ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১১:১২, ২৬ এপ্রিল ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলা। নির্বিচার হত্যাকা-। এবার শ্রীলঙ্কায়। কত যে তরতাজা প্রাণ, মুহূর্তেই ঝরে গেল! ইস্টার সানডের প্রার্থনা চলাকালে বোমা হামলা হলো তিন গির্জায়। ক্রুশবিদ্ধ যিশু যেন আবারও মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করলেন। চোখের সামনেই ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল তার পুত্র কন্যাদের শরীর। তাকিয়ে সেই বীভৎস দৃশ্য দেখতে হলো তাকে। একইরকম আক্রমণে কেঁপে উঠল তিনটি হোটেল। বোমার আঘাতে ল- ভ- হয়ে গেল পরিপাটি করে সাজানো পরিসর। করুণ মৃত্যু হলো মানুষের। ভাবতে অবাক লাগে, যারা মরছে তারা মানুষ। যারা মারছে তারাও! শ্রীলঙ্কার এই বিয়োগ ব্যথা ছুঁয়ে গেছে গোটা বিশ্বকে। মানবিক মানুষ মাত্রই শোকগ্রস্ত। তবে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আলাদা করে বেদনা বয়ে এনেছে শিশু জায়ান। ফুটফুটে জায়ান চৌধুরী বাবা-মায়ের সঙ্গে শ্রীলঙ্কায় বেড়াতে গিয়েছিল। সুন্দর সময় কাটছিল তাদের। কিন্তু কে জানত এই ভাললাগার বোধ স্থায়ী হবে না? সকালে হোটেলে নাস্তা করার সময় বোমা হামলার শিকারে পরিণত হয় শিশুটি। এইটুকুন বাচ্চা। এত্ত বড় আঘাত। কী করে সইবে? মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে। ঢাকায় খবরটি পৌঁছামাত্রই ঘটনাটিকে আরও নিজেদের মনে হতে থাকে। মৃত্যুর মধ্য দিয়েই সকলের চেনা হয় জায়ানকে। রাজধানী শহরেই বড় হচ্ছিল সে। বনানীতে নানা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বাসা। বাসাটিতে বাবা-মাসহ থাকত। হ্যাঁ, নিহত শিশু শেখ হাসিনার বৃহত্তর পরিবারের সদস্য। প্রধানমন্ত্রী তখন বিদেশে অবস্থান করছিলেন। বাংলাদেশে পা রাখতেই চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। বিমানবন্দরে ভেজা চোখ নিয়ে ফুফাত ভাই সেলিমকে সান্ত¡না দেয়ার চেষ্টা করলেন তিনি। ভাই-বোনের ছবি আবারও আবেগাপ্লুত করল সবাইকে। বাঙালীর পারিবারিক বন্ধন কত গভীর হয়, ছবিতে সেটিও ফুটে উঠল। সামাজিক দায় থেকেও অনেকে ছুটে গিয়েছেন বনানীর বাড়িতে। সহমর্মিতা জানিয়েছেন নিহতের স্বজনদের প্রতি। গুরুতর আহত বাবার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। শিশু জায়ানের মৃত্যু ছুঁয়ে গিয়েছিল অন্য শিশুদেরও। বনানীতে তাকে সমাহিত করার দিন এক পথশিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে সেটি অনুমান করা গেল। উদুম গা ছেলে। ব্যথাতুর চোখে জায়ানকে বয়ে নিয়ে চলা গাড়িটির দিকে তাকিয়ে ছিল। অপলক দৃষ্টি। যেন সে তার নিজের ভেতরে নেই। হয়ত টেলিভিশনে ছেলেটি জায়ানের ছবি দেখেছে। মৃত্যুর খবর শুনেছে। কিংবা কিছুই জানে না। শব যাত্রায় অংশ নেয়া মানুষের ছল ছল চোখ তাকেও ভিজিয়ে দিয়ে গেছে। এভাবে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মানবিক চেতনাকে, ভালবাসার বোধকে জাগিয়ে দিয়ে গেছে জায়ান। মৃত্যু দিয়ে সে মৃত্যু ঠেকানোর আহ্বান জানিয়ে দিয়ে গেছে। এবার অন্য প্রসঙ্গ। গ্রীষ্মের গরমের কথা বলা চাই। রোদে গা পুড়ে যাচ্ছে। ত্বক জ্বলছে। বৈশাখের শুরুতে এই হাঁসফাঁস সত্যি মেনে নেয়ার মতো নয়। কিন্তু প্রথম ঋতুর এই তো বৈশিষ্ট্য। না মেনে উপায় কী? মেনে নিতেই হচ্ছে ঢাকাবাসীকে। গরমে গলে যেতে যেতে কাজ-কর্ম করছেন তারা। এরই মাঝে বৃহস্পতিবার ঢাকার তাপমাত্রা গত কয়েকদিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাকে ছাড়িয়ে যায়। আবহাওয়া অফিস জানায়, এদিন তাপমাত্রা ছিল সবচেয়ে বেশি ৩৭.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সঙ্গত কারণেই প্রমাদ গুনছেন সাধারণ কর্মজীবী মানুষ। এ অবস্থায় কেবল বৃষ্টিই পারে ধরণীকে শীতল করতে। কবে নামবে প্রত্যাশার বৃষ্টি? চাতকের মতো অপেক্ষা করে আছে ঢাকা। নাসির উদ্দীন ইউসুফের নতুন সিনেমা ‘আলফা’র কথায় আসা যাক। এই মুক্তিযোদ্ধা একইসঙ্গে নাটকের মানুষ। ঢাকা থিয়েটারের প্রাণ পুরুষ সিনেমা নির্মাণ করেও প্রশংসিত হয়েছেন। অনন্য সৃষ্টি ‘একাত্তরের যীশু’ ও ‘গেরিলা’র পর এবার তিনি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন ‘আলফা’। ছবিটি আজ শুক্রবার ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় মুক্তি দেয়া হচ্ছে। ছবির কাহিনী, চিত্রনাট্যও রচনা করেছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। গত ২০ এপ্রিল বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে ছবিটি দেখানো হয়। বিশেষ প্রদর্শনী দেখে সত্যি অভিভূত হতে হয়েছে। ছবিতে নতুন এক নাসির উদ্দীন ইউসুফ। সংবেদনশীল অবস্থানে থেকে সমাজ রাষ্ট্রের ক্ষতগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন তিনি। প্রচলিত গল্প বলা নেই। শিল্পের নানা ফর্মে কথা বলেছেন। এ জায়গাটিতেই বিশেষ চমকিত হবেন দর্শক। ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রশিল্পী আলমগীর কবীর। অন্য শিল্পীরা হলেন দোয়েল ম্যাশ, মুস্তাফিজ নুর ইমরান প্রমুখ। ব্যতিক্রমী একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন এটিএম শামসুজ্জামান। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ছবিটি প্রযোজনা করেছে। দেখার মতো ছবি। দেখুন। ভাবুন। নির্মাতার ভাষায়- তার পর মাতুন আলোচনায়। সমালোচনায়।
×