ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

‘পুতুল- বাংলার প্রাণ প্রতিমা’ গ্রন্থের প্রকাশনা

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ২৭ এপ্রিল ২০১৯

 ‘পুতুল- বাংলার প্রাণ প্রতিমা’ গ্রন্থের প্রকাশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এবং আবহমানকালের মৃৎশিল্পীদের স্মরণে প্রকাশিত হলো ‘পুতুল- বাংলার প্রাণ প্রতিমা’ শিরোনামের গ্রন্থ। একইসঙ্গে বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগের ছয় জেলার সংগৃহীত মাটির পুতুল ও খেলনা প্রদর্শনীরও সূচনা হলো শুক্রবার বিকেলে। সে আয়োজনে ঠাঁই পেয়েছে জয়নুল আবেদীনের সংগৃহীত কিছু পুতুলও। জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে শিল্পাচার্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রকাশনা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন শিল্পী সামিনা হাফিজ। শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন স্মরণে আবহমানকালের মৃৎশিল্পীদের প্রতি উৎসর্গিত বইটির মোড়ক উন্মোচন ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগের ছয় জেলার সংগৃহীত মাটির পুতুল ও খেলনা প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। আলোচনায় অংশ নেন ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, ডিজাইনার চন্দ্র শেখর সাহা, শিল্প সমালোচক মইনুদ্দীন খালেদ, শিশুসাহিত্যিক শাহজাহান কিবরিয়া প্রমুখ। এই আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান ও পুরো আয়োজনটি নিয়ে কথা বলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের কনিষ্ঠ পুত্র ময়নুল আবেদিন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মৃৎশিল্পী শোভা রানী পাল, গবিন্দ চন্দ্র পাল, রমেন চন্দ্র পাল, বিপ্লব পাল ও লিটন চন্দ্র পাল। তাসমিমা হোসেন বলেন, লোকজ শিল্প অন্বেষণে এই গবেষকের আগ্রহ অপরিসীম। মৃৎশিল্পীরা বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন। আর তাদের অবদানকে সবার মাঝে তুলে এনেছেন সামিনা নাফিজের মতো গবেষকরা। তাদের মতো প্রাণিত মানুষরাই এই চিরায়ত শিল্পকে হারিয়ে যেতে দেন না। পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে গবেষণা কাজ চালিয়ে যান। চন্দ্র শেখর সাহা বলেন, মাটিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন পাল শিল্পীরা। আর সংগ্রাহকরা সময়কালকে ধারণ করে তা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য রেখে যান। যেমন রেখে গেছেন শিল্পচার্য জয়নুল আবেদিন। সামিনা তার গবেষণায় সেই কাজকেই এগিয়ে নিয়ে গেছেন। মইনুদ্দীন খালেদ বলেন, মাটিকে লালন করেন এই পাল সম্প্রদায়। এই নদী তীরবর্তী জনগোষ্ঠীর শিল্পভাষাকে আমরা চিনতাম না। তাদের চিনে ছিলেন শিল্পাচার্য। তার কারণেই বাংলা চিরায়ত ঐতিহ্য হারিয়ে যায়নি। বেঁচে রয়েছে। প্রান্তিক মানুষের কাছে ছুটে বেরিয়েছেন সামিনা। তিনিও বাংলার আনাচে কানাচে ঘুরে তুলে এনেছেন বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য ধারাকে। সামিনা নাফিজ বলেন, ২০১৫ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সংগৃহীত পুতুল নিয়ে একটি প্রদর্শনী হয়। সেখান থেকে আমি অনুপ্রাণিত হই। শিল্পাচার্যের পুত্র ময়নুল আবেদিনের সঙ্গে কথা বলি। এরপর ২০১৬ থেকে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করি। বাংলার মৃৎশিল্পীদের বৈচিত্র্যময় এসব পুতুল সংগ্রহে ঘুরতে থাকি বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয় জেলায়। এই পুতুলই কিন্তু আমাদের প্রাচীন ভাস্কর্য। ইউডেকো লিমিটেডের সার্বিক সহযোগিতায় মাঠপর্যায়ে জরিপের মাধ্যমে ‘পুতুল- বাংলার প্রাণ প্রতিমা’ গ্রন্থ প্রকাশনা, তথ্যচিত্র ও মৃৎশিল্পীদের শিল্পকর্মের সমন্বয়ে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। শিল্পী সামিনা নাফিজ দুই বছর ছয় মাসের মাঠপর্যায়ের জরিপের ফসল এটি। এতে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয় জেলার ৪৫ লোক ও কারুশিল্পীর তৈরি পুতুলের পাশাপাশি আরও কিছু শিল্পকর্মও এতে স্থান পেয়েছে। যার মধ্যে মাঠপর্যায়ে জরিপের সময়ের মেলা থেকে সংগৃহীত মাটির শিল্পীদের তৈরি দেশী খেলনাও স্থান পেয়েছে।
×