ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহী অঞ্চলে বাম্পার ফলনের আশা

উঁকি দিচ্ছে রসালো লিচুর গুঁটি, রঙিন স্বপ্নে বিভোর চাষী

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ২৪ এপ্রিল ২০১৯

উঁকি দিচ্ছে রসালো লিচুর গুঁটি, রঙিন স্বপ্নে বিভোর চাষী

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ সুমিষ্ট আমের জন্য প্রসিদ্ধ রাজশাহী হলেও এখানকার রসালো ফল লিচুর কদরও বেশি। শুধু আম নয়, বিখ্যাত রাজশাহীর লিচুও। স্বাদে আলাদা লিচুও এখন রাজশাহীর বাগানে গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে শোভা পাচ্ছে। ক্রমেই গাছে গাছে বড় হচ্ছে লিচুগুটি। ইতোমধ্যে কয়েক দফা বৃষ্টি হওয়ায় লিচু চাষীরা এখন গাছের লিচু নিয়ে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন। এ বছর লিচুর বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষী ও কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার লিচুর উৎপাদন হবে ভাল। তবে এ জন্য চাষীদের গাছ পরিচর্যায় হতে হবে আন্তরিক। এ কারণে চাষীরাও রয়েছেন গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত। এরই মধ্যে ফুল থেকে কেবল গুটিতে পরিণত হয়েছে লিচু। সবুজ সেই গুটিতেই রঙিন স্বপ্ন দেখছেন রাজশাহীর চাষীরা। তারা বলছেন, ফুল থেকে গুটি হতে খানিকটা সাহায্য করেছে হালকা বৃষ্টি। বৃষ্টিতে প্রাণবন্ত রয়েছে লিচুর গুটিগুলো। অন্য বছরের মতো এবার অতিরিক্ত তাপমাত্রায় লিচুর গুটি পুড়ে যাচ্ছে না, ঝরেও পড়ছে না। তাই লিচুতে এবার তারা ভাল ফলনেরই আশা করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা ও ফল গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরাও একই কথা বলছেন। তাদের বক্তব্য আবহাওয়া এবার লিচু চাষের উপযোগী। লিচুর ফুল থাকাকালে একবার শিলাবৃষ্টি ছাড়া ক্ষতি হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। সামনের দিনগুলোতে প্রকৃতি সহায় থাকলে লিচুতে মুনাফা করবেন চাষীরা। আর সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যেই বাজারে উঠবে মনজুড়ানো টসটসে লাল লিচু। রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালী এলাকার লিচুচাষী আনোয়ার হোসেন জানান, এক বিঘা জমিতে তার ৩০টি লিচুর গাছ রয়েছে। এবার লিচুর প্রচুর মুকুল এসেছিল। কিন্তু কিছু ফুল ঝরে পড়েছিল। তারপরও এখন যে পরিমাণ লিচুর গুটি গাছে রয়েছে সেগুলো শেষ পর্যন্ত ঝরে না পড়লে তিনি লাভবান হবেন। তাই এই মুহূর্তে তিনি লিচু গাছের পরিচর্যায় কোন ঘাটতি রাখছেন না। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল আলীম বলেন, সাধারণত হালকা ঠা-া আবেশে লিচুর ফুল ভাল হয়। আর ফুল ফোটার পর বৃষ্টি না হলে তা ঝরেও পড়ে না। এবার ফুল আসার সময় আবহাওয়া ঠা-াই ছিল। তখন বৃষ্টিতে কিছু ফুল ঝরে পড়লেও পর্যাপ্ত গুটি এসেছে। অন্য বছরের মতো এবার গুটি রোদে পুড়ে যাচ্ছে না। লিচুর জন্য এখন কেবল তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার লিচুর বাম্পার ফলন হবে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, জেলায় এবার ৪৮০ হেক্টর জমিতে লিচুবাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টরে সাড়ে চার টন করে তারা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন। প্রতিটি বাগানের গাছগুলোতে এখন থোকায় থোকায় লিচুর সবুজ গুটি ঝুলে আছে। যার শোভায় সবুজ প্রকৃতি আরও সবুজ হয়ে উঠেছে। তারা আশা করছেন লিচুর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। শামসুল হক বলেন, গত কয়েক বছরে আমের পাশাপাশি লিচু চাষ করেও জেলার অনেক চাষী স্বনির্ভর হয়ে উঠেছেন। তাই লিচুর নতুন নতুন বাগান গড়ে উঠছে। বাগান ছাড়াও বসতবাড়িতে দেশী লিচুর পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল চায়না-৩, বোম্বে ও মাদ্রাজি জাতের লিচু চাষ হচ্ছে। এখন জেলার পবা, গোদাগাড়ী, বাগমারা, বাঘা, চারঘাট, পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলায় আগের চেয়ে বেশি লিচু চাষ হচ্ছে। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগরীর ছোটবনগ্রাম, কাটাখালী, বুধপাড়া, রায়পাড়া, কাশিয়াডাঙ্গা ও বুলনপুর এলাকাতেও বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষ শুরু হয়েছে। চাষীদের মধ্যে এ ফলটির চাষ ইতোমধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে রাজশাহীতে দুই শতাধিক লিচু বাগান হয়েছে। বাগান ছাড়াও বসতবাড়িতে দেশী লিচুর পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল লিচু চাষ হচ্ছে। প্রতিটি বাগানের গাছগুলোতে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে লিচুর গুটি। চাষীরা জানিয়েছেন, গাছের গুটি এরই মধ্যে বড় হতে শুরু করেছে। তাই গুটি টিকিয়ে রাখতে তারা বিভিন্ন রাসায়নিক ওষুধ স্প্রেসহ পরিচর্যার কোন ত্রুটিই রাখছেন না।
×