ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতীয় বাঙালী বিজ্ঞানীর উদ্ভাবন

পানিতে মিশ্রিত ক্যান্সারের বিষ শোধন পদ্ধতি আবিষ্কার

প্রকাশিত: ০৮:৫৩, ২৮ এপ্রিল ২০১৯

পানিতে মিশ্রিত ক্যান্সারের বিষ শোধন পদ্ধতি আবিষ্কার

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার মোহনপুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এ্যান্ড এডুকেশনের (আইসার-কলকাতা) অধ্যাপক রাহুল ব্যানার্জি সুকঠিন নিয়ম আর শৃঙ্খলার মধ্যে অবাক করা কৌশলে ফোম বা ফেনার মতো জৈব যৌগ তৈরি করে দ্রুতগতিতে পানিকে পুরোপুরি বিষমুক্ত করার উপায় আবিষ্কার করলেন। রাহুল লন্ডনের ‘ফেলো অব দ্য রয়্যাল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রি’। আনন্দবাজার পত্রিকা। কঠিন অবস্থায় থাকা দুটি জৈব যৌগ- এ্যালডিহাইড আর এ্যামিনযুক্ত যে নতুন জৈব যৌগটি তৈরি হয়েছে তার নাম ‘বেঞ্জিন ট্রাই-হাইড্রক্সি ট্রাই-এ্যালডিহাইড-ডাই-এ্যামিন-পলিমার’। এটি একটি পলিমার যৌগ। কঠিন পদার্থ তবে স্পঞ্জের মতো তুলতুলে। যেকোন কিছু শুষে নেয়ার ক্ষেত্রে ব্লটিং পেপারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী। যারা ‘কোভ্যালেন্ট অরগ্যানিক ফোম’ গোত্রের। অধ্যাপক রাহুল ও তার নয় শিক্ষার্থীর গবেষণাপত্রটি ‘জার্নাল অব দ্য আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি’ (জেএসিএস) নামে বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। যে দুই ধরনের পদার্থের মধ্যে কখনই মিল হয় না তাদেরই মধ্যে মিশ্রণ ঘটিয়ে দিতে পেরেছেন তারা। সুকঠিন নিয়ম ও শৃঙ্খলার মধ্যে খুব কৌশলে মিশ্রণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে পানি থেকে খুব দ্রুত ক্যান্সারের জনক কার্সিনোজেনিক নামক মারাত্মক বিষ শুষে নেয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন হয়েছে নতুন যৌগটির। ঘরের স্বাভাবিক চাপ ও তাপমাত্রায় এটি সম্ভব হয়েছে। গবেষক রাহুল জানান, তারা একটি বিকারে কঠিন অবস্থায় থাকা দুটি জৈব যৌগ এ্যালডিহাইড আর এ্যামিনের মিশ্রণ নিয়ে খুব জোরে সেগুলোকে একীভূত করেছেন। নতুন যে মিশ্রণ তৈরি হলো, তাতে মিশিয়েছেন কঠিন অবস্থায় থাকা সালফোনিক এ্যাসিড আর সোডিয়াম বাই-কার্বনেট। সালফোনিক এ্যাসিড মেশানোর পর তৈরি হয় মিথাইল বেঞ্জিন সালফোনিক এ্যাসিড। যা কঠিন পদার্থ। আর বেরিয়ে যায় কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস। এই কঠিন পদার্থের একটির নাম- এ্যামরফাস। যার কোন সুনির্দিষ্ট আকার, আয়তন নেই। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তার চেহারা, আকার ও আকৃতি বদলে যায়। অন্যটি ক্রিস্টাল বা কেলাস। যার একটি সুনির্দিষ্ট আকার ও আয়তন রয়েছে। কোন কেলাস জাতীয় পদার্থের মধ্যে যদি এ্যামরফাসের মিশ্রণ ঘটানো সম্ভব হয় তাহলে কেলাস ভেঙ্গে যায়। এক্ষেত্রে যেটি হয়েছে সেটি হলো কেলাস না ভেঙ্গে বরং বাড়তি জায়গা তৈরি হয়েছে। বাড়তি ছিদ্র তৈরি হয়েছে। যেজন্য কিছু শুষে নেয়ার ক্ষমতা অনেকগুণ বেড়ে গেছে সেই ক্রিস্টাল ও এ্যামরফাস পদার্থ দিয়ে বানানো নতুন জৈব যৌগটির। কেলাসের সঙ্গে এ্যামরফাস জাতীয় পদার্থ মিশে স্পঞ্জের মতো নতুন একটি জৈব যৌগ তৈরি করে, যার মধ্যে ফাঁক অনেকটাই বেড়ে গেছে। কেলাসটা ভাঙ্গেনি বলে পদার্থের শোষণ ক্ষমতা বেড়েছে অনেক গুণ। অন্যতম গবেষক কৌশিক দে জানান, সব ধরনের জলে মিশে থাকে একটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক পদার্থ। ‘বিস ফেনল’। যা ক্যান্সারের জনক। যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে, ‘কার্সিনোজেনিক মেটিরিয়াল’। এদের জল থেকে দ্রুত ও পুরোপুরি শোষণ করার মতো কোন পদার্থ এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। রাহুলের কথায়, তার কারণ, দুটি। এগুলো খুবই সামান্য পরিমাণে পানির মধ্যে মিশে থাকে। আর তাদের আকার এত ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না। তাই এখন পর্যন্ত কোন ফিল্টার বা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কোথাও জল থেকে সেই মারাত্মক বিষ শুষে নেয়া সম্ভব হয়নি কোন প্রযুক্তিতেই। আমাদের বানানো পদার্থটিতে যেহেতু সুকৌশলে ছিদ্রগুলো বড় করতে পেরেছি, কেলাসের নিয়মের মধ্যে এ্যামরফাসের মিশ্রণের জন্য শোষণ ক্ষমতা বেড়ে গেছে অনেকগুণ। সালফোনিক এ্যাসিড মেশানোর পর কঠিন মিশ্রণটি থেকে যে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস বেরিয়ে যায় সেটাই ওই ছিদ্রগুলোকে বড় করে দিচ্ছে। বেরিয়ে আসার জন্য ওই গ্যাস তার জায়গা করে নিচ্ছে। এক লিটার জলে ২০ ন্যানোগ্রাম। এক গ্রাম বলতে বোঝায়, এক শ’ কোটি ন্যানোগ্রাম। যার মানে, এক লিটার পানিতে যদি বিষাক্ত যৌগ বিস ফেনলের এক শ’ কোটি অণু মিশে থাকে, তা হলে তার ওজন হবে ১ গ্রাম। ব্যাঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের (আইআইএসসি) অধ্যাপক পার্থসারথী মুখার্জি বলছেন, অবশ্যই এটি একটি পথপ্রদর্শক গবেষণা। আগামী দিনে এই পদ্ধতিতে জলশোধন তো বটেই, নানা ধরনের খনিজ পদার্থ নিষ্কাশনেও এটা কাজে লাগবে।
×