিল্পের সাধনায় ব্রত মানুষটিই অনুধাবন করতে পারে। ‘আমি’ নাটকটি শিল্পের সাধক রুশদুর শিল্প জীবন ও ব্যক্তি জীবনের টানাপোড়েনের মিথস্ক্রিয়া। নাটকে ব্যক্তি ও শিল্প জীবনের দ্যোতনা চমৎকার ভাষায় রচনা করেছেন তরুণ নাট্যকার মাহবুব আলম। যা বর্তমান সময়ে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। শিল্পী জীবনের এই টানাপোড়েনের গল্পটির নান্দনিক চিত্র মঞ্চে নির্মাণ করেছেন নির্দেশক ড. আইরিন পারভীন লোপা। নাটকের প্রাণ, অভিনেতা খন্দকার শাহ্ আলম। নাটকের গল্পে একজন শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবনের নানা টানাপোড়েনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। একজন শিল্পী তিনি তার সবকিছু দিয়ে শিল্পচর্চার মাধ্যমে সমাজের মানুষকে আনন্দ দিয়ে যান। আনন্দ দেয়ার কারণে সমাজে সবচেয়ে আকর্ষণীয় মানুষ একজন শিল্পী। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে তিনি সমাজে কতটা আনন্দ অনুভূতি নিয়ে বেঁচে থাকেন, অথবা তার ব্যক্তিগত জীবনই বা কতটা সুখের বা কষ্টের তার খবর কেউ রাখে না। একজন শিল্পীর শিল্পী হয়ে উঠতে নানা সামাজিক, আর্থিক প্রতিবন্ধকতা পার করতে হয়। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে তবেই শিল্পী নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে অধিষ্ঠিত হয়। শিল্পী তার নিজের চর্চার বাইরে সামাজিক, অর্থনৈতিক নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে সে হাল ছেড়ে দেয়। তবে একসময় সে নিজের চর্চা এবং শিল্পের কাছে ফিরে আসে। এমনি ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে এগিয়েছে ‘আমি’ নাটকের কাহিনী। প্রসঙ্গত গত ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট উদ্বোধনী মঞ্চায়নের পর এ পর্যন্ত নাটকটির বেশ সফলতার সঙ্গেই নিয়মিতভাবে মঞ্চায়ন হচ্ছে।
×