ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জয়নুলে তিন প্রজন্মের আলোকচিত্রীর প্রদর্শনী শুরু

প্রকাশিত: ১১:১৯, ২৫ এপ্রিল ২০১৯

জয়নুলে তিন প্রজন্মের আলোকচিত্রীর প্রদর্শনী শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্যালারিতে প্রবেশ করেই চোখে পড়বে নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য, যার শিরোনাম দেয়া হয়েছে জীবন যেখানে যেমন। পাশেই রয়েছে পাখিদের ঝাঁক, যার শিরোনাম আলোচনাসভা। একইভাবে পর পর দেখা যাবে মোরগের লাড়াই, নৌকার হাল ধরে আছে এক মাঝি, শিশুদের ছোটাছুটি, গাছে চড়ে ছাগলের পাতা খাওয়ার দৃশ্যসহ বহু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছবি। যেগুলো ক্যামেরাবন্দী করেছেন প্রথিতযশা আলোকচিত্রী মাহবুবুজ্জামান। গ্যালারির অন্য প্রান্তে রয়েছে তারই সন্তান রাশিদ জামানের ক্যামেরায় তোলা সমসাময়িক নগরকেন্দ্রিক কিছু আলোকচিত্র। যার মধ্যে রয়েছে বহুতল ভবন নির্মাণের দৃশ্য, আগুনে পোড়া ভবন, তারকাঁটার বেড়া, যুদ্ধ বিমানসহ বেশ কিছু আলোকচিত্র। গ্যালারির মাঝে শোভা পাচ্ছে আরেক আলোকচিত্রী কাজী রওনাক হোসেনের ক্যামেরাবন্দী কিছু দুর্লভ আলোকচিত্র। এরমধ্যে রয়েছে ভুটানের সর্ববৃহত বৌদ্ধ মূর্তি, মাউন্ট এভারেস্ট, মোগল স¤্রাট বাহাদুর শাহ্ জাফরের সমাধী, মিয়ানমায়ের যুবক-যুবতীর একইসঙ্গে সাইকেলে আরহণ, গোধূলীর দৃশ্যসহ বেশ কিছু হৃদয়ছোঁয়া আলোকচিত্র। তিন প্রজন্মের এ তিন আলোকচিত্রীর ক্যামেরায় তোলা ছবি নিয়ে ‘গ্লিম্পসেস অব ফটোগ্রাফি’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে বুধবার বিকেলে। চার দিনব্যাপী এ আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর এমিরেটাস জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান, আলোকচিত্রী মাহবুবুজ্জামান, কাজী রওনাক হোসেন ও রাশিদ জামান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাঃ দীপু মনি বলেন, তিন প্রজন্মের আলোকচিত্রীর প্রদর্শনীতে আসতে পেরে খুবই ভাল লাগছে। আমি ছোট বেলা থেকে ছবি তুলতে পছন্দ করি। এটা সম্ভবত আমার বাবার কাছ থেকে পেয়েছি। কোন রকম ব্যাকরণ ব্যবহার না করেই ছবি তুলি। ছবি তোলা আমার ভাল লাগে এবং ছবি পছন্দ করি। কেন করি এটা বলা কঠিন। সভাপতির বক্তব্যে আনিসুজ্জামান বলেন, আলোকচিত্রে বাস্তবকে নিখুঁতভাবে ধরা যায়। ফটোগ্রাফির নানা কায়দার ফলে বাস্তবকে বিকৃত করে এখন ছবি তোলা হচ্ছে। সেখানে বাস্তব খুঁজে পাওয়া যায় না। আলোকচিত্র একটা শিল্প। তিন প্রজন্মের এই শিল্পীদের ছবিতে নতুন প্রজন্ম বেশি করে বাস্তব ছবির প্রতি আকৃষ্ট হউক এই প্রত্যাশা করি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চারুকলার ডিন বলেন, মাহবুবুজ্জামান ভাইয়ের সঙ্গে আমার তেমন পরিচয় না থাকলেও, ওনার আলোকচিত্র সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। রওনাক হোসেন কে আমি ভালভাবেই চিনি। আর মাহবুবুজ্জামান ভাইয়ের ছেলের সঙ্গে আমার সেভাবে পরিচয় না থাকলেও আলোকচিত্রের মধ্যদিয়ে পরিচয় ঘটল। চারুকলায় যারা পড়ালেখা করে তাদের প্রত্যেকে আলোকচিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত। রংয়ের যে সীমাবদ্ধতা আগের ছবিতে ছিল তার বৈচিত্র্য আনার জন্য টেক্সাসকে কাজে লাগিয়েছেন মাহবুবুজ্জামান ভাই। আমার খুব সুন্দর লেগেছে ছবিগুলো। তিনি যদিও নগরের মানুষ, তবুও তার প্রকৃতির প্রতি আকর্ষণ রয়েছে, এই ছবিগুলো তার প্রমাণ। বর্ষিয়ান আলোকচিত্রী মাহবুবুজ্জামান তার আলোকচিত্রজগতে প্রবেশের কথা তুলে ধরে বলেন, এত সুন্দর আমাদের দেশ। এর প্রকৃতি, গাছ-পালা, মাছ, প্রাণিসম্পদ, মাটির নিচের সম্পদ এই সবের প্রতি ভালবাসা আমার ছোটবেলা থেকে। এর প্রতি আমার প্রাণের টানেই আমি ছবি তোলা শুরু করি। বাংলার দৃশ্য এত সুন্দর কিন্তু এই বাংলাকে আমরা অনেকেই ভালবাসি না। যুগ যুগ ধরে লুটেরারা আমাদের দেশকে লুণ্ঠন করছে। এটা আমাকে খুব ভাবায়। আসুন আমরা সবাই মিলে একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলি। শুরুতে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, তিন প্রজন্মের তিন আলোকচিত্রীর ক্যামেরাবন্দী এ আলোকচিত্র পরবর্তী প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ১৯৫৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তিন জন আলোকচিত্রীর ৬০ আলোকচিত্র। এতে মাহবুবুজ্জামানের সাদা-কালো যুগের (১৯৫৩-৬৩) বেশ কিছু আকর্ষণীয় ছবি স্থান পেয়েছে। কাজী রওনাক হোসেনের ছবিগুলোতে স্থান পেয়েছে তার ভ্রমণকালীন বিভিন্ন দেশের নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী। রাশিদ জামানের ছবিগুলিতে রয়েছে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ভিন্ন আঙ্গিক। প্রদর্শনী চলবে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত এবং প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে।
×