ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাটমন্ডলে চলছে নাটক ‘রসপুরাণ’

প্রকাশিত: ০৮:৫৩, ২৭ এপ্রিল ২০১৯

নাটমন্ডলে চলছে নাটক ‘রসপুরাণ’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রামায়ণ, মহাভারত ও ধ্রুপদী নাটকের নির্বাচিত দৃশ্যের সংশ্লেষ নাটক ‘রসপুরাণ’। অভিনয়ের তত্ত্ব ও রসের ধারণার নির্ভরযোগ্য প্রাচীন প্রামাণিক পান্ডুলিপি ভরত মুণি রচিত নাট্যশাস্ত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এ্যান্ড পারফর্মেন্স স্টাডিজ বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষ তৃতীয় সেমিস্টারে পাঠ্য ভরতের নাট্যশাস্ত্র (চার খন্ডে বিভক্ত এই শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত আঙ্গিকাভিনয়, বাচিকাভিনয়, সাত্ত্বিকাভিনয় ও আহার্যাভিনয়)। শৃঙ্গার, হাস্য, করুণ, রৌদ্র, বীর, ভয়ানক, বীভৎস ও অদ্ভুত এই আটটি রস ‘নাট্যরস’ বলে কথিত। রসসমূহের স্থায়ী ভাব রয়েছে। রতি ভাব থেকে শৃঙ্গার, হাস থেকে হাস্য, শোক থেকে করুণ, ক্রোধ থেকে রৌদ্র, উৎসাহ থেকে বীর, ভয় থেকে ভয়ানক, জুগুপ্সা থেকে বীভৎস এবং বিস্ময় থেকে অদ্ভুত রস তৈরি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমন্ডলে বৃহস্পতিবার বিকেলে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এ্যান্ড পারফর্মেন্স স্টাডিজ বিভাগ প্রযোজিত এ নাটকটির নাট্যভাবনা, পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন সহযোগী অধ্যাপক, থিয়েটার এ্যান্ড পারফর্মেন্স স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আহমেদুল কবির। দেহবিন্যাস ও চলন অমিত চৌধুরী। পরিবেশন করে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষ তৃতীয় সেমিস্টার ২০১৯। নির্দেশক জানান, ধ্রুপদী আঙ্গিকের এই প্রযোজনাকে দর্শকের সামনে উপস্থাপনের জন্য পান্ডুলিপি নির্বাচনের কাজ শুরু হয় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। নাট্যশাস্ত্রের আটটি রসকে প্রাধান্য দিয়ে ধ্রুপদী বিভিন্ন উৎস থেকে পান্ডুলিপির কাঠামো নির্মাণ করা হয়। এক্ষেত্রে প্রাচীন ভারতের দুটি মহাকাব্য ‘রামায়ণ’ ও ‘মহাভারত’ এবং অন্যান্য ধ্রুপদী নাটক থেকে আখ্যান-বস্তু চিহ্নিত করা হয়। এরপর নির্বাচিত অংশগুলো নিয়ে পুনঃসৃজনের লক্ষ্যে শুরু হয় তাৎক্ষণিক উদ্ভাবনভিত্তিক (ইম্প্রোভাইজেশন) মহড়া। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সৃজনশীল উপস্থাপনের মধ্যদিয়ে বিভিন্ন চরিত্র নির্মাণ ও রূপায়ণ করা হয়। রসভিত্তিক এই নাট্য নির্মাণে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয় আঙ্গিকাভিনয়ে। নাট্য নির্মাণের শুরুতেই আমাদের চিন্তা ছিল রসভিত্তিক একটি প্রযোজনা তৈরি করা, যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টিশীল সংযোগ স্থাপন এবং উভয়ের উদ্ভাবনী গবেষণার মাধ্যমে রসসমূহকে একই আধারে সংশ্লেষিত করা। অষ্টরসাখ্যান স্বরূপ এই প্রযোজনায় যে অদৃশ্য সুতোটি এক দৃশ্যের সঙ্গে আরেক দৃশ্যের মধ্যে ভাবগত সংযোগ স্থাপন করেছে তা হলো রস। ধারণাগত কাঠামো (কনসেপচুয়াল ফ্রেমওয়ার্ক) রূপে রসনিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার পটভূমিতেই খন্ড খন্ড দৃশ্যের সংশ্লেষণের মধ্যদিয়ে সঙ্কটময় পরিস্থিতি থেকে সুন্দর ও নির্মল পরিণতির দিকে এগিয়ে যায় আমাদের প্রযোজনা ‘রসপুরাণ’। এর উপজীব্য হলো মানুষের সভ্যতার দ্বান্দ্বিক অগ্রগতির ইতিহাস, যুদ্ধ, হত্যা, ভয়, ক্রোধ শেষে যুথবদ্ধ জীবনে অফুরান ভালবাসা ও সৌন্দর্যের প্রয়োজনীয়তা। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোঃ তানভীর আহম্মেদ, শাহ্বাজ ইশতিয়াক পূরণ, ওবায়দুর রহমান সোহান, মোঃ আবতাহী সাদমান ফাহিম, ফারজাদ ইফতেখার, সায়র নিয়োগী, দীপম সাহা, প্রণব রঞ্জন বালা, সুজানা জাহেদী, নিকিতা আযম, জান্নাতুল ফেরদৌস জিম, মোসা. নাসরিন সুলতানা, নাজমুল হোসেন, মোঃ রাফায়াতুল্লাহ, তনুশ্রী কারকুন, নীলিমা হোসেন ও হোসাইন জীবন। উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এ্যান্ড পারফর্মেন্স স্টাডিজ বিভাগের প্রযোজনায় ৪ মে পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় নাটমন্ডল মিলনায়তনে ‘রসপুরাণ’ নাটকটি মঞ্চায়ন হবে।
×