ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মা-মেয়ে ও তিন গৃহবধূসহ ৯ খুন

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ২৭ এপ্রিল ২০১৯

 মা-মেয়ে ও তিন গৃহবধূসহ ৯ খুন

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ঝিনাইদহে মা-মেয়ে, রাজশাহী, মুন্সীগঞ্জ নেত্রকোনায় যৌতুকের জন্য তিন গৃহবধূ, নড়াইলে সাবেক সেনা সদস্য, দিনাজপুরে আদিবাসী নারী, নারায়ণগঞ্জে পোশাক কর্মী ও কালকিনিতে কলেজছাত্রী খুন হয়েছেন। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। ঝিনাইদহ মহেশপুর উপজেলার নওদাগ্রামে ছেলের হাতে মা মর্জিনা খাতুন (৪৫) ও নানি সামছুন্নাহার (৮০) খুন হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে ছেলে ইমরান হোসেন (২৮) মা ও নানিকে উপর্যুপরি কুপিয়ে আহত করে। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এলে সে পালিয়ে যায়। পরে তাদের উদ্ধার করে যশোর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ইমরান হোসেন নওদাগ্রামের এনায়েতুল্লাহর ছেলে। স্বামী পরিত্যক্তা মর্জিনা খাতুন নওদাগ্রামে তার পিতা নুরমোহাম্মদের বাড়িতেই থাকত। এলাকাবাসী জানান, ইমরান হোসেন নেশা করত। পুলিশ বলেছে, সে মানসিক রোগী। নিহত মর্জিনার চাচাত ভাই গ্রাম ডাক্তার কুদরত আলী জানান, খবর পেয়ে রাত ৩টার দিকে তাদের বাড়ি যায়। দেখি ইমরানের মা ও নানি দুজনই অচেতন অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য কোপের আঘাত। খুব রক্ত ঝরছে। আমি দ্রুত একটি মাইক্রোবাস ঠিক করে তাদের যশোর হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে ভর্তির আগেই তারা দুজনই মারা গেছেন বলে ডাক্তার জানান। তিনি বলেন, ইমরানের মা মর্জিনা খাতুন মহেশপুর বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। বিয়ের কিছুদিন পর ইমরান জন্মগ্রহণ করলে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। এরপর থেকেই তিনি এক ছেলেকে নিয়ে বাবা মায়ের কাছে নওদাগ্রামেই থাকতেন। রাজশাহী বাগমারায় যৌতুকের বলি হয়েছেন এবার মুক্তি খাতুন (১৭) নামের এক গৃহবধূ। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে মারপিট করে মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মুক্তি উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার সাদীপুর মহল্লার আব্দুর রহিমের কন্যা। ওই ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। বাগমারা থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। জানা যায়, উপজেলার বড়বিহানালী ইউনিয়নের কুলিবাড়ী গ্রামের আব্দুর সাত্তারের ছেলে সোহেল রানার সঙ্গে আব্দুর রহিমের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে তিন বছর আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে তারা বিয়ে করে। পালিয়ে বিয়ে করার কারণে বাবা আব্দুর রহিম মুক্তি খাতুন ও তার স্বামী সোহেল রানাকে মেনে নেয়নি। তবে বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই সোহেল মুক্তির কাছে যৌতুকের চাপ সৃষ্টি করে। মুক্তি বারবার যৌতুকের বিষয়টি এড়িয়ে গেলে স্বামী সোহেল রানা তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। দীর্ঘদিন থেকে নির্যাতন সহ্য করে আসছে মুক্তি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতের খাবার খেয়ে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ে মুক্তি। রাত ১২টার দিকে সোহেল রানা বাড়িতে ফিরে ঘুম থেকে ডেকে তোলে আবারও যৌতুকের টাকা আনতে বলে। মুক্তি টাকা আনতে অস্বীকৃতি জানালে স্বামী সোহেল রানা তাকে মারপিট শুরু করে। এতে মুক্তি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সোহেল রানা ও তার পরিবারের লোকজন তার মুখে বিষ ঢেলে দেয়। মুক্তি খাতুন মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়লে রাতেই তাকে পল্লী চিকিৎসক আব্দুর জব্বারের কাছে নিয়ে যায়। মুক্তির বাবা আব্দুর রহিমের অভিযোগ, রাত সাড়ে ১২টার দিকে সোহেল রানার পরিবারের সদস্যরা তার মেয়েকে মারপিটের পর মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করেছে। রাতেই তারা মেয়েকে বাঁচানোর জন্য ছুটে যান। কিন্তু তার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে মুক্তি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, জামাই সোহেল রানা ও তার পরিবারের সদস্যরা তার মেয়েকে হত্যা করে মুখে বিষ ঢেলে দিয়েছে। নেত্রকোনা যৌতুকলোভী স্বামী তার স্ত্রীকে পিটিয়ে ও শ^াসরোধ করে হত্যা করেছে। শুক্রবার ভোররাতে এ ঘটনা ঘটেছে কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটি ইউনিয়নের সিধলী পূর্বপাড়া গ্রামে। নিহত গৃহবধূর নাম পারভীন আক্তার (৩০)। তিনি ওই গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী। এ ঘটনায় পুলিশ শফিকুল ইসলাম ও তার পিতা তোরাব আলীকে গ্রেফতার করেছে। জানা গেছে, শফিকুল ইসলামের সঙ্গে প্রায় দশ বছর আগে পাশর্^বর্তী বারহাট্টা উপজেলার রত্নপুর গ্রামের সোনামিয়ার মেয়ে পারভীন আক্তারের বিয়ে হয়। তাদের দু’টি ছেলে সন্তান রয়েছে। পারভীনের ভাই তরিকুল ইসলাম জানান, শফিকুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত যৌতুকলোভী। তারা পারভীনকে প্রায়ই যৌতুকের জন্য চাপ দিত। এরই মধ্যে পারভীন তার বাবার বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা যৌতুক এনে দেয়। কিন্তু ক’দিন যেতে না যেতেই আরও এক লাখ টাকা দাবি করে শফিকুল। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কিছুদিন ধরে কলহ-বিবাদ চলছিল। এরই জের ধরে শফিকুল শুক্রবার ভোরে পারভীনকে পিটিয়ে ও শ^াসরোধ করে হত্যা করে। পরে এটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখানে পাষন্ড স্বামী কুপিয়ে ও জিহ্বা কেটে হত্যা করেছে স্ত্রী শাহীনুর বেগমকে (৫৫)। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং জিহ্বা কেটে নির্মমভাবে এই হত্যাকান্ড ঘটায় পাষন্ড স্বামী মমিনুল ইসলাম (৬০)। এ ঘটনার পর থেকে স্বামী মমিনুল পলাতক রয়েছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে উপজেলার শেখরনগর ইউনিয়নের পশ্চিম পাউশার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘদিন ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া চলছিল। এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার বিচার হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে স্ত্রীকে মারধর করে মুমূর্ষু অবস্থায় রেখে পালিয়ে যায় মমিনুল। পরে শুক্রবার সকালে নিহতের স্বজনরা শাহিনুর বেগমকে ঢাকা মেডিক্যালে নেয়ার পথে সে মারা যায়। নিহত শাহিনুর বেগমের ভাই সুলতান মিয়া জানান, প্রায় ৩৮ বছর আগে আমার বোনের সঙ্গে বিয়ে হয় মমিনুলের। বিয়ের পর থেকেই বোনকে নির্যাতন করত। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে আমার বোনকে অমানবিকভাবে নির্যাতন করে আমার বোনের জিহ্বা কেটে ফেলে এবং মাথায় একাধিক আঘাত করে। পরে শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিক্যালে নেয়ার পথেই আমার বোন মারা যায়। নড়াইল আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সদর উপজেলার শালিখা গ্রামে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ডাবলু শেখকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে শালিখা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ডাবলু পুরাতন শালিখা গ্রামের আব্দুস সালাম শেখের ছেলে এবং ২০১২ সালের প্রথম দিকে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসরে আসেন বলে জানা গেছে। এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, শালিখা