ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বোমা হামলাকারীরা শনাক্ত

প্রকাশিত: ১২:০৭, ২৫ এপ্রিল ২০১৯

বোমা হামলাকারীরা শনাক্ত

শ্রীলঙ্কায় গির্জা ও হোটেলে ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। নয় আত্মঘাতী এ বোমা হামলা চালায়। এদের মধ্যে দুজন স্বামী-স্ত্রী। বুধবার শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য জানায়। গত রবিবার ইস্টার সানডেতে তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলসহ অন্তত আট জায়গায় ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয়। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৫৯ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৫ শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। ন্যক্কারজনক এ হামলায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ৬০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। -খবর ওয়াশিংটন পোস্ট ও আইল্যান্ড অনলাইন। পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকারা বলেন, আত্মঘাতী আট হামলাকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুই ভাই ও স্বামী-স্ত্রী রয়েছে। পুলিশ রবিবার কলম্বোর একটি বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছলে তারা আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের উড়িয়ে দেয়। প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী বিজয়বর্ধনে সাংবাদিকদের বলেন, বোমা হামলাকারীরা কলম্বো ও নেগোম্বোর দুটি বাড়িকে নিরাপদ আস্তানা হিসেবে বেছে নিয়েছিল। হামলাকারী মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। তিনি আরও বলেন, হামলাকারীদের কেউ কেউ উচ্চশিক্ষিত। এদের মধ্যে একজন ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করেছে। গির্জা ও হোটেলে আত্মঘাতী বোমা হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইব্রাহিম একজন। কলম্বোর দেমাতোগোদায় তার নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। রবিবার ওই বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। আত্মঘাতী হামলাকারীদের মধ্যে অন্তত দুজন ব্যবসায়ী ইব্রাহিমের সন্তান। বিজয়বর্ধনে বলেন, বোমা হামলাকারীরা দেশের পূর্বাঞ্চলীয় ইসলামী চরমপন্থী গ্রুপ ন্যাশনাল তাওহিদ জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি বলেন, এই গ্রুপের প্রধান কলম্বোর শাংরি-লা হোটেলে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই হামলার দায়দায়িত্ব স্বীকার করেছে। তবে শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আইএসের ভূমিকার বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। বিজয়বর্ধনে বলেন, আদর্শিক দিক দিয়ে আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং তারা অর্থ সহায়তাও করে থাকতে পারে। তবে বিষয়টি এখনও তদন্ত করা হচ্ছে। বিজয়বর্ধনে আরও বলেন, শ্রীলঙ্কার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অনুমান হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে হামলা ইস্টার সানডেতে হামলা চালানোর জন্য তাদের প্ররোচিত করেছে। তবে কিভাবে তারা এ ধারণায় উপনীত হলো এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করতে তিনি অস্বীকৃতি জানান। বুধবারও দেশটিতে দুটি নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এর মধ্যে কলম্বোতে সন্দেহভাজন একটি মোটরসাইকেলে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। আর অন্য বিস্ফোরণটি ঘটানো হয় কানাতা শহরের একটি রেস্তরাঁর কাছে। সেখানে একটি সন্দেহজনক একটি প্যাকেটকে বিস্ফোরণ ঘটান নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা। জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুয়ান বিজয়বর্ধনে। তিনি বলেন, আরও অনেককে গ্রেফতার করা হবে। তিনি বলেন, ‘অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’ রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, জঙ্গীদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে ন্যাশনাল তাওহিদ জামায়াতের এমন ১৬০ সদস্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছে তারা। কিন্তু উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশনা না আসায় কাউকেই গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তদন্তে জানা গেছে, এর আগে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে, তারা আত্মঘাতী হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এরাই ইস্টার সানডেতে গির্জা ও হোটেলসহ আট জায়গায় আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে। সূত্র জানায়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও পুলিশকে জঙ্গীদের সম্পর্কে অবহিত করা হলেও তাদের গ্রেফতারে উচ্চপর্যায় থেকে তদন্তকারীদের কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি। ওয়ানাতাভিলুয়ার ৭৫ একর নারিকেল বাগানে জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। সেখানে গত জানুয়ারিতে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকেই ইসলামী চরমপন্থীদের সম্পর্কে জানা যায়। বুদ্ধমূর্তি ভাংচুরে জড়িত থাকার অভিযোগ গত ডিসেম্বরে মায়ানেল্লা থেকে সিআইডি বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। তাদের গ্রেফতারের পরই পুলিশ ওয়ানাতাভিলুয়ার প্রশিক্ষণ শিবির সম্পর্কে জানতে পারে। এক সন্দেহভাজনের এসএমএস থেকে তদন্তকারীরা ক্যাম্পটি শনাক্ত করতে সক্ষম হন। গত ১৬ জানুয়ারি সিআইডি বাগানের মাটির নিচ থেকে ১০০ কেজি শক্তিশালী সিফোর বিস্ফোরক, ছয় গ্যালন নাইট্রোজেন এবং ৯৯টি ডেটোনেটর উদ্ধার করে। তদন্তে দেখা গেছে, বোমা হামলা চালানোর জন্য জঙ্গীগোষ্ঠীর সদস্যরা অস্ত্র বহনের প্রশিক্ষণ নিয়েছে। সূত্র জানায়, ন্যাশনাল তাওহিদ জামায়াতের (এনটিজে) নেতা শাহাজান হাশিম প্রশিক্ষণ শিবিরে নিয়মিত যাতায়াত করতেন এবং নতুন যোগ দেয়া জঙ্গীদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিতেন। ওই প্রশিক্ষণ শিবিরে বোমাও বানানো হয়েছে।
×