ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে রোহিঙ্গাদের প্রাণহানি হলে দায়ী থাকবে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো’

প্রকাশিত: ১২:৪৪, ২৬ এপ্রিল ২০১৯

 ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে রোহিঙ্গাদের প্রাণহানি হলে দায়ী থাকবে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো’

বাংলাট্রিবিউন ॥ ভাসানচরে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচে রোহিঙ্গাদের জন্য সাময়িক বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে সরকার। তবে জাতিসংঘসহ আরও কয়েকটি পশ্চিমা দেশ রোহিঙ্গাদের সেখানে স্থানান্তরে বাধা দিচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী বর্ষায় কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা ভূমিধসসহ অন্য কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারালে তার জন্য বাংলাদেশ নয় বরং জাতিসংঘসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো দায়ী থাকবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। বৃহস্পতিবার সকালে জাতিসংঘের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধানরা মন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করতে এলে তিনি শক্ত ভাষায় এ কথা জানিয়ে দেন। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক এ্যান্টনিও ভিটোরিনো এবং জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। বৈঠকের পরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বলেছি আমরা কিছু লোককে ভাসানচরে নিয়ে যেতে চাই। কারণ বলা হচ্ছে আগামী বর্ষা মৌসুমে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হবে। তাতে ভূমিধস হলে অনেক লোক মারা যাবে এবং মারা গেলে আমরা এর জন্য দায়ী থাকব না। আপনারা যারা বাধা দিচ্ছেন তারা এর জন্য দায়ী থাকবেন।’ বাংলাদেশ থেকে বিদায় হন ॥ সাক্ষাতকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘের তিন সংস্থার প্রধানকে বাংলাদেশে কাজ কমিয়ে মিয়ানমারে কাজ বাড়ানোর তাগিদ দেন। মন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলেছি আপনাদের এখানে কাজ নাই, মিয়ানমারে যান। আমি বেশ শক্তভাবে বলেছি।’ মন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘আপনারা ওখানে বেশি জোর দেন, এখানে না। আমি জিজ্ঞাসা করেছি আপনারা কতবার সেখানে গিয়েছেন, সেখানে আপনাদের কতজন কাজ করে। এখানে এক হাজারের বেশি লোক কাজ করে, ওখানে বেশি কাজ করেন, এখান থেকে বিদায় হোন।’ আপনারা মিয়ানমারকে কনভিন্স করেন, যাতে তারা তাদের লোক নিয়ে যায় এবং ওখানে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে কাজ করেন। বিশ্ব জনমত ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিন সংস্থার প্রধানকে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী ও সুষ্ঠু সমাধানের জন্য বিশ্ব জনমত তৈরির আহ্বান জনান। মন্ত্রী বলেন, ‘এতবড় সংস্থার প্রধান আপনারা এবং আপনারা বিশ্বব্যাপী জনমত তৈরি করতে পারেন। আমার ধারণা জনমত তৈরি করতে পারলে সবচেয়ে বড় অত্যাচারী শাসকেরও পতন হয়।’পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ওপর যে বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে ও অপরাধ সংঘটিত করেছে তার দায় তাদের নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। মন্ত্রী বলেন ‘আমরা বলেছি দায়বদ্ধতা থাকা উচিত। আমরা তাদের এটাও বলেছি আপনাদের যে বন্ধুপ্রতিম দেশ যেমন- জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর কিংবা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন- মিয়ানমারের বেশিরভাগ ব্যবসা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে, জাপান সেখানে বিনিয়োগ করেই চলেছে, ব্যাংকিং চালায় সিঙ্গাপুর। আপনারা সেখানে চাপ দেন যাতে করে তারা মিয়ানমারকে চাপ দেয় তাদের লোককে ফেরত নেয়ার জন্য।’ আমরা তাদের বলেছি এটির দ্রুত সমাধান না করা গেলে যারা যুবক আছে তারা উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। এখানে উগ্রবাদ হলে গোটা অঞ্চলের জন্য খারাপ হবে বলে জানান মন্ত্রী। অস্ত্র সরবরাহ ॥ তিন সংস্থার প্রধানকে মন্ত্রী রাখাইনে কারা অস্ত্র সরবরাহ করছে সেটি খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এর ফলে কে বা কারা এর পেছনে আছে আমরা তা জানতে পারব। মন্ত্রী বলেন, ‘আমি তাদের বলেছি কে রাখাইনে অস্ত্র সরবরাহ করছে। ওখানে মারামারি হচ্ছে কে অস্ত্র সরবরাহ করছে আপনারা সেটি বের করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটছে এবং বিভিন্ন তথ্য আমরা পাই কিন্তু মিডিয়াতে কখনও আসে না অস্ত্র কোন দেশের তৈরি, কোন কোম্পানির তৈরি বুলেটে বা শ্রাপনেলে লোকটা মারা গেছে। মন্ত্রী বলেন, ‘এখন এটি জানার সময় কারা এইসব অস্ত্র সরবরাহ করছে। এগুলো জানা গেলে সন্ত্রাস কমে যাবে।’
×