গ্রামে স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ডাবল গ্রুপ ও বিদ্যু গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘ দিন দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এর জের ধরে নড়াইলের শালিখা বাজারে দোকানে টিভি দেখার সময় অতর্কিতভাবে হামলা চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন। এ সময় ডাবলু শেখের হাত, ঘাড় ও বুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। দিনাজপুর বিরল উপজেলা পল্লী এলাকার ভুট্টা ক্ষেত থেকে সুমিত্রা মার্ডি (২৫) নামক এক আদিবাসী নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বাড়ির পাশের ভুট্টা ক্ষেত থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই নারীর ১০ বছর বয়সী একটি মেয়ে এবং পাঁচ বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে। নিহত সুমিত্রা মার্ডি বিরল উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের মহেশ শিবপুর গ্রামের বিস্তা মার্ডির স্ত্রী। নিহতের স্বামী বিস্তা মার্ডি ঢাকঢোল বাজিয়ে সংসার চালান। ঘটনার দিনও তিনি এক বিয়ে অনুষ্ঠানে ঢাকঢোল বাজানোর জন্য বাড়ির বাইরে ছিলেন। বিরল থানার ওসি গোলাম রসুল জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে সুমিত্রা মার্ডি তার ছেলেকে নিয়ে বাড়ির পাশের ভুট্টা ক্ষেতে শাক উঠাতে যান। ক্ষেতের আইলে ছেলেকে বসিয়ে রেখে তিনি ভুট্টা ক্ষেতে প্রবেশ করেন। কিন্তু আর ফিরে আসেননি। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার পরও মা ফিরে আসছে না দেখে, ছেলে বাড়িতে গিয়ে অন্যদের ঘটনাটি জানায়। ছেলের কথা শুনে বাড়ির লোকজন ভুট্টা ক্ষেতে ছুটে যায়। কিন্তু সেখানে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তারা সুমিত্রা মার্ডিকে পায়নি। শুক্রবার সকালে সুমিত্রা মার্ডির মরদেহ ভুট্টা ক্ষেতে দেখার পর তারা পুলিশে খবর দেয়। নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজারে সালমা আক্তার (১৬) নামে এক গার্মেন্টসকর্মীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বেলা ১১টায় লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। সে স্থানীয় উচিতপুরা ইউপির ভরফদী এলাকার গোলজার হোসেনের মেয়ে। সে রূপগঞ্জের ফকির ফ্যাশনের শ্রমিক ছিল। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে নিজের শোবার ঘরে সালমা আক্তার ঘুমাতে যায়। শুক্রবার ভোরে তার কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে ওই বাড়ির লোকজন পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে ওই গার্মেন্টসকর্মীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। কালকিনিতে জুঁথী শেখ (২০) নামের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীর রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন। শুক্রবার ভোরে এ ঘটনাটি ঘটে। নিহত জুঁথী আক্তার ডাসার সরকারী শেখ হাসিনা একাডেমী এ্যান্ড উইমেন্স কলেজের চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। জানা গেছে, উপজেলার ডাসার এলাকার বেতবাড়ী গ্রামের দেলোয়ার শেখের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে জুঁথীর সঙ্গে কাজীবাকাই এলাকার পূর্ব খান্দলী গ্রামের জামাল সরদারের ছেলে ইমন সরদারের এক বছর পূর্বে বিবাহ হয়। এরপর থেকে জুঁথী তার বাবার বাড়িতেই বেশির ভাগ সময় বসবাস করে আসছেন। তিনি গত রাতে তার বাবার বাড়ির পাশে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠান থেকে গভীর রাতে ঘরে ফিরে তার মা নাজমা বেগমের সঙ্গে একই বিছানায় শুয়ে পড়েন। কিন্তু সকালে জুঁথীর নানা সেকান্দার মোল্লা ঘরের একটি রুমের ফ্যানের সঙ্গে জুঁথীর লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।
×