ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের পর্যটনের সম্ভাবনায় উচ্ছ্বসিত বিদেশী সাংবাদিকরা

প্রকাশিত: ১১:১১, ২৩ এপ্রিল ২০১৯

বাংলাদেশের পর্যটনের সম্ভাবনায় উচ্ছ্বসিত বিদেশী সাংবাদিকরা

আজাদ সুলায়মান ॥ বিপুুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ধীরে ধীরে বিকশিত হচ্ছে বাংলাদেশর পর্যটন শিল্প। এ খাতে সরকার যদি আর একটু মনোযোগ দেয়- তাহলেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে খুব দ্রুত। এ দেশের মানুষের আতিথিয়েতা একটা বড় সম্পদ। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, সুন্দরবন, প্রাকৃতিক নৈসর্গ ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হলে এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে যাবে। এভাবেই বাংলাদেশের পর্যটনখাতের মূল্যায়ন করেছেন বর্তমানে ঢাকা সফররত একদল বিদেশী সাংবাদিক। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, চীন, ইতালি, স্পেন, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, লেবানন, থাইল্যান্ড, কোরিয়ার ২৬ জন সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, টেলিভিশন প্রযোজক, নির্মাতা ও নাট্যকারের অংশগ্রহণে গতকাল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বেশ ক’জন সাংবাদিক দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। এ অনুষ্ঠানে দেশের শীর্ষস্থানীয় ট্যুর অপারেটর, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, ও অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। গত ১০ই এপ্রিল বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট বোর্ডের আমন্ত্রণে তারা ঢাকায় আসেন। ট্যুরিজম উইন্ডো নামের একটি অপারেটর তাদের দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে পরিদর্শনের দায়িত্ব পালন করেন। সোমবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে তাদের সঙ্গে দেশীয় সাংবাদিকদের মতবিনিময় করার জন্য মধ্যাহ্ন ভোজনের আয়োজন করা হয়। এতে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বিদেশী সাংবাদিকদের দেশে ফিরে গিয়ে এ দেশের ট্যুরিজমের ভবিষ্যত নিয়ে লেখার ও প্রচারের অনুরোধ জানান। এ সময় বিদেশী সাংবাদিকরা জানান, গত দশ দিন ধরে বাংলাদেশের সুন্দরবন, কুয়াকাটা, কক্সবাজার, বান্দরবান ও উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা পরিদর্শন করেন। তারা পহেলা বৈশাখের মঙ্গলশোভাযাত্রা ছাড়াও দিনভর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নানাবিধ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। লন্ডনের টিভি ব্যক্তিত্ব টিম কানিং হাম জনকণ্ঠকে বলেন, এখানে গত দশ দিন ধরে আছি। ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রমণ করেছি, মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, দেশীয় খাবার খেয়েছি। সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে, বাংলাদেশের মানুষের আন্তরিক আতিথেয়তা। আমি মনে করি, বাংলাদেশের মানুষই বিদেশীদের যতটা সম্মান ও ভালবাসা দিতে জানে সেটা অনেক দেশেরই নেই। এটা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি দেশে ফিরে গিয়ে লিখব তাদের কথা। বিশেষ করে পর্যটন খাতের উন্নতি অনেকাংশেই নির্ভর করে মানুষের আচার ব্যবহার ও আতিথিয়েতার ওপর। বাংলাদেশী ব্রিটিশ নাগরিক ফাজ আহমেদ বলেন, এই ক’দিনে বাংলাদেশকে অনেকটাই জেনেছি-চিনেছি। পর্যটন খাতের বিকাশ ঘটাতে হলে সরকারকে অবশ্যই অনেক অবকাঠামোগত উন্নতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যেতে সড়ক ও নদীপথে যেই সময় লাগে সেটা আরও কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সহজে যাতায়াত করার সুব্যবস্থা যতটা বেশি নিশ্চিত হবে ততই ব্যবসা বাড়বে। তিনি বলেন, সিলেটের চা বাগান ও পাহাড়ী নৈসর্গিক দৃশ্য যে কোন রুচিশীল মানুষের মনে দোলা দেবে। এটাকে পুঁজি করতে হবে। বহির্বিশ্বে তার কোন প্রচারণা নেই। এমনকি সিলেট আমার আদিবাস হওয়া সত্ত্বেও আমি নিজেই এখনও সব ঘুরে দেখার সুযোগ পাইনি। জাপানের ফটো সাংবাদিক কিয়োফুমি কুরাটানি বলেন, পৃথিবীর দীর্ঘতম সি বিচের নাম এতদিন শুনেছি। এবার সত্যি সত্যিই তা দেখে মুগ্ধ আমি। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে এত সুন্দর বালি কনা আরও কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না। অন্য দেশের সি বিচের তীরে বালির সঙ্গে কাদা থাকে। তিনি এই সমুদ্র সৈকতে ভবিষ্যত সম্পর্কে বলেন, এটা যদি অন্য কোন দেশের থাকত এমনকি জাপানেও এমন একটা আকর্ষণীয় সি বিচ থাকত তাহলে দেখতেন কিভাবে সেটা সাজানো হতো। এখানে একটা ক্যাবল কারের ব্যবস্থা নেই, সমুদ্র বিহারে গিয়ে সময় কাটানোর ক্রুজ নেই। কক্সবাজার থেকে সমুদ্রপথে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাওয়ার সুব্যবস্থা করা গেলে বাণিজ্যিকভাবে তা আরও অনেক সফল করা যেত। লেবাননের ডেইলি স্টার পত্রিকার সাংবাদিক ফিনবার এন্ডারসন বাংলাদেশের নৈসর্গিক দৃশ্য ও সবুজ প্রকৃতির হাতছানিতে বেশ মুগ্ধ। তিনি বার বার এখানে আসার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের নাম শুনেছি। এবার খুব কাছ থেকে দেখেছি। এখানকার জেলেদের সাহসী জীবন সংগ্রামের কথা শুনে আমার শিহরণ জাগে। কিভাবে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকে তা এখানে না আসলে বিশ্বাস করতে পাারতাম না। পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় এই সুন্দরবনের আশপাশে এখনও যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন আধুনিকভাবে গড়ে ওঠেনি। রাতে গা ছম ছম করে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে বিনোদনমূলক কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে আরও জমতো। ইতালির মিলান এলাকার সাংবাদিক ফেডরিক ক্লাউজনার ঢাকার যানজটে পড়ে বেশ আনন্দ উপভোগ করার কথা স্বীকার করে বলেন, ঢাকার বাইরের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে অবশ্য এ ধরনের সমস্যা পড়তে হয় না বান্দরবানের আঁকাবাঁকা পাহাড়ী পথে যানবাহনে চড়ার সময় শিহরণ জাগে। আবার সি বিচে গিয়ে পানিতে নেমে জোয়ার ভাটার ভয়েও শিহরণ জাগে। এসবই আমাকে আনন্দ দিয়েছে। আমি মনে করি দিন দিন এ দেশের পর্যটন বিশ্বব্যাপী আরও জনপ্রিয়তা পাবে। চীনের অন্যতম ম্যাগাজিন পত্রিকা ভিকটু -এর সম্পাদক জুলি বলেন, এ দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো সব রাজধানীর বাইরে। সড়কপথে যেতে সময় লাগে অনেক। উন্নত দেশগুলোর মতো আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে এখানকার মানুষের ভালবাসা ও জীবনযাপনের কথা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। পর্যটনের ব্যবসাও চাঙ্গা হবে। এ দেশের পর্যটন সম্ভাবনা এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে। বেলজিয়ামে ট্রাভেলরিভেল ডটকমের সম্পাদক চারলটি নুয়েল জানিয়েছেন, তার দেশ থেকেই তিনি স্থির করেছিলেন বাংলাদেশের অনেকগুলো স্পর্ট ঘুরে দেখবেন। কিন্তু সময় সুযোগ হয়ে ওঠেনি। মনে থাকবে মানুষের সহজ সরল আদর আপ্যায়নের কথা। নেদারল্যান্ডের টিভি অনুষ্ঠান নির্মাতার শাওন মায়েস বলেন, এ দেশের মানুষ খুবই বিচিত্র। গ্রামের মানুষ এক রকম, কক্সবাজারের মানুষ আরেক, ঢাকার মানুষ আরেক রকম। দেশে ফিরে গিয়ে আমি এর ওপর আলাদা ডকুমেন্টারি তৈরি করব।
×