ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপে বড় ইনিংস খেলতে চান তামিম

প্রকাশিত: ১২:১৫, ২৫ এপ্রিল ২০১৯

বিশ্বকাপে বড় ইনিংস খেলতে চান তামিম

মিথুন আশরাফ ॥ ‘দল আমাকে যে দায়িত্ব দিবে সেই দায়িত্ব যদি আমি পালন করতে পারি, ওই দায়িত্ব যদি আমি ভালভাবে পালন করি তাহলেই সুযোগ আসবে বড় ইনিংস খেলার। বিশ্বকাপে নিজের লক্ষ্য নিয়ে বুধবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কথা বলতে গিয়ে এমন সুরই বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবালের কণ্ঠে। বিশেষ কোন লক্ষ্য তার নেই। দলের জন্য খেলতে চান তিনি। দলের জন্য খেলতে পারলে রানও হবে, বড় ইনিংসও হবে। এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে বিশেষ কোন টার্গেট আছে? সংবাদমাধ্যমের এমন প্রশ্নে তামিম জানান, ‘কোন টার্গেট না, কোন কিছু না। কারণ আমার কাছে মনে হয় যে আমি যখনই কোন কিছু নিয়ে বেশি ভাবি, কোন না কোনভাবে সেই সাফল্য পাই না। তাই আমি এটা নিয়ে খুব বেশি ভাবছি না। বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি নাই, এই নাই, সেই নাই- আমি সবই জানি। এখন এটা তো আমি চেঞ্জ করতে পারব না। এই বিশ্বকাপে যদি আমি এটাই টার্গেট করে যাই যে একটা সেঞ্চুরি করতে হবে বা খুব রান করতে হবে, তাহলে আমি আসলে অপ্রয়োজনীয় চাপ নিব আমার ওপরে। আমি এটা চাই না। আমি অন্য কিছু নিয়ে চিন্তিত। তা হচ্ছে দল আমাকে যে রোলটা দিবে সেই রোলটা যদি আমি পালন করতে পারি, ওই রোলটা যদি আমি ভালভাবে পালন করি, তাহলেই সুযোগ আসবে বড় ইনিংস খেলার। গুরুত্বপূর্ণ হলো দলকে একটা ভাল শুরু এনে দেয়া এবং যে রোলটা দেয়া হয়েছে সেটা ভালভাবে পালন করতে পারা। ইংল্যান্ডে আপনার অনেক সাফল্য। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভাল খেলেছেন। লর্ডসে টেস্ট সেঞ্চুরি আছে। ইংল্যান্ডের মাটিতে এবার স্মরণীয় কিছু করার ব্যাপারে আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী? তামিম বলেন, এগুলো নিয়ে আমি একটা ফোঁটাও ভাবি না যে আমি ইংল্যান্ডে ভাল করেছি। আমার কাছে মনে হয় যদি আমি এগুলো ভাবি এটা আমাকে সহযোগিতা করে না। আমি এতটুকু জানি যে, খুবই কঠিন। আরও বেশি কঠিন হবে যদি আমি বিশ্বকাপে সফল হতে চাই। আমাকে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। তাই কি করেছি ইংল্যান্ডের মাটিতে সেটা নিয়ে আমি খুব বেশি ভাবি না। এটা ইতিহাস হয়ে থাকুক, সেটাই আমি চাই। ভাল করি বা না করি, আমি কখনও পিছনের জিনিস নিয়ে চিন্তা করতে চাই না। যেটা বর্তমানে আছে সেটা নিয়েই আমাকে ভাবতে হবে। আর একটা জিনিস আমি জানি, আমি যদি বিশ্বকাপে সফল হতে চাই তাহলে আমাকে প্রচ- কষ্ট করে এবং মাঠে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েই সেটা করতে হবে। ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপের আবহাওয়া নিয়ে চ্যালেঞ্জ আছে। তামিম কী মনে করছেন? তিনি জানান, কঠিন আবহাওয়া হবে সম্ভবত। একটা যে জিনিস, আমার কাছে মনে হচ্ছে যে হার্ড ওয়ার্কটা আমরা এখানে করে নিচ্ছি। এরকম আবহাওয়ায় রানিং করা, ব্যাটিং করা, ফিল্ডিং করা, জিম করা এটা খুব চ্যালেঞ্জিং। এই যে কষ্টটা আমরা এখানে করে নিচ্ছি, যখন আমরা ওই ধরনের ওয়েদারে যাব, আমার কাছে মনে হয় যে এটলিস্ট ফিজিক্যাল ফিটনেসের দিক থেকে হেল্প করবে। আমার কাছে মনে হয় এটাই সঠিক সময় কঠিন পরিশ্রম করার। আর সবাই চেষ্টা করছে তাদের মতো করে। এটাই আর কি, আরও দুই-তিনদিন প্র্যাকটিস আছে। ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ রয়েছে। এই সিরিজে বড় চ্যালেঞ্জটা কী হবে? তামিম মনে করছেন, আমার কাছে মনে হয় কন্ডিশনটা একটা চ্যালেঞ্জ হবে। কারণ আয়ারল্যান্ড এমন একটা দেশ যেখানে আমরা খুব বেশি খেলি নাই। শেষ যেবার খেলেছিলাম তখনও উইকেট খুব একটা সহজ ছিল না। কঠিন ছিল। তাই আমার কাছে মনে হয় আগের সাতটা দিন এবং প্রস্তুতি ম্যাচটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ম্যাচটা আমরা কিভাবে শুরু করি সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। কারণ সেখানে আরও একটা প্রতিপক্ষ থাকবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যারা এখন খুব ভাল ফর্মে আছে। সফর ভাল করার জন্য শুরুটা গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা লীগ খেলেননি প্রস্তুতি নেবার জন্য সেটা কতটুকু হলো? তামিম জানান, আমি সন্তুষ্ট। আমার মূলত যে জিনিসটা ছিল ব্যাটিংয়ের চেয়েও বেশি হলো ফিজিক্যাল ফিটনেস। আমি যে লক্ষ্য নিয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ মিস করেছিলাম, আমার মনে হয় সেই লক্ষ্যটা পূরণ হয়েছে। বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে এমন একটা টুর্নামেন্ট, যেটার দুটো দিকই থাকতে পারে, ভাল করলে একরকম আবার খারাপ করলে একরকম। আপনি পার্সোনালি এই সিরিজটাকে কিভাবে দেখছেন? তামিমের কাছে নেতিবাচক দিকও আছে, ‘নেগেটিভ যদি ধরতে হয় তাহলে একটাই নেগেটিভ পার্ট আছে। সেটা হলো আমরা হয়তোবা দেড় মাসের মধ্যে ১৩-১৪টা ম্যাচ খেলব। দিস ইজ দ্য অনলি নেগেটিভ পয়েন্ট। তাছাড়া আর কোন নেগেটিভ আমি দেখি না। কারণ ওইসব কন্ডিশনে আমরা খুব বেশি খেলার সুযোগ পাই না। আমরা সবাই জানি যে বিশ্বকাপে আমরা বেশি বিশ্রাম পাব না। আয়ারল্যান্ড সিরিজ গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের ওখানে পাঁচটা ম্যাচ খেলার সুযোগ থাকবে কিন্তু ওখানেও দুইটা-একটা ম্যাচ করে যদি একটু চেঞ্জ করা হয়, সেটা গুরুত্বপূর্ণ হবে। পটেনশিয়ালি আপনার যে ওপেনিং পার্টনার, সে (সৌম্য সরকার) মঙ্গলবার ২০৮ রান করেছে। ইনিংসটা সম্পর্কে কিছু শুনেছেন কিনা বা এটা ওকে কতটা হেল্প করবে? তামিম বলেন, ইটস আ গ্রেট এ্যাচিভমেন্ট, বাংলাদেশী কেউ এই প্রথম ২০০ রান করেছে। যদিও আমরা খেলব একেবারেই