ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কায় সব ক্যাথলিক চার্চ বন্ধের নির্দেশ

প্রকাশিত: ১১:০২, ২৬ এপ্রিল ২০১৯

শ্রীলঙ্কায় সব ক্যাথলিক চার্চ বন্ধের নির্দেশ

সিফাত উল্লাহ ॥ শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে আগামী ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত সকল ক্যাথলিক চার্চ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির সিনিয়র যাজক ফাদার এডমন্ড তিলেকারত্বে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম। খবর সিএনএন ও এএফপির। ফাদার এডমন্ড তিলেকারত্বে জানান, নিরাপত্তা বাহিনীর পরামর্শ অনুযায়ী তারা গির্জাগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, ২১ এপ্রিলের হামলার পর ইতোমধ্যেই দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। এদিকে সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, ২১ এপ্রিলের ভয়াবহ সিরিজ বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আগে থেকেই নজরদারিতে রেখেছিল লঙ্কান গোয়েন্দারা। তবে তখনও পর্যন্ত তাদের হেফাজতে নেয়ার মতো যথেষ্ট প্রমাণ সরকারের হাতে ছিল না। ইতোমধ্যেই ওই হামলার ঘটনায় শ্রীলঙ্কার শীর্ষস্থানীয় এক ব্যবসায়ীর সন্তানদের নাম এসেছে। মোহাম্মদ ইউসুফ ইব্রাহিম নামের খ্যাতনামা ওই মসলা ব্যবসায়ী এক সময় বামপন্থী রাজনৈতিক দল জনতা ভিমুখী পেরামুনা পার্টির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কার বর্তমান শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ঋষথ বাথিউডেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও তার উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। হামলার পর তদন্তের জন্য তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে তার একজন প্রতিবেশী জানান, গরিব মানুষের খাবার ও অর্থ সহায়তার জন্য তিনি এলাকায় বেশ বিখ্যাত ছিলেন। তার সন্তানরা এমন কাজ করতে পারে, এটা অকল্পনীয়। অভিজাত পরিবারের সন্তানদের এভাবে হামলায় অংশ নেয়ার বিষয়েও কথা বলেছেন লঙ্কান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, হামলাকারীরা মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে। তারা দেশের বাইরে পড়াশোনা করে এসেছে। সমাজে তাদের অভাবনীয় অবস্থান রয়েছে। নেগোম্বো ছাড়ছেন মুসলমান শরণার্থীরা ॥ শোকার্ত মানুষ যখন ইস্টার সানডের আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত খ্রীস্টানদের শেষকৃত্য করছে, তখনই প্রাণভয়ে পশ্চিম উপকূলের নেগোম্বো শহর ছাড়ছেন শত শত মুসলমান শরণার্থী। কলম্বো থেকে এক ঘণ্টা দূরের এ বন্দর শহরে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন সম্প্রদায় মিলেমিশে বাস করলেও গত কয়েকদিনে সেখানে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা অনেক বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। রবিবার স্থানীয় সময় সকালে ভারত মহাসাগরের এ দ্বীপদেশটির বিভিন্ন গির্জা ও হোটেলে একযোগে যে বোমা হামলা হয়, তার মধ্যে নেগোম্বোর সেইন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চও ছিল। প্রায় একই সময়ে ছয়টি স্থানে বিস্ফোরণ ঘটলেও এ গির্জাটিতে হওয়া হামলাই ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী। ইস্টার সানডের ওই হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৫৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সেইন্ট সেবাস্টিয়ানেই মৃতের সংখ্যা ২০০-র কাছাকাছি হবে বলে ধারণা গির্জার নেতাদের। ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণের পর থেকেই নেগোম্বোর মুসলমানরা স্থানীয়দের কাছ থেকে ‘প্রতিশোধের হুমকি’ পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। বুধবারও কয়েকশ পাকিস্তানী মুসলমান কলম্বোর উত্তরের এ শহরটি ছেড়ে পালিয়ে যান বলে জানিয়েছে রয়টার্স। স্থানীয় নেতা ও পুলিশ নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকা ওই মুসলমানদের সরিয়ে নিতে বাসেরও ব্যবস্থা করে দেন। ‘বোমা হামলা এবং এখানে যে বিস্ফোরণটি হয়েছে তার কারণে স্থানীয় শ্রীলঙ্কানরা আমাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। এ মুহূর্তে আমরা জানি না, আমরা কোথায় যাচ্ছি,’ বাসে উঠতে উঠতে বলেন পাকিস্তান থেকে আসা আদনান আলি। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) হামলার দায় স্বীকার করেছে। এ জঙ্গীগোষ্ঠীটি ইসলামের সুন্নি মতাদর্শে বিশ্বাসী, অন্যদিকে নেগোম্বো ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া মুসলিম শরণার্থীর বেশিরভাগই আহমদিয়া মতাদর্শের। পাকিস্তান আহমদিয়াদের ‘অ-মুসলিম’ ঘোষণার পরপরই এ মুসলমানরা সেখান থেকে পালিয়ে শ্রীলঙ্কায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। রবিবারের হামলা তাদের ফের উদ্বাস্তুতে পরিণত করল, ঠেলে দিল অনিশ্চিত জীবনের দিকে। এদেরই একজন ফারাহ জামিল। রবিবারের ঘটনার পর যাকে তার বাড়িওয়ালা বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ধারাবাহিক সতর্ক বার্তা পাওয়ার পরও ভয়াবহ এ হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতায় শ্রীলঙ্কার সরকারও অনেকটাই বেসামাল হয়ে পড়েছে। শ্রীলঙ্কায় ড্রোন নিষিদ্ধ ॥ ড্রোন এবং মনুষ্যবিহীন বিমানের ওপর নিষেধাজ্ঞা এনেছে শ্রীলঙ্কা। দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএ) জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। গত বুধবার রাজধানী কলম্বোর স্যাভয় নামের জনপ্রিয় একটি সিনেমা হলের পাশে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। অপরদিকে বৃহস্পতিবার রাজধানী কলম্বো থেকে ৪০ কিলোমিটার পূর্বের পুগোদা শহরে একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় পুলিশের এক মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন। একের পর এক বিস্ফোরণ ও হামলার ঘটনায় নিরাপত্তা হুমকি দেখা দেয়ায় দেশজুড়ে মনুষ্যবিহীন বিমান এবং ড্রোন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে। কলম্বো গ্যাজেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাময়িক সময়ের জন্য ড্রোন এবং মনুষ্যবিহীন বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে। ব্যর্থতার দায় নিয়ে প্রতিরক্ষা সচিবের পদত্যাগ ॥ গোয়েন্দা তথ্য পেয়েও ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা সচিব হেমাসিরি ফার্নান্দো। গোয়েন্দা সতর্কবার্তা নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা তার দেশের পুলিশ প্রধান ও প্রতিরক্ষা সচিবকে পদ ছাড়ার নির্দেশ দেয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার হেমাসিরি ফার্নান্দোর ইস্তফা দেয়ার খবর পাওয়া গেল। ফার্নান্দো বলেছেন, ‘রবিবারের ওই হামলার ঘটনায় তার দিক থেকে কোন ব্যর্থতা ‘না থাকলেও’ তার অধীন বাহিনী ও সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার দায় তিনি নিজের ঘাড়ে নিচ্ছেন। যে গোয়েন্দা তথ্য আমাদের হাতে এসেছিল, সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম, আমাদের সব সংস্থাই কাজ করছিল।’ হামলায় মৃতের সংখ্যা ১শ’র বেশি কমাল শ্রীলঙ্কা ॥ শ্রীলঙ্কায় ইস্টার সানডের পরবের দিন আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা ১শ’র বেশি কমিয়ে এ সংখ্যা ‘প্রায় ২৫৩’ বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মৃতের সংখ্যা হিসাবে ভুল হয়েছিল বলেই জানানো হয়েছে। খবর বিবিসির। গত রবিবার শ্রীলঙ্কার তিনটি গির্জা ও তিনটি অভিজাত হোটেলসহ মোট আট জায়গায় আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয়। বুধবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫৯ হয়েছে বলে আগে জানানো হয়েছিল। আরও শত শত মানুষ আহত হওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন কর্মকর্তারা। হামলায় নিহতদের বেশিরভাগই শ্রীলঙ্কান। তবে হতাহতদের মধ্যে অনেক বিদেশীও আছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
×