ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘শেখ হাসিনার অবদান কমিউনিটি ক্লিনিক বাঁচায় প্রাণ’

প্রকাশিত: ১১:১৩, ২৬ এপ্রিল ২০১৯

‘শেখ হাসিনার অবদান কমিউনিটি ক্লিনিক বাঁচায় প্রাণ’

নিখিল মানখিন ॥ কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) অপারেশন প্ল্যানে কমিউনিটি ক্লিনিক কেন্দ্রিক বেশকিছু নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কার্যক্রমসমূহের মধ্যে রয়েছে নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ ও জরাজীর্ণগুলো মেরামত। জনবল স্থায়ীকরণ ও নতুন নিয়োগ, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে হেলথ আউটকাম পরিমাপ, মাঠপর্যায়ে কার্যকর মনিটরিং ও সুপারভিশন জোরদার করা হবে। আর জনগণের কার্যকরী অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, কার্যকর রেফারেল ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, কমিউনিটি ক্লিনিকের টেকসই প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। আর দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিকে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জন্য ‘স্বাভাবিক ডেলিভারি ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করতে যাচ্ছে সরকার। বর্তমানে সীমিতসংখ্যক কমিউনিটি ক্লিনিকে এ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। নির্মাণ করা হবে এক হাজারের বেশি নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন। বিদ্যুত সংযোগ নেই এমন কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ইতোমধ্যে সোলার বিতরণ করা হচ্ছে। বর্তমানে নতুন মডেলে তিন কক্ষবিশিষ্ট (স্বাভাবিক প্রসব কক্ষসহ) কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মিত হচ্ছে। পরবর্তীতে সকল ক্লিনিক নতুন মডেল অনুযায়ী নির্মিত হবে। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার উদযাপিত হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিকের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জনকণ্ঠকে জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবাগ্রহীতা ও সেবার মান বেড়েই চলেছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বিশ্বের মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রকল্প। ক্লিনিকের সুফল ভোগ করছে দেশের সাধারণ মানুষ। বাড়ির পাশেই বিনামূল্যে মিলছে স্বাস্থ্যসেবা। কমিউনিটি ক্লিনিক বর্তমানে দেশের স্বাস্থ্যসেবার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে প্রতি ছয় হাজার জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা হিসেবে বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক হতে ৬৮ কোটির অধিক রোগী সেবা গ্রহণ করেছেন এবং এর মধ্যে ২.৬২ কোটির বেশি জরুরী ও জটিল রোগীকে উন্নত ব্যবস্থাপনার জন্য উচ্চতর পর্যায়ে রেফার করা হয়েছে। আর সারাদেশে ৩০৫৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসব পরিচালিত হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৩ হাজার ৪৫৫টি স্বাভাবিক প্রসব সম্পন্ন হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের বিভিন্ন কার্যক্রম, অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) অপারেশন প্ল্যানের লাইন ডিরেক্টর ডাঃ মোঃ আবুল হাশেম খান জনকণ্ঠকে জানান, কমিউনিটি ক্লিনিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কার্যক্রম যা বর্তমান সরকারের সাফল্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, দেশে-বিদেশে নন্দিত। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ জনগণ কাছাকাছি কমিউনিটি ক্লিনিক হতে সমন্বিত স্বাস্থ্য, পরিবার-পরিকল্পনা ও পুষ্টি সেবা পাচ্ছেন। এটি জনগণ ও সরকারের যৌথ উদোগে বাস্তবায়িত একটি কার্যক্রম। বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচীতে কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) অপারেশনাল প্লান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ডা. মো. আবুল হাশেম খান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগকে আরও বেগবান করতে কমিউনিটি ক্লিনিককে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ‘শেখ হাসিনার অবদান, কমিউনিটি ক্লিনিক বাঁচায় প্রাণ’ স্লোগানটি কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্র্যান্ডিং কার্যক্রমে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বিদ্যমান কিছু সমস্যা সমাধানে চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় সিবিএইচসি অপারেশন প্লানে কমিউনিটি ক্লিনিক কেন্দ্রিক বিভিন্ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। এ বিষয়ে লাইন ডিরেক্টর ডাঃ মোঃ আবুল হাশেম জানান, বর্তমানে প্রতিদিন একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে গড়ে ৩৮ জন সেবাগ্রহীতা আসছেন। গত আট বছরে প্রায় সোয়া ৮শ’ কোটি টাকার ওষুধ সরবরাহ করা হয়। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি কিছু কমিউনিটি ক্লিনিকে গর্ভবতী মায়েদের স্বাভাবিক ডেলিভারি হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২৯ হাজার স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কমিউনিটি গ্রুপ ও কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ সদস্য এবং স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা; বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয়ভাবে কমিউনিটি ক্লিনিকের দৈনন্দিন পরিচালনা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা, স্থানীয়ভাবে তহবিল সংগ্রহ ও ব্যবহার নিশ্চিতকরণসহ পরিচালনায় সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছে বলে তিনি জানান। ক্লিনিকসমূহের বর্তমান সেবা কার্যক্রম ॥ কমিউনিটি ক্লিনিকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম এবং সেবাদানকারীদের করণীয় সম্পর্কে নির্দেশিকা প্রতিটি ক্লিনিকে রয়েছে। নির্দেশিকায় টাঙানো থাকায় চিকিৎসা ও ওষুধ নিয়ে অবৈধ কাজ করার সুযোগ থাকছে না। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি) শুক্রবার এবং সরকারী ছুটিন দিন ব্যতীত প্রতিদিন কমিউনিটি ক্লিনিকে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে হয়। প্রশিক্ষণ পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত স্বাস্থ্য সহকারী এবং এফডব্লিউএ এর কাজে সহায়তা করেন। হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা ক্লিনিক খোলা এবং বন্ধ করা, রোগীর উপস্থিতি রেজিস্টারে নাম তোলা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নিশ্চিত করাসহ তাদের কর্মপরিধির আওতাধীন এই মুহূর্তে যেসব কর্মকা- পরিচালনা করা সম্ভব তা করেন। কমিউনিটি গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। সার্বিক প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যার আওতায় অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের প্রসব পূর্ব (প্রতিষেধক টিকাদানসহ) এবং প্রসব পরবর্তী (নবজাতকের সেবাসহ) সেবা দেন। সময়মতো প্রতিষেধক টিকাদানসহ (যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া, হুপিং কফ, পোলিও, ধনুস্টংকার, হাম, হেপাটাইটিস-বি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি) শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়। জনগণের জন্য বিশেষ মহিলা ও শিশুদের অপুষ্টি দূরীকরণের জন্য ফলপ্রসূ ব্যবস্থা গ্রহণ ও সেবা প্রদান করা হয়। ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, কালা-জ্বর, ডায়রিয়াসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং সেগুলোর সীমিত চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। সাধারণ জখম, জ্বর, ব্যথা, কাটা/পোড়া, দংশন, বিষক্রিয়া হাঁপানি চর্মরোগ, ক্রিমি এবং চোখ, দাঁত ও কানের সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে লক্ষণ ভিত্তিক প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। অস্থায়ী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সংক্রান্ত বিভিন্ন উপকরণ, যেমন- কনডম, পিল, ইসিপি ইত্যাদি সার্বক্ষণিক সরবরাহ ও বিতরণ নিশ্চিত করা হয়। জটিল রোগীদের প্রয়োজনীয় প্রাথমিক সেবা প্রদান করে দ্রুত উচ্চতর পর্যায়ে রেফার করা হয়। সদ্য বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের নিবন্ধিকরণ ও সম্ভাব্য প্রসব তারিখ সংরক্ষণ করতে হয়। মহিলা ও কিশোর-কিশোরীদের রক্তস্বল্পতা শনাক্ত এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করতে হয়। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং ব্যবস্থাদি থাকা সাপেক্ষে স্বাভাবিক প্রসব পরিচালনা করা হয়। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার ওষুধপত্র ও এমএসআরসহ আবশ্যক দ্রব্যাদির প্রয়োজনীয়তা নির্ণয় করেন। ওষুধপত্র ও এমএসআর সংগ্রহের জন্য ইউনিয়ন মেডিক্যাল অফিসারের মাধ্যমে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং পরিবার কল্যাণ সামগ্রী প্রদানের জন্য উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবর ইনডেন্ট প্রদান করে থাকেন। যেসব গর্ভবর্তী মহিলা কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে প্রসবপূর্বক ও প্রসবোত্তর সেবা গ্রহণ করেননি এবং যে সব নারী/ পুরুষ ইপিআই, যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ইত্যাদি বিষয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা গ্রহণ করেননি, স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারীরা তাদের খুঁজে বের করে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন।
×