ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পবিত্র লাইলাতুল বরাত উদ্্যাপিত

প্রকাশিত: ১১:১২, ২৩ এপ্রিল ২০১৯

পবিত্র লাইলাতুল বরাত উদ্্যাপিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে পবিত্র লাইলাতুল বরাত বা শব-ই-বরাত। গত রবিবার রাতে মুসলিম বিশ্বের কাছে হাজির হয় ফজিলতপূর্ণ এই রাত। আল্লাহ্র নৈকট্য লাভে এদিন দেশে অধিকাংশ মুসলমান রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত ছিলেন। এছাড়া মুসলিম উম্মাহর শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করেও এই রাতে বিশেষ মোনাজত পরিচালনা করা হয়। ইসলামে যে কয়টি রাতকে অধিক ফজিলতপূর্ণ হিসেবে ধরা হয় তার মধ্যে শাবানের রাত একটি। এই রাতকে ইসলামের পরিভাষায় লাইলাতুল বরাত হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রাতে আল্লাহ তার বান্দার গোনাহ মাফ করে দেন। বান্দার দিকে দৃষ্টি দেন। তারা বলেন, রমজান শুরু হওয়ার আগে শব-ই-বরাত মুসলমানদের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। এদিন রাতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের অধিকাংশ মসজিদে মুসলমানরা যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে ইবাদত-বন্দেগীর মধ্যদিয়ে সৌভাগ্যের রজনী শব-ই-বরাত উদযাপন করেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ আদায়, কোরান তেলাওয়াত, জিকির, ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলসহ ইবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে সারারাত অতিবাহিত করেন। মহিমান্বিত এ রজনীতে মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া করা হয়। রবিবার সন্ধ্যার পরই শুরু হয় এই রাতের ফজিলত। মাগরিবের নামাজেই মুসল্লিরা মসজিদে ভিড় করতে শুরু করেন। এশার নামাজের পর শুরু হয় এই রাতের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য নিয়ে আলোচনা। রাতে প্রায় সব মসজিদ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে রাতভর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে ওয়াজ মাহফিল, কোরান তেলাওয়াত, মিলাদ মাহফিল, হামদ্, নাত, নফল ও তাহাজ্জুদের নামাজ এবং আখেরি মোনাজাতে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। ফজিলতের এই রাতে মুক্তহস্তে দান-খয়রাত করেছেন অনেকে। রাতভর ইবাদত- বন্দেগী আর দীর্ঘ সেজদার পর মুমিন-মুসলমানরা মোনাজাতের জন্য দু’হাত তুলে ধরেন মহান আল্লাহপাকের দরবারে। পাপমুক্তি আর পরম করুণাময়ের অপার সন্তুষ্টি অর্জনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন অনেকে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অপার অনুগ্রহ কামনা করেন সবাই। ফজরের নামাজ শেষে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা জানানোর মধ্য দিয়ে মুসলমানরা এ বছরের মতো বিদায় জানান শব-ই-বরাতকে। আর এরপর থেকে ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে যায় পবিত্র মাহে রমজানের। সৌভাগ্যের এ রজনীতে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও সারাদেশে নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মুসলমান মসজিদের পাশাপাশি বাসা ও বাড়িতেও কোরান তেলাওয়াত, নফল নামাজ আদায় করেন। বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইবাদত-বন্দেগীতে রাতটি অতিবাহিত করেন। ঐতিহ্য অনুসারে বাড়িতে বাড়িতে তৈরি রুটি-হালুয়াসহ খাদ্যসামগ্রী আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে এবং দুস্থ-গরিবের মাঝে বিতরণ করা হয়। রাতব্যাপী ইবাদত, বন্দেগী, জিকির ছাড়াও এই রাতে মুসলমানগণ পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনসহ প্রিয়জনদের কবর জিয়ারত করেন। রাজধানী ঢাকার কবরস্থানেও মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। রাজধানীসহ সারাদেশের মসজিদে এশার নামাজের পর থেকেই দফায় দফায় ওয়াজ মাহফিল, জিকির ও মিলাদের পর বাদ ফজর দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর রহমত কামনায় মোনাজাতের মধ্য দিয়ে পবিত্র লাইলাতুল বরাত উদযাপিত হয়। পবিত্র শব-ই-বরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতারসহ বেসরকারী টিভি চ্যানেল ও বেতারেও এ উপলক্ষে ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। পুলিশের পক্ষ থেকে শব-ই-বরাত উদযাপনে নেয়া হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাদের পক্ষ থেকে আগেই এই রাতের পবিত্রতা রক্ষায় পটকাসহ সব ধরনের বাজি ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আরবী হিজরির শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ পবিত্র শব-ই-বরাত বা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে। মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এ রাত লাইলাতুল বরাত হিসেবে পরিচিত।
×