ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ওয়াসার পানি কে খাবে, কে খাবে না সেটা মাইন্ডসেটের বিষয়

প্রকাশিত: ১১:০০, ২৬ এপ্রিল ২০১৯

ওয়াসার পানি কে খাবে, কে খাবে না সেটা মাইন্ডসেটের বিষয়

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ওয়াসার পানির বিশুদ্ধতা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যেই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বললেন, পাইপলাইনের পানি কে খাবে, কে খাবে না সেটি তার ঝুঁকি নেয়ার ওপর নির্ভর করবে। ওয়াসার পাইপলাইনের পানি খাওয়ার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, শ্রমিকরা জগ ভরে পানি খায়, কিন্তু এক বছরেও অসুস্থ হয়নি। একটা সময় ওয়াসার পানি সঙ্কটের কারণে বহুদিন গোসল না করে অফিস করেছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। আলোচনা-সমালোচনা সরকারের সংস্থাগুলোকে সহজভাবে আমলে নেয়া উচিত জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তাহলে আমাদের আর কিছু করণীয় আছে কি না, কোথাও কোন ভুলত্রুটি আছে কিনা- এ বিষয়ে আমরা সংশোধন ও সচেতন হতে পারব। মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশে অগ্নিনির্বাপণ প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সভার শুরুতেই স্থানীয় সরকার বিভাগ মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ঢাকা ওয়াসার পানির প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন। ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান গত ২০ এপ্রিল বলেছিলেন, ঢাকা ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়। সংস্থার এমডির এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ওয়াসার পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে নিয়ে ২৩ এপ্রিল এসেছিলেন জুরাইনের কিছু বাসিন্দা। কিন্তু এমডিকে শরবত খাওয়াতে পারেননি তারা। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা ওয়াসা নিয়ে ইদানীং বেশ কথাবার্তা চলছে। আমি এখানে বলি, ওয়াসার পানির ৯৯ শতাংশ ব্যবহার হয় ড্রিংকেবল ওয়াটার না, নন-ড্রিংকেবল ওয়াটার হিসেবে। ৯৯ শতাংশ পানি ব্যবহৃত হয়- ধোয়ামোছা ও গোসলের কাজে। আর ওয়ান পার্সেন্ট পানি সরবরাহ করা হয় খাওয়ার জন্য। মন্ত্রী বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এই শহরে বসবাস করি, চট্টগ্রামের একটি গ্রামে বসবাস করি। যেহেতু রাজনীতি করি দেশের বেশিরভাগ জায়গায় যাই। আমি ‘ভেরি অনেস্টলি’ বলি, ‘নট দ্য সেন্স অব এনি পারসিয়াল অর পলিটিক্যাল’। আমরা ২০০৯ সালে যখন ক্ষমতায় আসি, বহুদিন গোসল না করে অফিসে এসেছি। গুলশানের মতোন জায়গায় আমি বসবাস করি, যেটাকে নাম্বার ওয়ান পশ এরিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমি চট্টগ্রামে খুলশীতে থাকি, সেখানেও দেখা গেছে আমি গোসল করতে পারিনি। গাড়িতে করে পানি আনিয়ে ব্যবহার করছি। চট্টগ্রামের সিডিএ এলাকায় ৩-৪ বছর পর্যন্ত ওয়াসার কোন পানি যায়নি। হালিশহর এলাকায় পানি পাওয়া যাবে না- এই মানসিকতা নিয়ে সবা মাইন্ডসেট হয়ে গেছে, পানি যদি আসে এটা একটা আশ্চর্য ঘটনা ঘটবে। ঢাকা শহরে গত ৭-৮ বছরের মধ্যে আমার বাসায় পানি আসেনি, এমন কোন ঘটনা নেই। আর এ্যাপারেন্টলি পানি দেখে আমার কাছে কখনই মনে হয়নি যে এই পানিটার মধ্যে ময়লা আছে। আগের তুলনায় পানির মান উন্নত হয়েছে। উপরন্তু এখন ফুটিয়ে খাওয়া বা ফিল্টারে ফিল্টারিং করে খাওয়া অথবা ডাইরেক্ট খাওয়া- এটা ডিপেন্ড করে কারা, কীভাবে? মন্ত্রী বলেন, আমেরিকাতেও দেখা গেছে কেউই পাইপ লাইনের পানি খায় না, বাজার থেকে কিনে আনে। সিঙ্গাপুরেও দেখেছি ড্রিংকেবল পানি সাপ্লাইর ব্যবস্থা আছে হোটেলে কিন্তু সেখানেও মিনারেল পানি, বোতলের পানি রাখা আছে। আমরা কেউ সেটা খাওয়ার জন্য কারেজিয়াস হই না। পানি খাওয়া না-খাওয়ার বিষয়টি মাইন্ডসেটের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের এখানে নির্মাণ শ্রমিকরা নিয়মিত পাইপ লাইনের পানি খায়Ñ আমি এক জায়গায় এক বছর পর্যন্ত, সেখানে আমি মাঝে মধ্যে যাই, সেখানে দেখি পাইপলাইনের পানি ওরা জগে নেয়, খায়। এক বছর পর্যন্ত তারা অসুস্থ হয়নি। ঘটনাটা হলো কে খাবে কে খাবে না- এটা ডিপেন্ড করবে আপনি কতটুকু রিস্ক নেবেন তার ওপর। মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর কোন দেশ শুধু ড্রিংকেবল ওয়াটার সাপ্লাই দেয়ার জন্য আলাদা কোন পাইপলাইন সব জায়গায় করে দিয়েছে- আমার জানা নেই। আর এটা যে পরিমাণ এক্সপেন্সিভ হবেÑ যদি করতে হয়, এটাকে পরিচালনা, মান নিয়ন্ত্রণের জন্য, এটার জন্য বছরে ১০-১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। যদি আলাদা পাইপ লাইন করেন, একেবারে ড্রিংকেবল ওয়াটার। পানি ‘কন্টামিনেটেড’ (দূষিত) কোথায় হয়? ওয়াসার পাইপলাইনের সোর্স থেকে আমরা পানি এনেছি, আমরা দেখেছি যেখানে উৎপাদন হয় সেখানে পানি ঠিক আছে। প্রত্যেক বাড়িতে তো রিজার্ভার আছে, রিজার্ভার আপনি কতটুকু মেইনটেন করতে পারেন? আর ইউ শিওর ইউ কিপ ইট হাইজিনিক? যদি না রাখতে পারেন সেখানে কন্টামিনেশন হতেই পারে।’ মন্ত্রী বলেন, ঢাকায় বহুতল ভবন এক সময় খুব কম ছিল, তখন আমরা দরিদ্র ছিলাম। এখন আমরা দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসছি, এখন বহুতল ভবন হচ্ছে। বহুতল ভবন করলে আমরা এর নিরাপত্তা দিতে পারব না, এটা মনে হয় যৌক্তিক হতে পারে না। আইন প্রয়োগের বিষয়ে শৈথিল্য দেখানোর সুযোগ নেই। একটা সময় চলে গেছে, সামনের দিনগুলো কিন্তু আর ওভাবে দেখা যাবে না।
×