ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কারে কচ্ছপগতি, শেষ হয়নি দেড় বছরেও

রাজশাহী-নওগাঁ সড়কে দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ১১:৪০, ২৩ এপ্রিল ২০১৯

রাজশাহী-নওগাঁ সড়কে দুর্ভোগ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ বিলম্বিত সংস্কার কাজের কারণে গুরুত্বপূর্ণ রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক এখন মহাদুর্ভোগের সড়কে পরিণত হয়েছে। সংস্কারের জন্য পুরো সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ওই সড়কে এখন চলাচলই দায় হয়ে গেছে। ফলে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ওই পথের যাত্রীরা। কোন কোন অংশে কাজের মেয়াদ শেষ হলেও খোঁজ নেই ঠিকাদারের। কচ্ছপ গতিতে চলছে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক বর্ধিতকরণ নির্মাণ কাজ। দীর্ঘদিন ধরে কাজ শেষ না হওয়ায় এই রাস্তার প্রায় সাড়ে ২১ কিলোমিটার অংশ এখন মহাদুর্যোগের পথে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে ঠিকাদারদের প্রায় ২৩৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সড়কে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাঝেও। এ সড়ক সংস্কারে ঠিকাদারদের গাফিলতির কারণে সওজ বিভাগও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। কয়েকদিন আগে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার চৌদ্দমাইল মোড় থেকে নওগাঁর মান্দার সাবাইহাট পর্যন্ত কার্পেটিং হলেও দেখা দিয়েছে ফাটল। তবে পরে দ্রুত সংস্কার করে নেন ঠিকাদার। এই অংশের কাজ করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিনুল হক এন্টারপ্রাইজ। যদিও কাজ চলমান দাবি করেছেন ঠিকাদার আমিনুল হক। তিনি বলেন, ওই স্থানে অল্প একটু ফাটল দেখা দিলেও আমরা সেটি ঠিক করে দিয়েছি। কাজ এখনও শেষ হয়নি। আরেকটি কার্পেটিং হবে। কাজেই এই অবস্থায় ছোটখাটো সমস্যা থাকতেই পারে। কাজ করতে গেলে এমন সমস্যা হতেই পারে। সেটি বড় কিছু নয়। এদিকে সড়কটির রাজশাহীর অংশেই সবচেয়ে অনিয়মের ছোঁয়া লক্ষ্য করা গেছে। নওহাটার পর থেকে একেবারে কামারপাড়া পর্যন্ত রাস্তাটিতে শুধু খোয়া ফেলে রেখে দীর্ঘদিন ধরে চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। নি¤œমানের খোয়া ও পাথরগুলো এরই মধ্যে উঠে যেতে শুরু করেছে। এতে করে রাস্তাটির কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কাদা-পানি আবার বৃষ্টি শেষে ধুলাবালিতে ভরে যাচ্ছে। প্রতিদিন এই রাস্তায় পাঁচবার পানি দিয়ে ভিজানোর কথা থাকলেও দুইবারের বেশি দেয়া হচ্ছে না। নওহাটার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, এই রাস্তা দিয়ে এখন যেতেই ভয় লাগে। মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেল ধরে রাখা যায় না। রাস্তা বর্ধিতকরণের নামে কাজ বিলম্বিত করায় গত দুইমাসে মোটরসাইকেলের চাকার চারটি টিউব পাল্টাতে হয়েছে। কখনও ধুলা আবার কখনও কাদা-পানিতে একাকার হয়ে থাকে সবসময়। এতে করে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়। রাস্তার নির্মাণকাজ ফেলে রাখায় আর্থিক-মানসিক কষ্টও বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষ ও যানবাহনের। এখন রাজশাহীর এই অংশে সহজে মানুষ রাস্তাটিতে যেতে চান না। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয়নি। উল্টো ঠিকাদারের লোকজন নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। ফলে কেউ আর প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। এখন কাজ ফেলেই পালিয়েছে ঠিকাদার। ফলে সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। রাস্তার পাশে বাড়ি হওয়ায় ধুলা গিয়ে ঘরে ঢুকছে। আবার কাদা-পানিতেও রাস্তায় বের হওয়া যায় না বৃষ্টি হলে। রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, প্রায় ৪৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কটির ৭৮ কিলোমিটার বর্ধিতকরণ কাজ চলছে। ১২টি প্যাকেজে ভাগ করে এই কাজটির টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এরমধ্যে চারটি কাজই পেয়েছেন আমিনুল হক এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর দুটি করে কাজ পেয়েছে রাজশাহীর ওয়াহেদ কন্সট্রাকশন, ডন কন্সট্রাকশন, ঢাকার কামাল এ্যাসোসিয়েট কন্সট্রাকশন এবং একটি করে কাজ পেয়েছে তূর্ণা কন্সট্রাকশন ও প্যারাডাইস কন্সট্রাকশন। গত দেড় বছর ধরে কাজটি চলছে। জনপথ বিভাগের যৌথ তত্ত্বাবধানে কাজটি হচ্ছে। কিন্তু কাজ পেয়েও সামান্য কিছু অংশ করে কোন কোন ঠিকাদার হয়ে আছেন লাপাত্তা। জানা গেছে, রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কটি ৭ দশমিক ৩ মিটার চওড়া থেকে ১০ দশমিক ৩ মিটার চওড়াকরণ কাজটি শুরু হয় দেড় বছর আগে। এর মধ্যে দুটি প্যাকেজে কাজ করছেন ওয়াহেদ কন্সট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তিনি সর্বমোট দুটি প্যাকেজ ৫০ কোটি টাকার কাজ করছেন। এর মধ্যে ২৫ কোটি টাকা তিনি উত্তোলন করেছেন। তার দুটি কাজের মেয়াদের বাকি আর মাত্র ১০ দিন। শেষ হবে চলতি এপ্রিলেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত রাস্তা কার্পেটিং কাজ শুরু হয়নি। বেশকিছুদিন আগে এই অংশে শুধুমাত্র খোয়া ঢালাই করে রেখে দেয়ায় দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে বেশি। রাজশাহী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুজ্জোহা বলেন, একজন ঠিকাদারকে নিয়ে আমরা চরম বিপদে আছি। তার কাজ শেষ হওয়ার মাত্র কয়েকদিন বাকি আছে। কিন্তু তিনি রাস্তাটি কার্পেটিং করার কোন উদ্যোগ নেননি। এতে জনদুর্ভোগ চরমে আকার ধারণ করেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘রাস্তাটির কাজ শেষ না হওয়ায় সাধারণ মানুষের নানা কথা শুনতে হচ্ছে। তিনি নিজেও এ সড়ক সংস্কার কাজের কচ্ছপগতি নিয়ে বিপাকে আছেন মন্তব্য করে বলেন, বিষয়টি প্রশাসন ও প্রকৌশলীকে জানিয়েছি। প্রয়োজনে ঠিকাদার পরিবর্তন করে হলেও রাস্তাটির নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা উচিত বলে জানান স্থানীয় এমপি আয়েন উদ্দিন।
×