ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গণভবনে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ;###;কোন দল ভাঙ্গা বা অন্য কিছু করার নীতিতে বিশ্বাস করি না;###;সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় জনসচেতনতার তাগিদ

ভোটারদের চাপে শপথ ॥ বিএনপির এমপিদের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ নেই

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ২৭ এপ্রিল ২০১৯

ভোটারদের চাপে শপথ ॥ বিএনপির এমপিদের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ নেই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্য রাজনৈতিক দল ভাঙ্গা কিংবা তাদের এমপিদের শপথ নিতে সরকারের চাপ সৃষ্টির বিএনপির অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, বিরোধী দলগুলোর (বিএনপিসহ) যেসব এমপি শপথ নিয়েছেন তারা স্বেচ্ছায় ও ভোটারদের চাপে শপথ নিয়েছেন। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে কোন চাপ নেই, থাকার প্রশ্নই ওঠে না। আর অনেক প্রস্তাব এলেও আওয়ামী লীগ বিশেষ করে আমি (শেখ হাসিনা) কোন দল ভাঙ্গা বা অন্য কিছু করার নীতিতে বিশ্বাস করি না। অন্য দল ভাঙ্গতে যাব কেন? যার যার দল সেই করুক। আওয়ামী লীগের অনেক লোকবল ও জনসমর্থন রয়েছে, অন্যের ভার নিতে যাব কেন? দেশের উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য আওয়ামী লীগ একাই যথেষ্ট। বাস্তবতা হচ্ছে, ক্ষমতা ছাড়া তারা (বিএনপি) রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারে না। কারণ, বাংলার মাটিতে তাদের কোন শিকড় নেই। শুক্রবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে গত দশ বছরে পুরো দেশকে বদলে দেয়ার চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ার মতো ক্ষমতায় থাকতে আমরা কোন এলিটশ্রেণী তৈরি করিনি। আমরা তৃণমূল পর্যায় থেকে সারাদেশের মানুষের উন্নয়ন করেছি, দেশকেই বদলে দিয়েছি। গোটা বিশ্বও এখন বাংলাদেশকে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখে। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের ঝুঁকি থেকে বাংলাদেশ এখনও পুরোপুরি মুক্ত নয় উল্লেখ করে এ ব্যাপারে দেশবাসীর মধ্যে ব্যাপক জনসচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরকার যথেষ্ট সজাগ ও সতর্ক রয়েছে। এটি এখন বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হলি আর্টিজানের পর থেকে আমরা সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছি বলেই আমাদের দেশে কেউ সুযোগ নিতে পারছে না। কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন অনুযায়ী প্যারোলে মুক্তি পেতে আবেদন করতে হয়। খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তির ব্যাপারে কোন আবেদন করা হয়নি। তাই প্যারোলে মুক্তির ব্যাপারে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। আর রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়নি, তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কোন মামলাও দেয়নি। দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাতের কারণে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। টানা ১০ বছর মামলা চলার পর আদালতের রায়ে তার সাজা হয়েছে। বর্তমান সরকারের এ ব্যাপারে কোন ইচ্ছা থাকলে মামলা নিষ্পত্তি হতে ১০ বছর লাগত না। আমরা আদালতের ওপর কোন হস্তক্ষেপ কিংবা চাপ দেইনি। আর বিএনপি এমপিদের শপথ নিতে আমরা চাপ দিতে যাব কেন? শপথ নেয়া এমপিরাই তো বলেছেন, এলাকার ভোটারদের চাপে তারা শপথ নিয়েছেন এবং সংসদে গিয়ে তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলবেন। তার সাম্প্রতিক ব্রুনাই সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হলেও প্রশ্নোত্তর পর্বে