ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কায় পারলেও জঙ্গীরা এদেশে পারবে না ॥ মনিরুল

প্রকাশিত: ১১:১৬, ২৪ এপ্রিল ২০১৯

শ্রীলঙ্কায় পারলেও জঙ্গীরা এদেশে পারবে না ॥ মনিরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ হামলা করতে সক্ষম হলেও জঙ্গীরা এদেশে কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না। বিশ্বজুড়ে ঝিমিয়ে পড়া উগ্রবাদীদের সজাগ করার আশঙ্কা থাকলেও বাংলাদেশে এরা কিচ্ছু করতে পারবে না। তারা মনে করতে পারে, কিছু করব। কিন্তু বাংলাদেশে সুসংগঠিতভাবে কোন ধরনের ঘটনা ঘটানোর সক্ষমতা তাদের নেই। শ্রীলঙ্কার উদারহরণ টেনেও জঙ্গীরা কাউকে উৎসাহিত করতে পারবেনা। এভাবেই মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে জঙ্গী হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। ‘মিট উইথ মনিরুল ইসলাম’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব)। এতে অংশ নেন রাজধানীতে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ক্রাইম রিপোর্টাররা। সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় হামলার ঘটনাও বিশ্বে বিভিন্ন দেশে উগ্রবাদীদের সজাগ করতে পারে। দেশে কারও কারও মনে আসতে পারে, আমরা কিছু করব। কিন্তু কারও পক্ষে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাংগঠনিক সক্ষমতা নেই। যারা আছে, তারা বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ভবিষ্যতেও যেন কোন গোষ্ঠী প্রস্তুতি নিয়ে কোন ধরনের নাশকতা চালাতে না পারে এমন তৎপরতারও চলছে। এক দেশের ঘটনায় অন্য দেশের সন্ত্রাসী সজাগ হতে পারে। কিন্তু আমরাও সতর্ক। হলি আর্টিজান হামলার পর ইন্দোনেশিয়ার একটি গোষ্ঠী উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের মধ্যে প্রচার চালিয়েছিল। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডে হামলার পর কিছু গোষ্ঠী তাদের নিজেদের চ্যানেলগুলোতে খ্রীস্টান বা ইহুদীবিরোধী প্রচারে তৎপর হতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, হলি আর্টিজান হামলার পর বিভিন্ন দেশ ভেবেছে আমরা ঠেকাতে পারব না। কিন্তু সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি এবং সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় জঙ্গীবাদ নিয়ন্ত্রণ করা গেছে, কিন্তু নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গীবাদ যেহেতু একটা মতবাদ, তাই কেউ না কেউ এই মতাদর্শের থেকেই যায়। যারা এই মতবাদের, তাদের অনেককেই ইতোমধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে বা অনেকে নজরদারিতে রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, শ্রীলঙ্কায় দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গৃহযুদ্ধ ছিল। এলটিটি নামে একটি সুইসাইডাল বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ তৎপর ছিল সেখানে। গতবছর সর্বশেষ শ্রীলঙ্কায় যে দাঙ্গাটি হয়েছিল, সেটি বৌদ্ধ এবং মুসলমানদের মধ্যে। এছাড়া এলটিটি কখনও কোন ধর্মীয় গোষ্ঠীকে টার্গেট করে হামলা চালায়নি। তাদের টার্গেট গবর্নমেন্ট মেকানিজমে যারা রয়েছে, তারা। কিন্তু শ্রীলঙ্কার গির্জা এবং হোটেলে যে হামলাটি হয়েছে, এটি নিঃসন্দেহে সন্ত্রাসবাদ। নিউজিল্যান্ড হামলার পর বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার উগ্রবাদী সংগঠনগুলো খ্রীস্টানদের ওপর ক্ষিপ্ত হতে দেখা গেছে। শ্রীলঙ্কায় খ্রীস্টানদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা হয়েছে, আর এটার ইমপ্যাক্ট বাড়ানোর জন্য হোটেলগুলোতে হামলা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মনিরুল ইসলাম বলেন, হামলায় সাধারণত কোন গোষ্ঠীর নেতা পর্যায়ের লোক অংশ নেন না। কিন্তু এখানে তাওহিদ জামাতের নেতৃত্ব পর্যায়ের একজন সরাসরি হামলায় অংশ নিয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং তিনি নিহত হয়েছেন। গত ১১ এপ্রিল সরাসরি তাওহিদ জামাতের নাম উল্লেখ করে গির্জা এবং ভারতীয় মিশনে হামলা চালাতে পারে বলে একটি গোয়েন্দা রিপোর্ট দেয়া হয়েছিল। যারা হামলা চালিয়েছে, তারা সবাই সে দেশের নাগরিক বলে জানা গেছে। তবে হামলার যে ধরন এবং টার্গেট পর্যালোচনা করে বোঝা যায়, সেখানে বাইরের কোন গোষ্ঠীর ইন্ধন রয়েছে। তিনি বলেন, মালদ্বীপ থেকে একটা বড় সংখ্যার লোক আইএসে যোগ দিয়েছে। মালদ্বীপের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার নৌপথে যোগাযোগ রয়েছে। এছাড়া তাওহিদ জামাতের একটা অংশও আইএসের বায়াত নিয়েছিল। তবে হামলাকারীদের মধ্যে তাদের কেউ ছিল কি-না এখন বলা মুশকিল। শ্রীলঙ্কার হামলা কারা চালিয়েছে বলে মনে করেন- সাংবাদিকদের প্রশ্নে মনিরুল বলেন, শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল তাওহিদ জামাত হামলা চালালেও এর পেছনে আন্তর্জাতিক কোন সংগঠন যুক্ত বলে মনে হচ্ছে। হামলার ধরন, টার্গেট করার ধরন, ছবি আমরা দেখেছি এবং আমাদের কাছে কিছু তথ্যও ছিল। আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটি আসলে -এমনটি হতে পারে হামলার ধরন ও লক্ষণ, এত বড় সিনক্রোনাইজড হামলা। শ্রীলঙ্কায় দীর্ঘদিন গৃহযুদ্ধ চলায় এই ধরনের হামলা চালানোর উপাদান সেখানে থাকলেও বাইরের শক্তির ইন্ধন থাকতে পারে। আমরা মনে করি, টেরোরিস্টদের ভেতরে তো একটা যোগাযোগ থাকে, সেক্ষেত্রে যোগাযোগটা হয়তো বা হয়েছে।
×