ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নাতির স্মৃতিবিজড়িত শেখ সেলিমের বাসায় কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রীও

নিষ্পাপ জায়ানকে চোখের জলে বিদায়, শেখ সেলিমের বাসায় মাতম

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ২৫ এপ্রিল ২০১৯

নিষ্পাপ জায়ানকে চোখের জলে বিদায়, শেখ সেলিমের বাসায় মাতম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আট বছরের নিষ্পাপ যে শিশুর শ্রীলঙ্কা ঘুরে এসে বিদেশ দেখার গল্প বলার কথা ছিল, সেই ছোট্ট জায়ান ফিরল কফিনে বন্দী হয়ে। শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলায় শত শত মানুষের মতো তার মৃত্যু দেশের মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। তাই তো জায়ানের মরদেহ শাহজালাল বিমানবন্দরে আসার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে কান্নার রোল পড়ে যায়। কষ্ট আর বেদনার সেই মাতম ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। জায়ানের মৃত্যু শোকে পাথর হয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। জায়ানকে নিয়ে নানি শেখ হাসিনারও রয়েছে নানা স্মৃতি। তাই তো বিমানবন্দরে নেমেই জায়ানের নানা শেখ সেলিমের গায়ে হাত বুলিয়ে নিজের কষ্ট আড়ালের চেষ্টা করছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ সেলিমের বাড়িতে গেলে রীতিমতো আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। গগনবিদারী আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে সেখানকার আকাশ-বাতাস। গত ২১ এপ্রিল সকাল পৌনে নয়টার দিকে শ্রীলঙ্কার তিনটি গির্জা, তিনটি বিলাসবহুল হোটেল ও দুটি স্থাপনায় ভয়াবহ আত্মঘাতী সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহতদের মধ্যে ৩৮ বিদেশী। পরে হামলার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন আইএস (ইসলামিক স্টেট)। হামলায় শেখ সেলিমের নাতি জায়ান চৌধুরী নিহত হয়। আহত হন জায়ানের বাবা মশিউল হক প্রিন্স। ছোট্ট জায়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিমের একমাত্র মেয়ে শেখ আমেনা সুলতানার (শেখ সোনিয়া) ছেলে। জায়ান বাবা-মা আর একমাত্র ভাই জোহান চৌধুরীর সঙ্গে শ্রীলঙ্কায় ঘুরতে গিয়েছিল। ওরা উঠেছিল শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে। যে তিনটি হোটেলে সিরিজ বোমা হামলা হয়, তার একটিতে ছিল জায়ানরা। ঘটনার সময় জায়ানের পিতা ছেলেকে নিয়ে হোটেলের নিচে নাস্তা করতে গিয়েছিলেন। বোমা হামলায় ঘটনাস্থলেই নিষ্পাপ জায়ানের দেহ নিথর হয়ে পড়ে। আর জায়ানের বাবার দুটি পা মারাত্মক আহত হয়। তিনি কলম্বোতে চিকিৎসাধীন। বুধবার দুপুর পৌনে একটার দিকে লঙ্কান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ছোট্ট জায়ানের মরদেহ কফিনে বন্দী হয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয়। শেখ সেলিমসহ পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজনসহ উপস্থিত সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। তাদের গগনবিদারী আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে যায়। দুপুর দেড়টার দিকে একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে জায়ানের মরদেহ শেখ সেলিমের বনানীর ২/এ-এর ৯ নম্বর বাড়িতে আনা হয়। এদিকে জায়ানের মরদেহ বনানী নেয়ার খবরে আত্মীয়স্বজন ছাড়াও দলীয় শত শত নেতাকর্মী সেখানে ভিড় করেন। সবার চোখেই পানি। জায়ানের মরদেহ বনানী নেয়ার পর শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। জায়ানকে শেষবারের মতো দেখতে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, বিএম মোজ্জামেল হক, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের হাজারো নেতাকর্মী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুপুর পৌনে দুইটার দিকে অনেক স্মৃতির সাক্ষী সেই নিষ্পাপ আর দুরন্ত জায়ানকে দেখতে শেখ সেলিমের বাড়িতে যান। শেখ হাসিনা সেখানে যাওয়ার পর উপস্থিত মানুষের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়। শেখ হাসিনাও দুরন্ত জায়ানের পুরনো মুখ স্মৃতি মনে করে মনের অজান্তেই আবেগাপ্লুত হন। এক পর্যায়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন। শেখ সেলিমসহ পরিবারের সদস্যদের সান্ত¡না দিতে গিয়ে নিজেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শেখ হাসিনা। মুখের ভাষা হারিয়ে যায়। শেখ সেলিমও তখন অঝোরে কাঁদছিলেন ছোট্ট নাতি কথা মনে করে। জায়ান শেখ সেলিমের কাছে বনানীর এই বাড়িতেই থাকত। এজন্য তাকে নিয়ে অনেক স্মৃতি। জায়ানের দেশে ফিরে শ্রীলঙ্কার গল্প করার কথা ছিল পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে, তা আর হলো না। কফিনে বন্দী হয়ে এলো নিষ্পাপ জায়ান। বৈশ্বিক রাজনীতি আর জঙ্গী সন্ত্রাসীদের চালানো সন্ত্রাস কেড়ে নিল নিষ্পাপ জায়ানকে। সেই সঙ্গে কেড়ে নিল বাবা-মা পরিবারের অনেক স্বপ্ন আর সাধ। এদিকে ঘটনার পর থেকেই বনানীর বাড়িতে চলছে পবিত্র কোরান খতম। বিশেষ দোয়াসহ নানা ধর্মীয় জায়ানের স্মৃতিবিজড়িত রীতিনীতি। বাড়ির কাছে বনানী চেয়ারম্যান বাড়ির মাঠেই জানাজা হয় জায়ানের। এর আগে বনানী কবরস্থানে দাফনের আয়োজন করা হয়। আসরের নামাজের পর জায়ানের মরদেহ দাফন করা হয় বনানী করবস্থানে। জায়ানের পবিরার জানায়, জায়ান ছোট বেলাতেই সুরা ইয়াসিন, সুরা রহমান, আয়াতুল কুরসিসহ বিভিন্ন দোয়া শিখেছিল। জায়ানের দাদার বাড়ি সিলেটের সুনামগঞ্জের ভাটিপাড়ায়। জায়ানের দাদা সুনামগঞ্জের খ্যাতিমান ব্যক্তি এম এইচ চৌধুরী। জায়ান ছিল শেখ সোনিয়ার বড় ছেলে। জায়ান চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীরভাবে শোক প্রকাশ করেছেন আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক এমপি। এক শোক বার্তায় তিনি নিষ্পাপ শিশু জায়ানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
×