ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জাহালমের পর এবার আরমান ॥ মুক্তি চেয়ে রিট

প্রকাশিত: ১১:১০, ২৩ এপ্রিল ২০১৯

জাহালমের পর এবার আরমান ॥ মুক্তি চেয়ে রিট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাহালমের পর এবার ভুল আসামি হয়ে ৩ বছর ধরে কারাগারে থাকা পল্লবীর বেনারসী কারিগর মোঃ আরমানকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা, মুক্তি ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। একইসঙ্গে, নির্দোষ আরমানের আটকাদেশ কেন অবৈধ হবে না- এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার এ রিটের শুনানি হবে বলে জানা গেছে। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি, ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পল্লবীর ওসিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে। রিটটি দায়ের করেছেন ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব। ৪০ বোতল ফেনসিডিলের মাদক মামলার ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামি সাহাবুদ্দিন বর্তমানে এলাকায় মাদক ব্যাবসা করছে। অন্যদিকে শুধুমাত্র বাবার নামে মিল থাকায় আরমানকে গ্রেফতার করে কারাগারে রাখা হয়েছে। রিট আবেদনে আরমানের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে। এর আগে সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ভুল আসামি জাহালম প্রায় ৩ বছর কারাভোগের পর উচ্চ আদালতের নজরে আনার পর মুক্তি পান। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রবিবার ল’ এ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট আবেদন দায়ের করেন। রিটটি শুনানির জন্য উপস্থান করা হলে হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মোঃ খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লব। রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমাযুন কবির পল্লব জনকণ্ঠকে বলেন, ‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিটটি করে ‘ল’ এ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মোঃ খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদনটি উপস্থাপনের পর আজ মঙ্গলবার শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছে আদালত। তিনি আরও বলেন, আবেদনে কারাগারে থাকা আরমানকে হাইকোর্টে হাজিরের নির্দেশনা ও আরমানের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে। গত ১৮ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে কারাগারে আরেক জাহালম শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত শাহাবুদ্দিন বিহারির পরিবর্তে আসামি হিসেবে ৩ বছর ধরে কারাগারে ‘নির্দোষ’ আরমান (৩৬)। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পল্লবীর বেনারসী কারিগর মোঃ আরমান নির্দোষ হয়েও ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে গত ৩ বছর ধরে কারাভোগ করছেন। রাজধানীর পল্লবী থানার একটি মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি মাদক কারবারি শাহাবুদ্দিন বিহারি এ মামলার প্রকৃত আসামি। কিন্তু তার পরিচয়ে, তার পরিবর্তে সাজাভোগ করছেন আরমান। শুধু বাবার নাম ইয়াসিন মিল থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে শাহাবুদ্দিন নামে আদালতে সোপর্দ করেছে বলে জোর অভিযোগ করেছে তার পরিবার। অন্যদিকে, প্রকৃত আসামি শাহাবুদ্দিন কারাগারের বাইরে দিব্যি মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু বাবার নামে (মৃত ইয়াছিন) মিল থাকায় শাহাবুদ্দিনের বদলে পল্লবীর ১৩ হাটস, ব্লক-এ, সেকশন-১০ তেজগাঁও নন লোকাল রিলিফ ক্যাম্পের বাসিন্দা মৃগীরোগী আরমানকে বিনা অপরাধে সাজা ভোগ করতে হচ্ছে। ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি সকালে আরমানকে গ্রেফতার করে পল্লবী থানা পুলিশ। এর ৩ দিন পর তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারেই রয়েছেন। আর সাজাপ্রাপ্ত মাদক কারবারি শাহাবুদ্দিন বিহারি এখনও রাজধানীর মিরপুর ১০, ১১, ১২ ও মোহাম্মদপুর এলাকায় মাদক ব্যবসা করছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আরমানের মা এবং আরও কিছু সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০০৫ সালের ৩০ আগস্ট গভীর রাতে পল্লবীর ৬ নম্বর সেকশনের সি-ব্লকের ৮ নম্বর লেনের ৭ নম্বর ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে ৪০ পিস ফেনসিডিলসহ শাহাবুদ্দিনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশের ৭ নম্বর টিম। তিনি তখন সপরিবারে সেখানে বসবাস করতেন। ডিবির পরিদর্শক আবদুল আউয়ালের নেতৃত্বে চলা ওই অভিযানে শাহাবুদ্দিন ছাড়াও গ্রেফতার হয় তার দুই সহযোগী সোহেল মোল্লা ও মামুন ওরফে সাগর। তাদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় মাদকদ্রব্য আইনের ১৯(১)/৩(ক) ধারায় মামলা হয়। মামলা নম্বর: ৬১ (৮)০৫)। ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার ৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন ডিবি পুলিশের এসআই মোঃ সিরাজুল ইসলাম। মামলায় দুবছর জেল খেটে ২০০৭ সালের ৫ মার্চ জামিন পান শাহাবুদ্দিন। ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করে স্বাক্ষরযুক্ত জামিননামার মাধ্যমে জামিন নেন। জামিনদার হন তার ভাই মানিক। কিন্তু এর পর তিনি আর আইনের মুখোমুখি না হয়ে ফেরারি হয়ে যান। ওই মামলায় ২০১২ সালের ১ অক্টোবর শাহাবুদ্দিন ও তার দুই সহযোগীর প্রত্যেকের ১০ বছর করে কারাদ- এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেয় জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী ঢাকার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল। পলাতক শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা। ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পল্লবীর ১৩ হাটস, ব্লক-এ, সেকশন ১০ নম্বর এলাকায় অভিযান চালায় পল্লবী থানার পুলিশ। আরমান বাসায় নাশতা সেরে চা-পানের জন্য পাশের একটি চায়ের দোকানে যায়। অভিযানকারীরা সেখান থেকে তাকে আটক করে।
×