ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দৃশ্যমান হচ্ছে রূপসা রেলসেতু

দ্রুত এগিয়ে চলছে খুলনা-মংলা রেল প্রকল্পের কাজ

প্রকাশিত: ১১:১৬, ২৫ এপ্রিল ২০১৯

দ্রুত এগিয়ে চলছে খুলনা-মংলা রেল প্রকল্পের কাজ

অমল সাহা, খুলনা অফিস ॥ খুলনা থেকে মংলা বন্দর পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। একই সঙ্গে রূপসা নদীর ওপর রেলসেতু নির্মাণে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে। কর্মী, শ্রমিক ও প্রকৌশলীদের কর্মতৎপরতায় মুখর পুরো সেতু এলাকা। নদী শাসন ও পাইলিংয়ের পর একে একে বসানো হচ্ছে পিলার। অর্ধশতাধিক স্প্যান স্থাপনের পর এখন দৃশ্যমান হয়েছে খুলনা-মংলা রেল লাইনের রূপসা রেলসেতু। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুলনা-মংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প। এটির কাজ সম্পন্ন হলে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। মংলা বন্দরে আরও গতি সঞ্চার হবে। এটি মংলা বন্দরের সঙ্গে খুলনা তথা সমগ্র বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ সৃষ্টি হবে। কম খরচে ভারত, নেপাল ও ভুটানে মালামাল পরিবহন সহজ হবে। বিভিন্ন স্থান থেকে দেশী-বিদেশী পর্যটকরাও সহজে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারবেন। জানা যায়, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) খুলনা-মংলা রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। পরে ২০১২ সালের নবেম্বর মাসে প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতের সিইজি নিপ্পন কোয়ি জেভি প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর রূপসা রেলসেতুর পাইলিংয়ের কাজের উদ্বোধন করেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ তোফাজ্জেল হোসেন। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) ও ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লারসেন এ্যান্ড টুব্রো রূপসা নদীর ওপর রেলসেতুর নির্মাণ কাজ করছে। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, খুলনা-মংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ তিন ভাগে বিভক্ত। এর একটি রূপসা নদীর ওপর রেলসেতু, অপরটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। প্রকল্পের আওতায় লুপ লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ। আর খানজাহান আলী সেতু (রূপসা সেতু) থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে রূপসা নদীর উপরে যুক্ত হবে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেলসেতু। এছাড়া ২১ ছোটখাট ব্রিজ ও ১১০ কালভার্ট নির্মিত হবে। এছাড়া খুলনার ফুলতলা থেকে মংলা পর্যন্ত ৮টি স্টেশন হচ্ছে। স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদ নগর, কাটাখালী, চুলকাঠি, ভাগা, দিগরাজ ও মংলা। খুলনা-মংলা রেল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে রেল লাইনের জন্য ১ হাজার ১৪৯ কোটি ৮৯ লাখ এবং সেতুর জন্য ১ হাজার ৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। বাকি টাকা জমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ করা হয়। এদিকে নির্মাণাধীন রেলসেতুর পশ্চিম পাড় (খুলনা সাইড) বটিয়াঘাটা উপজেলার পুটিমারী ও পূর্বপাড় খাপাবাদ (মংলা সাইড) এলাকায় দিনরাত অবিরাম চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। দিন যতই এগিয়ে যাচ্ছে রূপসার বুকে একের পর এক পিলার মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে। স্প্যানও বসানো হচ্ছে। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে চলছে বাংলাদেশে প্রথম সুপার স্ট্রাকচারের রেলসেতুর নির্মাণ কাজ। খুলনা-মংলা রেল লাইন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকল্প) মোঃ আব্দুর রহিম বলেন, প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সামগ্রিক প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৫২ শতাংশ। রেলসেতু প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৪০ ভাগের বেশি। তিনি বলেন, রেল লাইন স্থাপন এবং সেতু নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত মালামাল এসে গেছে। সেতুর কাজ দ্রুত চলছে। রেল লাইনের জন্য দেয়া মাটির বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় রেখে রেল পাটি ও সিøপার স্থাপনে কিছুটা সময় নিতে হচ্ছে। রেল লাইনের অন্য কাজ চলছে। ২০২০ সালের মধ্যে সমগ্র প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। রূপসা রেলসেতুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন ম্যানেজার সুব্রত জানা বলেন, অবিরাম গতিতে রূপসা রেলসেতুর কাজ চলছে। নদীর দু’পাড়ে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে। ইতোমধ্যে ৮৩৬টি পাইলের মধ্যে ৮৩১টির কাজ শেষ হয়েছে। পাইল ক্যাপ ১৩৬টির মধ্যে ৫৪টি, পিয়ার এ্যান্ড পিয়ার ক্যাপ ১৩৬টির মধ্যে ১২টির কাজ শেষ হয়েছে। সুপার স্ট্রাকচার গার্ডার-স্প্যান ১৩৬টির মধ্যে খুলনা পড়ে ৫৪টি বসানো হয়েছে। ইতোমধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ ৪০ ভাগের বেশি সম্পন্ন হয়েছে।
×