ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডেমোক্র্যাটদের বিরোধিতা

এটিটি থেকে সরলো যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ২৮ এপ্রিল ২০১৯

এটিটি থেকে সরলো যুক্তরাষ্ট্র

জাতিসংঘের বহুল আলোচিত অস্ত্র বাণিজ্য চুক্তি ‘এটিটি’ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানাপোলিসে দেশটির ন্যাশনাল রাইফেল এ্যাসোসিয়েশন-এনআরএ’র বার্ষিক বৈঠকে এই ঘোষণা দেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১৩ সালে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে সরে আসার জন্য শুক্রবার স্বাক্ষর করেন। তবে ট্রাম্পের বিরোধী শিবির তার এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। অপরদিকে এনআরএ’র ৫৫ লাখ সদস্য ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে সমাবেশ করেছে। ২০১৩ সালে বিশ্বের ১৩০ দেশ এটিটি স্বাক্ষর করে। এর মধ্যে ১০১ দেশ তাদের পার্লামেন্টে এটি পাস করায়। তখন যুক্তরাষ্ট্র রিপাবলিকানদের বিরোধিতায় চুক্তিটি পাস করাতে পারেনি। তবে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো বড় দেশ চুক্তিটি পাস করাতে সমর্থ হয়েছিল। খবর দ্যা গার্ডিয়ান,বিবিসি ও আলজাজিরা অনলাইনের। এটিটি চুক্তির আওতায় জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী প্রচলিত যুদ্ধাস্ত্র ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে আসছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে প্রচলিত ছোটখাটো যুদ্ধাস্ত্র, ট্যাঙ্ক, জঙ্গী বিমান ও যুদ্ধজাহাজ রয়েছে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের শীর্ষ অস্ত্র রফতানিকারক দেশ। এরপরই রয়েছে রাশিয়া। ইন্ডিয়ানাপোলিসের ওই বৈঠকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমার প্রশাসন কখনই এটিটি চুক্তিকে সমর্থন করেনি। তাই আমি এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে দলিলে স্বাক্ষর দিয়েছি। আমরা শীঘ্রই জাতিসংঘ বরাবর এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠাব। চিঠিতে আমরা জানাব যে, যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তির শর্তকে প্রত্যাখ্যান করছে। ট্রাম্প আরও বলেন, আমার প্রশাসন কখনই অন্যের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে আত্মসমর্পণ করবে না। আমরা কখনই বিদেশী কূটনীতিকদের কাছে মার্কিন নাগরিকদের স্বাধীনতা পদদলিত হতে দেব না। আমি আজ এই বিভ্রান্তিমূলক চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিচ্ছি। ২০১৩ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। তবে তখন মার্কিন সিনেটে এটির অনুমোদন পায়নি। ওই সময় এনআরএসহ মার্কিন রক্ষণশীল রাজনীতিকরা ওবামার এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছিল। শুক্রবার চুক্তিটি বাতিলের দলিলে স্বাক্ষর করার সময় উপস্থিত হাজারখানেক জনতা উল্লাস প্রকাশ করে। উপস্থিত অনেক জনতার মাথা লাল টুপির ওপর লেখা ছিল ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’। এ সময় অনেকে আবার আমেরিকা, আমেরিকা বলে চিৎকার করতে থাকে। এনআরএ’র আইনী পদক্ষেপ বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক ক্রিস কক্স বলেন, বারাক ওবামা ও জন কেরি আমাদের জাতিসংঘের অস্ত্রনিয়ন্ত্রণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন মানতে বাধ্য করেছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রমাণ করলেন, আমরা কারো নজরদারির মধ্যে নেই। এদিকে ট্রাম্পের এই হটকারী সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছে ডেমোক্র্যাটরা। ডেমোক্র্যাটিক দলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি ও দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতা বব মেনেন্দেজ বলেন, এটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপর একটি অদূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত। তার এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। তিনি বলেন, আগ্নেয়াস্ত্র ভুল মানুষের হাতে থাকার নেতিবাচক ফল মার্কিন জনগণ ইতোমধ্যে ভোগ করছে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত জনমনে নতুন করে উদ্রেগ তৈরি করবে। মেনেন্দেজ বলেন, তখন রিপাবলিকানদের বিরোধিতার কারণে চুক্তিটি সিনেটে অনুমোদন করানো যায়নি। আমি মনে করি আমরা যদি জনগণকে নিরাপদ রাখতে চাই ও বন্দুক সহিংসতা রুখতে চাই তবে এনআরএ’র নীতি থেকে সরে আসতে হবে। ডেমোক্র্যাট শিবিরের পাশাপাশি বিশ্বের আরও একাধিক মানবাধিকার সংস্থা ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। অক্সফামের যুক্তরাষ্ট্র শাখার প্রধান এ্যাবি ম্যাক্সম্যান বলেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে ২০১৩ সালে বিশ্বের যেসব দেশ এটিটিতে স্বাক্ষর করেনি তাদের হাতে অস্ত্র চলে যাওয়ার পথ তৈরি হলো। ইরান, উত্তর কোরিয়া ও সিরিয়াসহ বহু দেশ তখন এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থাকে। এ্যাবি ম্যাক্সম্যান আরও বলেন, নিরপরাধ মানুষকে আগ্নেয়াস্ত্র থেকে বাঁচাতে এই চুক্তি করা হয়েছিল। ব্রিটেনের ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমিলি থ্রনবেরি বলেন, এর ফলে ট্রাম্প নিজের দফতরকেই অবমাননা করলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত হেরিটেজ ফাউন্ডেশনও ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। সংস্থাটি বলেছে, এই চুক্তি বাতিলের ফলে চীন ও রুশ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সুবিধা করে দেয়া হলো।
×