ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জায়ানসহ শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় প্রাণহানিতে প্রধানমন্ত্রীর তীব্র নিন্দা

অস্বাভাবিক কিছু পেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২৫ এপ্রিল ২০১৯

অস্বাভাবিক কিছু পেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশের কোথাও কোন অস্বাভাবিক কিছু পায়, সঙ্গে সঙ্গে যেন দেশবাসী তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানায়। আমরা জঙ্গীবাদ কঠোর হস্তে দমন করেছি। আমরা চাই না পৃথিবীতে এধরনের ঘটনা কোথাও ঘটুক। এসব ঘৃণ্য হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, সেসব সন্ত্রাসী-জঙ্গীদের কোন ধর্ম নেই, দেশকাল পাত্র নেই। জঙ্গী জঙ্গীই, সন্ত্রাসী সন্ত্রাসীই। দেশবাসীর কাছে আহ্বান, এই সন্ত্রাসী ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে মানুষ যেন জড়িত না হয়। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বোমা হামলায় নিহত শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি জায়ানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আরও বলেন, ওই ঘৃণ্য হামলায় শুধু জায়ান চৌধুরীই নয়, ৪০ জনের কাছাকাছি শিশুসহ প্রায় সাড়ে তিনশ’ মানুষ মারা গেছে। এই ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ ও বোমা হামলার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। আমি এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে, এর মধ্যে হামলাকারীরা কি অর্জন করছে জানি না। এই ছোট নিষ্পাপ শিশুতো কোন অপরাধ করেনি? তারা কেন এভাবে জীবন দেবে? কিছুদিন পূর্বেই নিউজিল্যান্ডের মসজিদে সরাসরি গুলিতে অনেক মানুষকে হত্যা করা হলো। সেখানেও নারী ছিল, শিশু ছিল। আমাদের ক্রিকেট টিমও ছিল। খুব অল্পের জন্য তারা বেঁচে গেছে। সন্ত্রাস জঙ্গীবাদ মানুষের কোন কল্যাণ আনতে পারেনি। ফেনীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মানুষ সৃষ্ট সন্ত্রাসও দেখেছি। নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করা হলো। সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল। এই ধরনের অমানবিক ঘটনাগুলো সত্যিই মানব জাতির জন্য অকল্যাণকর। তিনি বলেন, ইসলাম ধর্মের নামে যারা এসব কাজ করছে, ইসলাম যে শান্তির ধর্ম। সেই ধর্মকেই সকল মানব জাতির কাছে হেয়-প্রতিপন্ন করছে। সব ধর্মেই শান্তির কথা বলা আছে। তারপরেও কিছু লোক ধর্মীয় উন্মাদনার নামে মানুষের প্রতি আঘাত হানে, মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। যা মানবজাতির জন্য বেদনাদায়ক এবং কষ্টকর। তাই দেশবাসীর কাছে আমার আহ্বান, এই ধরনের ঘৃণ্য সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে মানুষ যেন জড়িত না হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের ষড়যন্ত্রকারীদেরও খুঁজে বের করা হবে ॥ বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের ঘৃণ্য কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িতরাই নয়, সহায়তাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। আওয়ামী লীগ চতুর্থবার সরকার গঠন করার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পূর্বে ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে অনেক তথ্য প্রকাশ পায়। এসব তথ্য হতে দেখা যায়, পরোক্ষভাবে দেশী-বিদেশী কিছু লোক ও সংস্থা বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। তাই এ নির্মম হত্যাকা-ের বিষয়ে অন্যান্য পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত করার জন্য একটি কমিশন গঠনের বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর যেসব খুনী বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে বা আশ্রয় গ্রহণ করে আছে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিতে বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। এখনও যে সব খুনী বিভিন্ন দেশে পালিয়ে এবং আশ্রয় গ্রহণ করে আছে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, পলাতক আসামী নূর চৌধুরী কিভাবে কানাডায় বসবাস করছেন সে সম্পর্কে তথ্য দিতে কানাডা সরকারকে বাধ্য করতে ফেডারেল কোর্ট অব জাস্টিসের আদালতে আবেদন করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ এ বিষয়ে আদালতে শুনানি সম্পন্ন হয়েছে। শুনানি শেষে বিষয়টি আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। পলাতক আসামি রাশেদ চৌধুরীকে আমেরিকা থেকে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মার্কিন বিচার বিভাগের দ্বারস্থ হতে আইনগত বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সেখানে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে টাস্কফোর্স কাজ করছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ॥ সরকার দলীয় অপর সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত দশ বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে পিঁয়াজ, ছোলা, চিনি, ভোজ্য তেল, খেজুর এবং ডালের চাহিদা বেড়ে যায়। আমরা চাহিদা অনুযায়ী এ সকল পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি করেছি। অসাধুচক্র যাতে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে মূল্যবৃদ্ধি করতে না পারে সে লক্ষে টিসিবির সক্ষমতা ও মজুদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং নিরলস প্রচেষ্টায় ইতোপূর্বে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যের সঙ্গে পবিত্র মাহে রমজান, ঈদ-উল-ফিতরসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টসহ সুন্দর ও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। জনগণ যাতে পবিত্র রমজান ও আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর পরিবার পরিজন নিয়ে নির্বিঘেœ উদযাপন করতে পারে সে লক্ষে আমরা তৎপর রয়েছি। সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রমজানকে সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ভেজালমুক্ত করতে সারাবছরই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালানো হচ্ছে, এটি অব্যাহত থাকবে। ২০০৯ সালে যখন ক্ষমতা গ্রহণ করি তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ডাবল ডিজিটে। আমরা দক্ষভাবে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। খাদ্য ভেজাল দেয়া অত্যন্ত জঘন্য কাজ। আমি আশা করি, যারা এসবের সঙ্গে জড়িত, তারা এ পথ থেকে সরে আসবে। জাসদের শিরীন আখতারে সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঈদকে সামনে রেখে রমজান মাসে হকাররা যাতে ফুটপাথের বদলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে ও সময়ে বসে কেনা-বেচা করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আগে কয়েকদফা কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থান দেয়া হলেও সেখানে হকাররা না বসে ফুটপাথ দখল করে। এটা যাতে না হয় সেজন্য সিটি কর্পোরেশন একটি নির্দিষ্ট স্থান ও সময়ে হকাররা বসতে পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। বিপদে-আপদে সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছি ॥ সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকা- সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর ওই ভবন পরিদর্শন করে। ভবন মালিক কর্তৃপক্ষকে অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ ব্যবস্থাদি নিশ্চিত করার জন্য নোটিস দেয়া হয়। কিন্তু এফ আর টাওয়ার কর্তৃপক্ষ ভবনের অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ সংক্রান্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তিনি বলেন, সন্তান হারানো পিতা-মাতা, স্বজন হারানো ভাই-বোন, পিতা হারানো সন্তানের কিংবা স্বামী হারানো স্ত্রীর কষ্টটুকু আমি তাদের মতো করেই অনুভব করি। আমি বুঝি স্বজন হারানোর কত যে কষ্টের, পায়ের নিচের মাটিটুকুও থাকে না। আমাদের সরকার এবং আমি জনগণের প্রয়োজনে সব সময় তাদের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়িয়েছি। এটা আমার উত্তরাধিকারের দায়বোধ। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মানবিক দৃষ্টান্তকে ধারণ করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সংসদ নেতা জানান, সম্প্রতি ভয়াবহ কয়েকটি অগ্নিকা-ের পর বহুতল ভবনসমূহের ইমারতের ব্যবহার, অনুমোদন অনুযায়ী ইমারতের তলার সংখ্যা, বর্তমানে ইমারতের তলার সংখ্যা, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃক প্রদত্ত উচ্চতা, কার পার্কিং, ইমারতের সেটব্যাক, সিঁড়ির সংখ্যা, অগ্নি নির্গমন সিঁড়ি, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা/যন্ত্র ও অতিরিক্ত ইনেটরিয়র ডিজাইন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য রাজউককে নির্দেশ দিয়েছি। রাজউক ২৪টি টিমের মাধ্যমে এ সকল বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। এ সংক্রান্ত তথ্য ও প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিশ্বে উচ্চ মর্যাদার আসনে বাংলাদেশ ॥ সংসদ সদস্য মোজাফফর হোসেনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন ও আত্মমর্যাদা বোধ সম্পন্ন কূটনীতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ সমৃদ্ধ বলিষ্ঠ পররাষ্ট্রনীতির অনুসরণে দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নসহ দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার কার্যকর ভূমিকা রাখছে। যার ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ আজ সম্মানজনক ও উচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্য এখন সর্বজনবিদিত। তিনি বলেন, বিগত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের দূরদর্শী, দায়িত্বশীল পররাষ্ট্রনীতি এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব অঙ্গনে অতীতের যে কোন সময়ের থেকে একটি সফল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতায় দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক পরিম-লে আমাদের পদচারণা সুসংহত হয়েছে।
×