ভিন্ন একটা কন্ডিশনে, ভিন্ন বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে, তবুও রান করাটা সবসময়ই ইতিবাচক। এটা আত্মবিশ্বাস যোগায়। সে কোথায় রান করেছে এটা মুখ্য বিষয় নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে সে রান করেছে। ও যদি শেষ দুই ম্যাচে দুইটা সেঞ্চুরি না করে ১০ আর ৫ করে ট্যুরে যেত, ওর মাথার মধ্যে এক পার্সেন্ট হলেও একটা চাপ থাকতো। তবে এখন সে জানে, সে রান করেছে। যখন আপনি রান করেন তখন আপনি এটা জানেন যে কিভাবে রান করতে হয়। এটা গুরুত্বপূর্ণ। যখন কারও ফর্ম খারাপ যায়, তখন সে ওইটা ভুলে যায় যে কিভাবে রান করতে হবে। তাই এটা তারজন্য খুব পজিটিভ যে সে আয়ারল্যান্ডে যাবার আগে দুটো বড় ইনিংস খেলেছে। আপনি তো দীর্ঘদিন ধরে ওপেন করছেন, কিন্তু অন্যপ্রান্তে নিয়মিত ওপেনার চেঞ্জ হয়। এখনও পর্যন্ত আপনার একজন নিশ্চিত ওপেনিং সঙ্গী নেই। এটা মানসিকভাবে কোন সমস্যা সৃষ্টি করে কিনা? তামিমের কাছে এটা কোন সমস্যাই না, ‘পার্টিকুলার ম্যাচে তো এমন কোন সমস্যা করে না। কিন্তু যখনই আপনার একজন নিয়মিত ওপেনিং সঙ্গী থাকবে তখন যেটা হয়, আমরা দু’জনই আমাদের খেলাটাকে ভাল বুঝতে পারি আর কি। অনেক সময় হয়তো বা এমন থাকে যে, আমার টাইমিং ভাল হচ্ছে না। হয়তো আমি মারছি কিন্তু ফিল্ডারের কাছে চলে যাচ্ছে। তখন সে অতিরিক্ত চান্স নেবে। একইভাবে ওর সঙ্গে যদি এই জিনসটা হয় তবে আমার চান্স নিতে হয়। কিন্তু যদি কেউ নিয়মিত না হয়, তাহলে তাকে বলে কিছু করানো কঠিন যে ভাই, তুমি চান্স নাও। কারণ ওদেরও একটা প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তবে আমি নিশ্চিত, লিটন এ্যান্ড সৌম্য গট এনাফ চান্সেস। শিওর দিস ইজ দ্য রাইট টাইম টু শো দ্য ওয়ার্ল্ড হাউ গুড দে আর। সঙ্গে যোগ করেন, ব্যাটিংয়ের সময় পার্টনারকে রিড করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? তামিম উদাহরণ টেনে বললেন, ‘অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন একটা মানুষের সঙ্গে যে কোন কিছুতে, যে কোন পেশায়- আপনার পেশাতেই চিন্তা করেন না কেন, আপনি যদি একজন কলিগের সঙ্গে ২০ বছর ধরে কাজ করেন তাহলে সে আপনার পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারগুলো জানবে- সেইম গৌজ টু এভরি প্রফেশন। যারা বিশ্বের গ্রেটেস্ট ওপেনিং পার্টনার্স, হেইডেন-গিলক্রিস্ট, গাঙ্গুলী-শচীন, শেওয়াগ-শচীন, এদের মধ্যে দেখবেন একটা বোঝাপড়া থাকতো। আপনি যখন ওদের খেলা ম্যাচগুলো দেখবেন, আপনি মনে করবেন যে দে আর হ্যাভিং ফান ইন দ্য মিডল এ্যান্ড দে নো হোয়াট দ্য আদার ওয়ান্টস। এরকম সুযোগ দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের এখনও হয় নাই। বাট শিওর যে, যে দু’জন বিশ্বকাপে যাচ্ছে তারা বাংলাদেশের হয়ে আগামী ১০-১৫ বছর খেলার সামর্থ্য রাখে। ভাল একটা পারফর্মেন্স দেখানোর এটাই সেরা সময় বলে আমি মনে করি।
×