ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এরা গণদুশমন ॥ গয়েশ্বর

শপথ নিলেন বিএনপির জাহিদ, অন্যরাও পাইপলাইনে

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২৬ এপ্রিল ২০১৯

শপথ নিলেন বিএনপির জাহিদ, অন্যরাও পাইপলাইনে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জোট ও দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করেই অবশেষে শপথ নিলেন বিএনপি থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান জাহিদ। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁ-৩ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। বৃহস্পতিবার বেলা বারোটায় জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী তার শপথ বাক্য পাঠ করান। বিএনপির ৬ সদসের মধ্যে এখনও ৫ জনের শপথ নেয়া বাকি রয়েছে। তাদের আগমী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শপথ নিতে হবে। শপথ না নিলেও তাদের সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। তবে সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে শপথ না নেয়া এবং সংসদের না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দলের এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই জাহিদুর রহমান জাহিদ বৃহস্পতিবার শপথ নিলেন। শপথ নিয়ে তিনি জানান, বিএনপি থেকে নির্বাচিত দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ছাড়া বাকি আরও চার সদস্য সদস্য শপথ নিতে পারেন। তবে জানা গেছে এদের মধ্যে তিনজন আগামী রবিবারের মধ্যে শপথ নিতে পারেন। শপথ নেয়ার জন্য দলকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। তবে শেষ পর্যন্ত দল সিদ্ধান্ত না দিলে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেই তারা শপথ নিতে পারেন। বিএনপি থেকে নির্বাচিত এই এমপির শপথ নেয়াকে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানালেও বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোন প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়নি। তবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা শপথ নিয়েছেন বা নেবেন তারা দুশমন। কবে শপথ নিয়ে বিএনপির এই এমপি সাংবাদিকদের বলেন তিনি সংসদে গিয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানাবেন। তিনি বলেন শপথ নেয়ার কারণে দল যদি তাকে বহিষ্কার করে তবুও তিনি বিএনপিতেই থাকবেন। গত ২০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচনে বিএনপির গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচনের অংশ নেয়। এই জোটের প্রায় সবপ্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে বিএনপির ৬ জন এবং গণফোরামের দুজন প্রার্থী নির্বাচনে জয়লাভ করেন। তবে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে। একইসঙ্গে দলে যারা নির্বাচিত হয়েছে তারা শপথ নেবেন না বলেও জানিয়ে দেন। কিন্তু দলের ও জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করেই এখন তিনজন শপথ নিয়েছে। এরমধ্যে বিএনপির একজন ছাড়াও গণফোরাম থেকে দুজন রয়েছেন। গণফোরাম থেকে নির্বাচিত সুলতান মনসুর এবং মোকাব্বির খান জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করেই শপথ নেন। তবে বিএনপি জাহিদুর রহমান জাহিদ দলেল সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিলেও বিএনপি থেকে নির্বাচিত আর পাঁচজন সদস্য এখনও শপথ নেননি। আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। আইন অনুযায়ী নির্বাচিত হওয়ার পর কোন সদস্য অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে শপথ নিতে হবে। শপথ না নিলে ওই আসন শূন্য হয়েছে বলে ধরে নেয়া হবে। শূন্য ঘোষণার পরই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচনের জন্য তফসির ঘোষণা করা হবে। তবে আইনে কোন সদস্য শপথ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে স্পীকারের কাছে চিঠি দিয়ে সময়বর্ধিত করতে পারবেন। তবে সময়ে আবেদন না জানালে ৩০ এপিলে পর বিএনপির যে কয়জন নির্বাচিত হয়েছে তাদের সদস্যপদ শূন্য ঘোষণা করে নতুন নির্বাচনের আয়োজন করবে ইসি। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে বিএনপি থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান জাহিদকে জাতীয় সংসদ ভবনে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান। শপথ গ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের কাছে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান জাহিদ বলেন, এলাকার মানুষের প্রচ- চাপেই শপথ নিয়েছি। ঢাকায় পনেরো দিন ধরে আছি, এলাকার মানুষের একটাই বক্তব্য শপথ নিয়ে ফিরে আসেন। এ কারণেই শপথ নিয়েছি। সংসদে গিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানাব। এদিকে বিএনপির নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমানের শপথ গ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ তার প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের জানান, আমরা বারবার বলে আসছি ভোটারদের দায়বদ্ধতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করুক। জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে সংসদে আসার জন্য, সেই দায়বদ্ধতা থেকে তাদের শপথ নেয়া উচিত। বিএনপির এমপি জাহিদুর রহমান জাহিদ শপথ নিয়েছেন, তাকে আমরা অভিনন্দন জানাই। গত ২৯ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির মধ্যেও ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হন জাহিদুর রহমান জাহিদ। বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ভোটের ওই ফল প্রত্যাখ্যান করে সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানালেও তা উপেক্ষা করে গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ও মোকাব্বির খানের আগে শপথ নেন। বিএনপির জাহিদুর রহমানও এবার একই পথে হাঁটলেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, হুইপ ইকবালুর রহিম ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন উপস্থিত ছিলেন। সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। শপথের পর দল তো আপনাকে বহিষ্কার করতে পারে, সেক্ষেত্রে আপনার অবস্থান কী হবে? এ প্রশ্নের জবাবে এমপি জাহিদুর রহমান বলেন, আমার বিষয়ে দল (বিএনপি) যে কোন সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। সেটা তো জেনেশুনেই শপথ গ্রহণ করেছি। দল যদি মনে করে বহিষ্কার করবে- করতেই পারে। বহিষ্কার করলেও কিন্তু আমি দলে আছি। আমি এই দলের একজন নিবেদিত প্রাণ। সেই ছাত্রজীবন থেকে দীর্ঘ ৩৮ বছর এই দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কাজেই বিএনপি আমাকে বহিষ্কার করলেও আমি তো বিএনপি থেকে বহিষ্কার হব না। আমি আছি, থাকব। তিনি আরও বলেন, জনগণ আমাকে নির্বাচিত করেছেন। তাদের প্রত্যাশা আমি যেন শপথ গ্রহণ করে এলাকা ও দেশের উন্নায়নে কাজ করতে পারি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে মাঠে লড়াই করেছি। আমি এবার দিয়ে চতুর্থবার নির্বাচন করলাম। এই আসনটি বিএনপির ছিল না। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনটি আওয়ামী লীগের। এই প্রথম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি বিজয়ী হতে সক্ষম হয়েছে।
×