ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তুরাগের দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শেষের দিকে

প্রকাশিত: ১১:০১, ২৪ এপ্রিল ২০১৯

তুরাগের দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শেষের দিকে

হাসান ইমাম সাগর ॥ তুরাগ নদের দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান প্রায় শেষের দিকে। এর পর শুরু হবে বালু নদী। রমজানের আগে আরও পাঁচ কার্যদিবস চলবে অভিযান। ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার নৌপথ, পরিবেশগত ভারসাম্য ও চার নদীকে বাঁচাতে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এতে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। চলমান অভিযান শুরুর আগেই জরিপ কার্য পরিচালনা করেন বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা। এরপর দুই তিন দিন আগে থেকে দেয়া হয় নোটিস। লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করা হয় নদীর সীমানা। এর পর সকল প্রস্তুতি শেষে সপ্তাহের মঙ্গলবার থেকে টানা তিন দিন চালানো হয় অভিযান। নীরবচ্ছিন্নভাবে অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান ও যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দীন। সহকারী পরিচালক নূর হোসেন ও মোঃ রেজাউল করিম দুই জন থাকেন দুইটি এক্সেভেটর নিয়ন্ত্রণে। সঙ্গে থাকেন জরিপ পরিচালনাকারী ও অন্যান্য কর্মকর্তরা। মাঝে মাঝে পরিদর্শনে আসেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএর উর্ধতন কর্মকর্তা। এ পর্যন্ত ৩১ কার্যদিবন অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এতে উচ্ছেদ করা হয়েছে তিন হাজার এক’শ পঁচাত্তরটি। এতে প্রায় ৮১ একর নদীর জায়গা নদী ফিরে পেয়েছে। নিলামের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়েছে ৪ কোটি পাঁচ লাখ আটাত্তর হাজার টাকা। জরিমানা করা হয়েছে তিন লাখ পঁচাশি হাজার টাকা। মূলত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালুনদীর পূর্বের অবস্থা ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় চলছে এই অভিযান। মঙ্গলবার ৩য় পর্বের ৩য় পর্যায়ের প্রথম দিনে ব্যাপক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে বিআইডব্লিউটিএ। এতে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান ও বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দীন। অভিযানে এক’শ তেরোটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। উত্তরার ১০ নং সেক্টরের কাছে তুরাগ পাড়ের স্লুইসগেট বাজার থেকে আপস্ট্রিমে আব্দুল্লাহপুর সেতু পর্যন্ত অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় নদীর উভয় পাড়ে একটি বাজারের কিছু অংশসহ আবাসিক ভবন ও বহুসংখ্যক টিনের ঘর ভেঙ্গে দেয়া হয়। তবে এই দিনের অভিযানে বহুতল ভবন ভাঙ্গা হয়েছে ২৬টি। এতে টঙ্গী বাজার মসজিদ প্লাজা মার্কেট নামে একটি পাঁচতলা ভবনসহ মোট দুইটি পাঁচ তলা ভবন ভেঙ্গেচুরে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়া চার তলা ৪টি, তিন তলা ৬টি, দোতলা ৮টি, একতলা ৬টি, আধা পাকা ১২টি, টিনশেড ১২টি, বাউন্ডারি ওয়াল ২টি ও টিনের ঘর ৬১টি উচ্ছেদ করা হয়। অভিযান চলাকালে তিনটি বালুর গদিও নিলাম দেয় বিআইডব্লিউটিএ। এতে নিলামে বিক্রি হয় ১৪ লাখ ২৮ হাজার টাকার জব্দ করা বালু। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের রিট পিটিশন ৩৫০৩/২০০৯ অনুয়ায়ী উচ্চ আদালতের নির্দেশে মোতাবেক এই অভিযান চলছে। এই আইনে বলা হয়েছে, বর্তমানে চারটি জেলায় সংশ্লিষ্ট নদীগুলোর অভ্যন্তরে অবৈধ দখলদার কর্র্র্তৃক নির্মিত ও নির্মাণাধীন সকল স্থাপনা অপসারণের যে কার্যক্রম চলছে তা অব্যাহতভাবে চলতে থাকবে। নদীর অভ্যন্তরে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের ব্যাপারে কোনরূপ ব্যতিক্রম চলবে না। অবৈধ স্থাপনা যারই হউক না কেন এবং সে যত বড় শক্তিশালীই হোক না কেন এবং সে যে গোষ্ঠীরই হোক না কেন বৈষম্যহীন এবং ব্যতিক্রম ছাড়া তা অপসারণ করতে হবে। এদিকে বিআইডব্লিউটিএ’র উচ্ছেদ অভিযানে জব্দ মালামাল প্রায় সময় নিলাম সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে। এতে প্রকৃত মূল্য থেকে অনেক কম দামে নিলাম দিতে হয় জব্দ মালামাল। নিলামে তুলে একটি চক্র সিন্ডিকেট তৈরি করে মালের দাম কমিয়ে ফেলে। প্রভাব খাটিয়ে, ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে অন্য নিলাম গ্রহীতাদের নিলামে অংশগ্রহণ করতে বাধা সৃষ্টি করছে ওই সিন্ডিকেট বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কয়েকটি বালুর গদি নিলাম দেয় বিআইডব্লিউটিএ। নিলাম দুই লাখ থেকে শুরু হয়ে ৩৭ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। নিলাম শেষে এক পর্যায়ে নিলাম গ্রহীতাদের মধ্যে সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে নিলামে ডাক বাড়ানো নিয়ে মারামারি লেগে যায়। পরে নির্বাহী হাকিমের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দুপুর দুইটার পর নিলাম না দেয়ায় ভাল। কারণ প্রচ- গরমে সবার মধ্যেই উত্তেজনা বিরাজ করে।
×