ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এক্সাভেটর প্রবেশে বাধা সেতু

টঙ্গীতে ৫৫ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, থমকে গেছে অভিযান

প্রকাশিত: ১১:১৭, ২৫ এপ্রিল ২০১৯

টঙ্গীতে ৫৫ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, থমকে গেছে অভিযান

হাসান ইমাম সাগর ॥ টঙ্গী রেল সেতুতে থমকে গেল বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ অভিযান। সেতুর নিচ দিয়ে উচ্ছেদ অভিযানের এক্সাভেটর প্রবেশ করতে না পারায় উচ্ছেদ অভিযান থেমে যায়। বিভিন্ন পন্থায় বহুবার চেষ্টার পরও সেতু অতিক্রম করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতে টঙ্গী রেল সেতুর পশ্চিম প্রান্তে উচ্ছেদ অভিযান থামাতে বাধ্য হয় বিআইডব্লিউটিএ। তবে যে কোন উপায়ে আজ বৃহস্পতিবার ওই রেল সেতু অতিক্রম করে অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দীন। এদিকে বুধবার সকাল থেকে অভিযান চালিয়ে ৫৫ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। পৌনে দুই লাখ টাকায় নিলাম দেয়া হয়েছে একটি বালুর গদি। আব্দুল্লাহপুর-টঙ্গী সড়ক সেতুর পূর্বপাশ থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এ সময় একটি পাঁচতলা ও একটি চারতলা বাণিজ্যিক ভবন ভেঙ্গে দিয়ে এগিয়ে যায় বিআইডব্লিউটিএর এক্সাভেটর। পরে টঙ্গী রেল সেতুর কাছে এসে থেমে যায় অভিযান। সরেজমিনে দেখা যায়, তুরাগ নদের ওপর ঢাকা-টঙ্গী সংযোগকারী পরপর দুটি রেল সেতু। মাঝে বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদন ছাড়া চলছে আরেকটি সেতুর নির্মাণ কাজ। সেতুর নিচে দুইপাশ থেকে মাটি ফেলে নদীর অর্ধেকের বেশি অংশ ভরাট করা হয়েছে। এফকনস-কেপিটিএল কোম্পানি ওই সেতু নির্মাণের কাজ করছে। তারাই নদীর মাঝ বরাবর বাঁশের খুঁটি পুঁতে মাটি ফেলে বন্ধ করেছে নৌযান চলাচলের পথ। এছাড়া পানির স্তর থেকে যে উচ্চতায় সেতু নির্মিত হচ্ছে তাতে কোন মৌসুমে বড় ধরনের নৌযান চলাচল করতে পারবে না বলে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা জানান। ফলে বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তখনই নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। এ সময় আরও দেখা যায়, নদীর নাব্য না থাকায় রেল সেতুর পিলারের বেজমেন্ট পানির ওপরে ভেসে আছে। পিলার ছাড়া বেজমেন্ট দৈর্ঘ্য-প্রস্থে তিন-দুই মিটার বাইরে বের হয়ে আছে। ফলে দুই পিলারের মাঝে বেশি হলেও তিন থেকে চার মিটার ফাঁকা জায়গা রয়েছে। যার মধ্য দিয়ে পন্টুনসহ বিআইডব্লিউটিএর এক্সাভেটর কোন ক্রমেই প্রবেশ করা সম্ভব নয়। তাই উচ্ছেদ অভিযান ওখানেই থেমে যায়। এছাড়া রেল সেতুর পিলারের ওই বেজমেন্টের কারণে প্রায়ই নৌকা, ছোট ছোট ট্রলার বা নৌযানডুবির ঘটনা ঘটে বলে এলাকাবাসী জানায়। তাই এই সেতু ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণেরও দাবি জানান তারা। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, নদীর ওপর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের নতুন করে সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। সেতুগুলো বিদ্যমান সেতুর উচ্চতায় নির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাকার চারপাশে যে বৃত্তাকার নৌপথ তা ব্যবহারের একমাত্র অন্তরায় চার নদীর ওপর নির্মিত ১৩ সেতু। এই সেতুগুলোর জন্য কোন নৌযান চলাচল করতে পারছে না। আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি সেতুগুলো উঁচু করার জন্য। কিন্তু কোন মন্ত্রণালয় তা তো করেইনি বরং একই উচ্চতায় নতুন সেতু নির্মাণ করছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি ভবন রেড মার্কিং করার সত্ত্বেও আমরা ভাঙতে সক্ষম হতে পারছি না। তারা উচ্চ আদালত থেকে স্থগিত আদেশ নিয়ে এসেছে। অথচ এই উচ্চ আদালতের নির্দেশে গাজীপুরের চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিতে জেলা প্রশাসন, সেটেলমেন্ট, বিআইডব্লিউটিএসহ অনেকেই ছিলেন। সেই সিএমএম মহোদয় একটি রিপোর্ট পেশ করেছিলেন এই সব ভবন অবৈধ বলে চিহ্নিত করে। উচ্চ আদালত সেই রিপোর্ট গ্রহণ করে ওই অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গার নির্দেশ দিয়েছে এবং এটি এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদের করা একটি রিট পিটিশনে এই আদেশ দেয়া হয়। এখন দেখছি উচ্চ আদালতের আরেক বেঞ্চ থেকে ওই অবৈধ স্থপনা উচ্ছেদ স্থগিত করা হচ্ছে। ফলে এই উচ্ছেদ অভিযানে আমরা বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছি। এছাড়া নতুন সেতু নির্মাণের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, এখন নদীর পানি শুকিয়ে একেবারে তলায় নেমে পড়েছে। তারপরও আমরা এক্সাভেটর নিয়ে রেল সেতু অতিক্রম করতে পারিনি। বর্ষার মৌসুমে কোন নৌযানই চলাচল করতে পারবে না। তাই আমরা লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধের আবেদন করেছি।
×