দেশের সর্বশেষ রাজনীতি, অর্থনীতি, রোহিঙ্গা ইস্যু, সাংগঠনিক বিষয় ছাড়াও সাংবাদিকদের বিভিন্ন ইস্যুতে করা প্রশ্নের স্বভাবসুলভ হাসিতে বিস্তারিত উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং মৎস্য ও পশুসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু উপস্থিত ছিলেন। দেশের গণমাধ্যমের সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক ছাড়াও সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় সহযোগী সংগঠনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। বিএনপি এমপিদের শপথ নিতে সরকারের কোন চাপ নেই ॥ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলগুলোর যেসব এমপি শপথ নিয়েছেন, তারা স্বেচ্ছায় শপথ নিয়েছেন। বিএনপির এমপিদের শপথ নেয়ার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোন চাপ নেই। আর আমরা চাপ দিতে যাব কেন? তারা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। জনগণের চাপ আছে তাদের ওপর। আর বিএনপি একটা রাজনৈতিক দল। অন্য কোন দল থেকে তাদের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্যারোলের জন্য আবেদন করতে হয়। কিন্তু তারা যেহেতু এখনও আবেদন করেনি, তাই সে ব্যাপারে কিভাবে বলি? আর আমরা খালেদা জিয়াকে কিন্তু গ্রেফতার করিনি। খালেদা জিয়া কোর্টের মাধ্যমে সাজাপ্রাপ্ত। মামলাটা আওয়ামী লীগ সরকারও করেনি। মামলাটি চলছে ১০ বছর ধরে। কিন্তু সরকার আদালতকে প্রভাবিত করেনি। এ প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন দল ভাঙ্গা বা অন্য কিছু করার নীতিতে আমি এবং আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না। অনেক প্রস্তাব পাই। কিন্তু অন্য দলকে ভাঙ্গতে যাব কেন? আওয়ামী লীগে যথেষ্ট লোকবল রয়েছে, অন্যের ভার কেন নিতে যাব? আওয়ামী লীগ একাই এক শ’। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে দেশ ও জাতির উন্নতি হয়, অন্য কোন সরকারের আমলে দেশ ও মানুষের কোন উন্নয়ন হয়নি। দেশের কিছু মানুষ তো রয়েছেই তারা সবসময় নিরানন্দে থাকেন। দেশের কোন কিছুই তাদের চোখে পড়ে না। বাংলাদেশ যখনই খুব ভাল অবস্থায় থাকে তখনই আঘাত আসে। আমরা দেশের প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগের ওপর নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। দেশ যখন দ্রুত উন্নয়নের দিকে ধাবিত হবে তখন ষড়যন্ত্রও বেড়ে উঠবে। এটা আমরা জানি। পরবর্তী নেতৃত্ব ঠিক করবে দল ॥ আগামী কাউন্সিল এবং দলের নেতৃত্ব প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, অবসর নেয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কে আসবেন, এটা দলই সিদ্ধান্ত নেবে। এখানে আমি কাউকে নির্ধারণ করে দিতে পারি না। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দেশের জনগণ ও দলই ঠিক করবে কে হবেন তাদের পরবর্তী নেতা। আর দেশের মধ্যে একমাত্র আওয়ামী লীগই পরিপূর্ণভাবে গঠনতন্ত্র মেনেই দলকে পরিচালনা করে। আমি ইচ্ছা করলেই সব কিছু করতে পারি না, যা অন্য দলগুলোতে হয় এবং করে। প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ একটি রাজনীতিক দল, জনমানুষের দল। দলের একটি গঠনতন্ত্র রয়েছে, সে অনুযায়ী-ই দল পরিচালিত হয়। আগে প্রতিবছরই সম্মেলন হতো। কিন্তু এখন তা সম্ভব হয় না। কারণ, খরচাপাতিসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। জাতীয় সম্মেলনের আগে দেশজুড়ে তৃণমূলে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সম্মেলন হবে। এরই মধ্যে আটটি টিম করে দিয়েছি, তারা কাজ শুরু করে দিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকেও ডিজিটালাইজড করতে কাজ করছি। এরই মধ্যে টিমও তৈরি করে দিয়েছি। দলের সবই ডিজিটালাইজড করে দেয়া হচ্ছে। সারাদেশের কমিটিগুলো একটি এ্যাপে