ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বাংলার বাঘিনীরা

প্রকাশিত: ১০:২৪, ২৭ এপ্রিল ২০১৯

 গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বাংলার বাঘিনীরা

রুমেল খান ॥ গ্রুপসেরা হতে ড্র হলেই চলতো। তবে ড্র নয় জিতেই ‘বি’ গ্রুপের সেরা হলো বাংলার বাঘিনীরা। তবে খুব সহজে নয়। অনেক ঘাম ঝরিয়ে এবং ‘জোড়া-উপহার’ পেয়ে। শুক্রবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত খেলায় প্রতিপক্ষ কিরগিজস্তানকে ২-১ গোলে হারায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। খেলার প্রথমার্ধে বিজয়ী দল ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল। এই জয়ে বঙ্গমাতা অনুর্ধ-১৯ নারী আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রথম আসরে ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হলো লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। আর মধ্য এশিয়ার দেশ কিরগিজস্তান হলো গ্রুপ রানার্সআপ। এই ম্যাচের আগে উভয় দলই শেষ চারে নাম লেখানো নিশ্চিত করেছিল। বাংলাদেশ তাদের প্রথম ম্যাচে ২-০ গোলে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারায়। একই দলকে ২-১ গোলে হারায় কিরগিজস্তান। শুক্রবারের খেলায় বাংলাদেশ জিতলেও তাদের ফরোয়ার্ডদের ফিনিশিংয়ের উপর্যুপরি ব্যর্থতা চোখে পড়েছে বেশ। তাদের এই সমস্যাটা রয়েই গেল। আগের ম্যাচেও একই অবস্থা ছিল। কিরগিজদের বিরুদ্ধে ভুলত্রুটি অনেক কম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি। আগের ম্যাচের চেয়ে ভুলের মাত্রা আরও বেশি বেড়েছে। তা না হলে অন্তত ৭-৮টি গোল করতে পারতো বাংলাদেশ। স্বপ্না, কৃষ্ণাদের এত গোল মিসের মহড়ায় কোচ ছোটনের দুশ্চিন্তা বাড়াবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তার দুশ্চিন্তা আরও বাড়বে, কারণ স্বপ্না-কৃষ্ণা দু’জনেই চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছেন। এখন সেমিফাইনালের ম্যাচে তাদের না পেলে সেটা যে দলের শক্তিমত্তা কমিয়ে দেবে সেটা না বললেও চলে। তবে খেলা শেষে এগুলো নিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি গ্যালারিতে উপস্থিত দশ হাজারেরও বেশি ফুটবলপ্রেমী। তারা প্রাণভরেই উপভোগ করেছেন মনিকা-মারিয়াদের খেলা। খেলা শেষে ড্রেসিংরুমে ফিরে যাবার সময় বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের চেঁচিয়ে ও হাত নেড়ে অভিবাদন জানায় দর্শকরা। এমনকি দলের স্ট্র্যাটেজিক এ্যান্ড টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলিও দর্শকদের অভিবাদন পেয়ে বিস্মিত-বিমুগ্ধ হন। ম্যাচ শুরুর মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই গোল করে এগিয়ে যায় স্বাগতিক দল। বলা যায় গোলটি প্রতিপক্ষের গোলরক্ষকের ভুলেই আচমকা পেয়ে যায় তারা। ডি-বক্সের মধ্যে বাঁপ্রান্ত থেকে ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানী সরকারের শট ধরতে গিয়ে তা ফস্কে ফেলেন প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক তোলনভা। ফিরতি বলে বাঁ পায়ের গড়ানো শটে লক্ষ্যভেদ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন রাইট উইঙ্গার সানজিদা আক্তার (১-০)। বঙ্গমাতা গোল্ডকাপে এখন পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে দ্রুততম গোলের রেকর্ড। ৩৬ মিনিটে সতীর্থ শামসুন্নাহার সিনিয়রের সঙ্গে বল আদান প্রদান করতে করতে বক্সে ঢুকে পড়েন মারজিয়া আক্তার। কিন্তু বাঁপ্রান্ত থেকে করা তার উঁচু শটটি বারে লেগে চলে যায় মাঠের বাইরে। এরপর একাধিক গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেই বিশ্রামে যায় লাল-সবুজরা। ৪৮ মিনিটে মারজিয়ার পাসে বল পেয়ে কৃষ্ণা বাঁ পায়ে যে শট নেন তা জালের বাইরের অংশে গিয়ে লাগে। ৬০ মিনিটে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডানপ্রান্ত থেকে শট করেন সানজিদা। গোলরক্ষক বল হাতে নিয়েও ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। সুযোগ বুঝে হেডে বল জালে পাঠান কৃষ্ণা (২-০)। এই আসরে এইটা তার দ্বিতীয় গোল। ৭৯ মিনিটে এক গোল শোধ করে ব্যবধান কমায় কিরগিজস্তান। ডান০প্রান্ত থেকে বদলি খেলোয়াড় আখমাতকুলভা জাইরিনার জোরালো শট আটকাতে ব্যর্থ হন গোলরক্ষক রূপনা চাকমা (১-২)। এর কিছুক্ষণ পরই ৮৬ মিনিটে শামসুন্নাহারের পাস থেকে বল পান সাজেদা। গোলরক্ষক সামনে এগিয়ে আসলেও সুযোগটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন বদলি এই ফরোয়ার্ড। শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের জয়ে দর্শকদের অভিনন্দনে সিক্ত হয়েই মাঠ ছাড়ে টিম বাংলাদেশ। ম্যাচসেরা হয়ে ৫০০ ডলার পুরস্কার পান সানজিদা আক্তার। আজকের সন্ধ্যা ৬টায় লাওস বনাম তাজিকিস্তান ম্যাচটি আড়াই ঘণ্টা পিছিয়ে অনুষ্ঠিত হবে রাত সাড়ে ৮টায়। এই ম্যাচ শেষে নির্ধারিত হবে সেমিফাইনালে কাকে পাচ্ছে স্বাগতিকরা। এর আগেও কিরগিজদের সঙ্গে খেলেছে বাংলার বাঘিনীরা। তবে সেটা অনুর্ধ-১৬ পর্যায়ে (এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব আসরের ‘সি’ গ্রুপে) ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট এই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে প্রতিপক্ষকে স্রেফ ‘কচুকাটা’ করেছিল লাল-সবুজরা। জিতেছিল ১০-০ গোলে। ওই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলেন দলের অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকার। এছাড়া জোড়া গোল করেছিলেন আনুচিং মগিনি এবং শামসুন্নাহার সিনিয়র। ১টি করে গোল করেছিলেন মারজিয়া আক্তার, নার্গিস খাতুন এবং মারিয়া মান্দা। ওই ম্যাচের আনুচিং বাদে বাকি গোলদাতারা আজকের ম্যাচে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ দলের হয়ে খেলেন।
×