ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

কুষ্টিয়ার গড়াই নদী খনন বন্ধ করলেন প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৯:১০, ২৭ এপ্রিল ২০১৯

  কুষ্টিয়ার গড়াই নদী খনন বন্ধ করলেন  প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া, ২৬ এপ্রিল ॥ দীর্ঘ দুই দশক ধরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার কৃষি ও জীববৈচিত্র্য এবং লবণাক্ত গ্রাসন থেকে সুন্দরবন রক্ষায় একমাত্র মিঠাপানির উৎস গড়াই নদী খনন ও পুনরুদ্ধার চলমান প্রকল্পে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রকল্পটির কাজ স্থগিত ঘোষণা করেছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী। শুক্রবার দুপুরে কুষ্টিয়ার হরিপুর ইউনিয়নের পদ্মা-গড়াই মোহনায় গড়াই নদী খনন পরিদর্শন শেষে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, পদ্মার পানি গড়াইয়ে প্রবাহিত করার জন্য সরকার গড়াই নদী খনন প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে। নানান অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে নদী খননের নামে নদীর বালি আবার নদীতে ফেলে একটি নালার মতো করে খনন করা হচ্ছে। এটি মেনে নেয়া যায় না। তাই আপাতত গড়াই নদী খনন প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকবে। এ সময় প্রতিমন্ত্রী পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার কর্মকর্তাদের তিরস্কার করেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জাহিদ ফারুক আরও বলেন, গড়াই নদীর খনন প্রকল্পটি দেখে আমি নিজে দুঃখ পেয়েছি। এই ধরনের একটি বড় প্রকল্প এইভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে এটা চলতে দেয়া যায় না। এই নদী এখন একটি নালার মতো করে খনন করা হচ্ছে, এটাকে আরও চওড়া করতে হবে। পদ্মার পানি যাতে গড়াইয়ে সঠিকভাবে যেতে পারে তার জন্য আমরা মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ বাস্তবায়িত হবে। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দুইটা প্রকল্পের কথা শুনে আসছি। একটা সুনামগঞ্জের হাওড় আরেকটি কুষ্টিয়ার গড়াই নদী। সুনামগঞ্জের হাওড়ের যে সমস্যা সেটা আমরা মোটামুটি সমাধান করে ফেলেছি। কৃষকদের ফসল এবার সুষ্ঠুভাবে ঘরে তুলতে পারবে বলে আমরা আশা করছি। কিন্তু গড়াই নদী খনন প্রকল্পটি কোনভাবেই সফলতার মুখ দেখছে না। এবার সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শতভাগ সফলতা আসবেই এবং নদী পাড়ের মানুষগুলো সুফল পাবেই পাবে। প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, এই খননটা ৩০০ মিটার চওড়া করে খনন করা হবে। বর্তমানে যে তিনটি ড্রেজার কাজ করছে এটার সঙ্গে আরও দুটি ড্রেজার যুক্ত হয়ে মোট পাঁচটি ড্রেজার রাত-দিন কাজ করা শুরু করবে। এই মুহূর্তে যে দুটি ড্রেজার দিয়ে কাজ চলছে সেটা বন্ধ করে দিয়েছি। কাজও বন্ধ হয়ে যাবে। বাকি দুটি ড্রেজার যুক্ত করে প্ল্যানিং করে ৩০০ মিটার চওড়া ড্রেজার করে আমরা পদ্মার পানি গড়াইয়ে প্রবাহিত করার জন্য কাজ করব। ড্রেজারে নানা অনিয়ম ও ড্রেজার থেকে তেল চুরির সঙ্গে যুক্তদের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনাদের কাছে কোন প্রমাণ থাকে সেটা আমাকে দিলে আমি অবশ্যই অভিযুক্তদের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ড্রেজারে নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির খবর আমার কানে এসেছে। এ ধরনের কথা শুনে এখানে এসে আমি নির্দেশ দিয়েছি- ড্রেজারে সঠিক একটি পরিমাপ থাকবে ১ ঘণ্টায় কতখানি তেল খরচ হয় এবং কতখানি মাটি কাটা হয়। এটা আমাদের মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের প্রধানকে আমি বলেছি এই হিসাবটি আমাকে দেয়ার জন্য। এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার কর্মকর্তারা, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক কুষ্টিয়া সার্কিট হাউস মিলনায়তনে জেলা প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলাম গড়াই খনন প্রকল্পে বিস্তর অনিয়ন ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, অসত্য তথ্য দিয়ে সবাইকে অন্ধকারে রেখে গড়াই ড্রেজিং-এর দায়িত্বে যারা আছেন তারা চরম অসৎ ও দুর্নীতি পরায়ণতার জন্যই সরকারের গড়াই খনন প্রকল্প ভেস্তে গেছে। সরকারের শত শত কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি গড়াই নদীর নাব্য পুনরুদ্ধারে। তিনি এসব অসৎ কর্মকর্তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বে অবহেলার বিষয় তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন, পানি উন্নয়র বোর্ড কুষ্টিয়ার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান, নির্বাহী প্রকৌশলী পিযুষ কুন্ডুসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×