নিয়ে আসা হবে। প্রয়োজনে গোপালগঞ্জে বসেই সব দেখতে পারব। এই কাজটি হলে সবই একজায়গায় বসে এক ক্লিকেই সব জানা সম্ভব হবে। রাজনীতি থেকে অবসর নেয়া প্রসঙ্গে চারবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবসর তো নিতেই হবে। এরপরে দলের নেতৃত্বে কে আসবেন কিংবা নেতা কে হবেন- সেটা বেছে নেবে দেশের জনগণ এবং আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, ক্ষমতায় এলে যে দেশের উন্নয়ন করা যায় সেটি আওয়ামী লীগ করে দেখিয়েছে। বাংলাদেশকে একটি সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে এসেছি। এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশ বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে নেয়। জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি প্রসঙ্গে ॥ শ্রীলঙ্কায় জঙ্গী হামলার পর বাংলাদেশ ঝুঁকি মুক্ত কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস এবং জঙ্গীবাদ সম্পর্কে সবসময় উদ্বিগ্ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। পরিষ্কার কথা আমার। কারণ আপনারা চিন্তা করেন, নিউজিল্যান্ডের মতো একটা শান্তিপূর্ণ দেশ। সেখানে পুলিশও ব্যবহার করা লাগে না। সে রকম একটা দেশে যখন ওই ধরনের জঙ্গীবাদী হামলা ঘটাতে পারে, আর বাংলাদেশে তো সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদী ঘটনা লেগেই আছে। ১৯৭৫ সালে যেভাবে জাতির পিতাকে হত্যা, ৩ নবেম্বর জেলখানা হত্যা, এগুলো তো সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের পর্যায়ে পড়ে। যখন থেকে মিলিটারি ডিক্টেটররা ছিল তখন তো ক্যু হতো আর মানুষ হত্যা করা হতো। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মানুষের ওপর অত্যাচার- নির্যাতনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচনের পর কিভাবে মানুষের ওপর অত্যাচার করা হয়েছিল! তারপর আসে অগ্নিসন্ত্রাস। ২০১৩ সালের শেষ দিক থেকে ২০১৪ ও ২০১৫ সাল পর্যন্ত। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সব থেকে বড় কথা প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রেনেড হামলা করে মানুষ হত্যা করা। যে গ্রেনেড ব্যবহার করা হয় যুদ্ধের ময়দানে, সে গ্রেনেড ব্যবহার করা আমাদের একটা র‌্যালিতে। যে র‌্যালিটিও ছিল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। ২৪ জানুয়ারি ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামে প্রকাশ্য দিবালোকে আমাদের সভায় গুলি চালানো হলো। এটাও তো এক ধরনের সন্ত্রাসবাদ। দুর্ভাগ্য হলো, বাংলাদেশে অনবরত এই অবস্থা হয়েছে। আর আমরা তো সেই সন্ত্রাসের শিকার। ১৫ আগস্ট আমরা সব হারালাম। তারপর এই শ্রীলঙ্কায় আমাদের পরিবারের এক আপনজন মারা গেল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালের শেষের দিক থেকে নির্বাচন ঠেকানোর নামে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু হলো, সেটা চলল ২০১৫ সাল পর্যন্ত। সেই অগ্নিসন্ত্রাস তো আরেকটা পথ দেখাল। সেই অগ্নিসন্ত্রাসে, এখন নুসরাতকেও অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হতে হলো। তারই শিক্ষক তাকে আগুন দিয়ে পোড়ানোর ব্যবস্থা করল। এই সন্ত্রাসের ঝুঁকি তো আছেই। আমি এটুকু বলতে পারি আমরা যথেষ্ট সজাগ আছি। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা চমৎকার কাজ করে যাচ্ছে। আমি সমস্ত গোয়েন্দা সংস্থা এবং বাহিনী প্রধানকে নিয়ে পার্লামেন্ট থেকে এখানে এসে (গণভবন) সেই ৮টা থেকে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত সভা করেছি। আমরা সবসময় সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমি এটা জানি যে, শুধু এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা বা গোয়েন্দা দিয়ে হবে না, সবাই মিলে করতে হবে। এই জন্যই আমি দেশবাসীকে আহ্বান করেছি। একটা জনমত সৃষ্টি করার। জঙ্গীবাদের সঙ্গে উচ্চবিত্ত পরিবার ও ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত হওয়ার ব্যাপারে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি ঠিক জানি না, এই সুইসাইডাল এ্যাটাক করে তারা কি পাচ্ছে? নিজেরা কি পাচ্ছে বা দেশকে কি দিচ্ছে, নিজের বাবা-মাকে কি দিচ্ছে? আমি সব সময় বলে যাচ্ছি জঙ্গীবাদে যারা লিপ্ত তাদের কোন ধর্মও নাই, তাদের কোন দেশও নাই। তাদের কিছুই নাই। সেজন্য আমি মনে করেছি, এটা আমার দায়িত্ব, এখন লুকোছাপার কিছু নাই। আমরা সেই হলি আর্টিজানের পর থেকে এটা নিয়ন্ত্রণ করে রাখছি। তারপরও শঙ্কা অবশ্যই আছে। আমরা সব সময় যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি বলেই এই ধরনের কোন সুযোগ পাচ্ছে না। তারপরও আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন তথ্য পাই, সেগুলো বলতে চাই না। কারণ, আমরা যতটুকু পারি বা আমরা যেভাবে পারি এ্যাডজাস্ট করি এবং আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেই। আর এটা এখন আন্তর্জাতিক বিষয় হয়ে গেছে। শ্রীলঙ্কা প্রায় ৯/১০ বছর ভাল ছিল। তারপর হঠাৎ এই ঘটনা। বিশ্বের অনেক নামী-দামী পত্রিকাও বন্ধ হয়ে গেছে ॥ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ছাপা পত্রিকার সামনে প্রযুক্তি যে বাস্তবতা দাঁড় করিয়েছে সেটা সংশ্লিষ্টদের মানতেই হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেবল বাংলাদেশে নয়, প্রযুক্তি সারাবিশ্বের মানুষের জন্য নানা সুযোগ সৃষ্টি করেছে, আধুনিকতার জায়গায় নিয়ে গেছে। সেজন্য এক ধরনের ধারাবাহিকতায় চলতে থাকলে হবে না। আধুনিকতা ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। তিনি বলেন, সারাবিশ্বে অনেক নামী-দামী পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক পত্রিকা কেবল অনলাইন ভার্সনে চলে এসেছে। কাগজে ছাপা বন্ধ হয়ে গেছে তাদের, সোজা কথা অনলাইনে চলে এসেছে। এখন কাগজের ব্যবহার হয় না। এটা প্রযুক্তির প্রভাব। প্রযুক্তি এবং আধুনিকাতর প্রভাবে এভাবে বিবর্তন আসতে থাকবে। তাই বিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। এখনও অনেক চ্যানেল চাইছে। তথ্যমন্ত্রীর (ড. হাছান মাহমুদ) সঙ্গে কথা হচ্ছিল। বললাম যত চাইছে, দিয়ে দিতে। কিছু না হোক, কিছু লোকের তো চাকরি হবে, কর্মসংস্থান হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবকিছু ডিজিটালাইজড করে দিয়েছি, নিজস্ব স্যাটেলাইটও হয়েছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমেও টিভি চালানো যায়। তিন মাসের জন্য বিনা পয়সায় (টিভি চ্যানেল) চালানোর প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। কিন্তু চ্যানেলগুলো সেভাবে নিচ্ছে না। অথচ বিদেশী জায়গায় অনেক টাকা দিচ্ছে। কিভাবে আমাদের স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অল্প খরচে টেলিভিশন চালাতে পারে সেজন্য কথা চলছে। আর ভাল অনুষ্ঠান যারা করবে, মানুষ তাদের দেখবে। আমাদের দেশে ১৬ কোটি মানুষ, সুতরাং গ্রাহক (দর্শক) কখনও কমবে না। ওয়েজবোর্ডের ব্যাপারে সরকারের যা করণীয়, তা করেছে। বাকিটা মালিকপক্ষের, সেখান থেকে সাংবাদিকরা যা আদায় করে নিতে পারেন, সেটা তাদের ব্যাপার। আওয়ামী লীগে সুযোগসন্ধানী ও হাইব্রিড প্রবেশ ॥ এ বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারী সাংবাদিককে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোথায় দলে অনুপ্রবেশ ঘটেছে তার তালিকা দিন, ব্যবস্থা নেব। ভাষার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মহান আত্মত্যাগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কি সারাজীবন শুধু ত্যাগ ও মার খেয়েই যাবে। তাদের কি একটু ভাল থাকার অধিকার নেই? ২০০৮ সালের আগে দেশের অবস্থা কি ছিল, এখন কি হয়েছে একটু তুলনা করুন। পুরো দেশই এখন বদলে গেছে। তিনি প্রশ্ন রেখে আরও বলেন, দেশের কোথাও কি মানুষ না খেয়ে আছে? কর্মসংস্থান হচ্ছে কিনা, উন্নতি হচ্ছে কিনা? আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যারা নিজের গঠনতন্ত্র মেনে চলে। আর বিএনপির তো সৃষ্টিই হয়েছে জাতির পিতাকে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী হিসেবে। ক্ষমতা ছাড়া এরা টিকে থাকতে পারে না। কারণ, তাদের (বিএনপি) কোন শিকড় নেই। তাদের এই নাজুক অবস্থার জন্য দলটির যারা নেতৃত্বে রয়েছে তারাই দায়ী। আওয়ামী লীগের শিকড় দেশের অনেক গভীর গ্রথিত। রোহিঙ্গা ইস্যু ॥ রোহিঙ্গা ইস্যুতে একাধিক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পূর্ণ মানবিক কারণে মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি। মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং চুক্তিও হয়েছে যে তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে। জাতিসংঘের প্রতিনিধিদেরও স্পষ্ট করে বলেছি, যদি কিছু করতে চান মিয়ানমারের মাটিতে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তাসহ সবকিছু করুন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যদি কোন ক্ষতি হয় তবে তাদেরও তো কিছু দায় নিতে হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে অযথা তো চাপ দিতে পারি না। এখানে মানবিক বিষয় জড়িত। প্রায় ৪০ হাজার শিশু সেখানে জন্ম নিয়েছে। ভাষানচরে নিয়ে যেতে চাইলেও কিছু সংস্থা বাধা দেয়। কারণ, কক্সবাজারের সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু করা যায়, অন্য জায়গায় গেলে তো তা হবে না। আর সেখানে অনেক শিক্ষিত তরুণ ও সুস্থ মানুষ বেকার হয়ে পড়ে আছে। দীর্ঘদিন বেকার থাকলেও তাদের বিপথে চালিত কিংবা জঙ্গীবাদে জড়িত হয়ে পড়তে পারে। আমরা সেজন্য নিজস্ব অর্থায়নে রোহিঙ্গাদের আইডি কার্ড করে দিয়েছি। ভারত-চীন-জাপানসহ মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত থাকা দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা রোহিঙ্গারা ফেরত গেলে সেখানে তাদের জন্য ঘর-বাড়ি নির্মাণের জন্য সহযোগিতা করতেও রাজি হয়েছে। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জনমত গড়ে তুলুন ॥ সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে (গোটা বিশ্ব) ঐক্যবদ্ধভাবে জনমত সৃষ্টি ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান। লিখিত বক্তব্যের শুরুতেই শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণ করে আত্মার মাগফেরত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গত রবিবার ব্রুনাই দারুস সালামের রাজধানী বন্দর সেরি বাগওয়ান বিমানবন্দরে নামার পরপরই আমি এই মর্মান্তিক হামলার খবর পাই। তার কিছুক্ষণ পরে আমার পরিবারের সদস্য জায়ানের মৃত্যুর খবর আসে। আমি এই কাপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে (বিশ্ববাসী) ঐক্যবদ্ধভাবে জনমত সৃষ্টি ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। ব্রুনাইয়ে প্রথম সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসান আল- বলকিয়ার আমন্ত্রণে গত ২১ থেকে ২৩ এপ্রিল ব্রুনাই সফর করি। ব্রুনাই ১৯৮৪ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। এর পরপরই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ১৯৯৭ সালে আমার সরকারের উদ্যোগে ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন পুনঃস্থাপনের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও পারস্পরিক সহযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত বিগত এক দশকে ব্রুনাইয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
×