স্টাফ রিপোর্টার ॥ রঙের প্রাচুর্যে ভরপুর প্রতিটি চিত্রকর্ম। বর্ণের বৈভবমাখা ক্যানভাসগুলো প্রশান্তি ছড়ায় শিল্প রসিকের নয়নে। আর চিত্রপট সৃজনে শিল্পীর অনুসরণ করেছেন বিমূর্ত ধারা। তবে সেই বিমূর্ত চিত্রকলার মাঝেও প্রতীকীভাবে উদ্ভাসিত হয়েছে জীবনসংলগ্ন বিবিধ বিষয়। শিল্পীর বর্ণ প্রয়োগের স্বতন্ত্র কৌশলে প্রতীকী ভাষায় উপস্থাপিত হয়েছে বিশেষ কোন বক্তব্য। তাই নিসর্গের প্রতি প্রবল অনুুরাগী ছবিগুলো নানাভাবে বলে যায় জীবনের কথা। যাপিত জীবনচিত্রের সমান্তরালে উঠে এসেছে সময়ের অভিঘাত। এমন ভাবনাতাড়িত অর্ধশতাধিক চিত্রকর্ম এখন শোভা পাচ্ছে ধানম-ির গ্যালারি চিত্রকে। ছবিগুলো এঁকেছেন পারভীন জামান শাম্মু। সেই শিল্পসম্ভার নিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘অন্তবিহীন পথ’।
প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম প্রসঙ্গে পারভীন জামান শাম্মু বলেন, ক্যানভাসে আমি রং নিয়ে খেল করতে পছন্দ করি। বর্ণের উপর বর্ণ ছড়িয়ে বিষয়কে মেলে ধরি। রংয়ের আশ্রয়েই উপস্থাপন করি বিষয়ের অন্তর্গত নির্যাসকে। আমার একটি ছবিতে কাশফুলের ঝোপের ধারে বিশ্রামরত মাঝিকে দেখা যায়। ওই ছবিতে সাদার বদলে কাশফুলের রং হয়েছে হলুদ। মাঝির ভেতরে বিরাজমান হতাশার ইঙ্গিতে দেয়া হয়েছে হলুদ রংয়ের মাধ্যমে। কথার সূত্র ধরে শিল্পী নিজের প্রসঙ্গে বলেন, আমার ভেতরেও দীর্ঘদিন এই হতাশা কাজ করেছে। পরিবারের চাপে দীর্ঘ ত্রিশ বছর দূরে থাকতে হয়েছে ছবি আঁকা থেকে। একসময় মেয়ের বিরামহীন তাড়নায় অবরুদ্ধ জগত থেকে আবার ফিরে আঁকাআঁকির ভুবনে। তাই আমার ছবিতে রঙ্গিন প্রকৃতির আলোড়নের মাঝে মিশে আছে জীবনবোধ।
গাঢ় নীলের জমিনযুক্ত চিত্রপটে ভেসে উঠেছে ¯্রােতধারাহীন স্থির নদী। ঘনিয়ে আসা সন্ধ্যায় নদীর ঝিকমিক করছে চাঁদের আলো। নদীতটে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি নৌকা। একটি বাদে সব নৌকা মাঝি শূন্য। আবছা আলোয় শুধু একটি নৌকার উপর দৃশ্যমান মাঝির অবয়ব। বাড়ি ফেরা নামে ছবিতে পাওয়া যায় সারাদিনের কাজ শেষে প্রিয়জনের কাছে ফিরে যাওয়ার বার্তা। এভাবেই পারভীন জামান শাম্মু প্রকৃতিকে উপজীব্য করে বলেছেন যাপিত জীবনের কথা। পাশাপাশি শিল্পী ষড়ঋতুর নিত্যপরিবর্তন শীলতাকে প্রকাশ করেছেন রঙের উদ্দামতায়। তবে প্রকৃতির চেনা রূপকে শিল্পী উপেক্ষা করেছেন আপন মনের আবেগে বর্ণের প্রাণপ্রবাহে। তাই বর্ণের অন্তিম ইচ্ছায় শাম্মুর আপন অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে ক্যানভাসে। লোককলার পুনর্বয়নে তার শিল্প পেয়েছে নতুন ভাষা আর অবয়বের জ্যামিতিক ব্যাকরণ ভেঙে জন্ম নিয়েছে বিমূর্ত বা নির্বস্তুক শিল্পভাষা। ইম্প্রেশনিজমের নিয়মকে পাশ কাটিয়ে বিমূর্ত অথচ রঙ্গিন ভুবনে ধাবিত হয়েছে তার শিল্পভুবন। সেখানে সৃষ্টি হয়েছে রহস্যময়তা। বর্ণের নির্ভরতায় দৃশ্যমান পৃথিবীকে পাঠ করে দৃশ্যাতীত অতিজাগতিক ইশারার অনুরণন তুলেছেন শিল্পের মাঝে। সব মিলিয়ে ছবিগুলো হয়ে উঠছে শিল্পীর আত্মার মুক্তিলাভের বর্ণিল মুদ্রা।
প্রদর্শনীর সব চিত্রকর্ম আঁকা হয়েছে এ্যাক্রেলিক মাধ্যমে। রঙের স্ফুরণে জ্বলে ওঠা ছবিগুলো সহজেই নজর টানে শিল্পরসিকের। ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া দশ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী চলবে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে প্রদর্শনী।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: