বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতকে কোণঠাসা করতে পারলেও রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি পরাজিত করতে পারিনি। আজ উগ্রসাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এই বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে বিতাড়িত না হলে গণতন্ত্র মজবুত হবে না। এদের রাজনীতির মঞ্চ থেকে চিরতরে বিদায় জানাতে হবে। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, ঐক্যবব্ধ থাকতে হবে। আর একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী তাদের ৬ এমপি শপথ না নিলে বিএনপির আমও যাবে, ছালাও যাবে। সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের উদ্যোগে ‘ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তারা এসব কথা বলেন। সভার সভাপতি ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম পরবর্তী কর্মসূচী হিসেবে আগামী ২৬ এপ্রিল মতিঝিলে সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ১৪ দলের লড়াই শুধু বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে নয়। শুধু বিএনপি-জামায়াত নয়, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ ও খুনীসহ দেশের সব অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাবে ১৪ দল। বাংলাদেশকে অন্যতম শান্তির দেশে পরিণত করা হবে।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, জাতীয় পার্টি জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাত হোসেন, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ।
দ্রুত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে নুসরাত হত্যাকারীদের শাস্তি দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। এ ঘটনায় মূল হোতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দানকারীরা আওয়ামী লীগার নয়, এরা তথাকথিত আওয়ামী লীগার। দলের দুর্নাম ও ক্ষতি করতেই তারা এসেছে। অতি উৎসাহী না হতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অপকর্মে জড়িত দুর্বৃত্তদের আশ্রয় দিবেন না।
তিনি বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের আগেও সবাই আওয়ামী লীগার ও বাকশাল হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের আর পাওয়া যায়নি। তাই সবার সতর্ক থাকতে হবে। এদেশে আর ১৫ আগস্ট দেখতে চাই না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও তিনি দেশকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন সর্বক্ষেত্রে আলোকিত বাংলাদেশ। তবে জনগণের প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের প্রতি বেশি। বিএনপির উদ্দেশে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আগামী ৩০ এপ্রিল ডেটলাইন। এই সময়ের মধ্যে সংসদে না আসলে আম-ছালা দুটোই হারাবেন। তাই সাহস থাকলে সংসদে এসে কথা বলুন।
সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, মুজিবনগর দিবস যারা পালন করে না তারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। জেনারেল জিয়ার মা-বাবার কবর বগুড়া নয়, পাকিস্তানে। এ কারণে জিয়া কখনও বাবা-মার কবর জিয়ারত করতে যাননি। মিথ্যাচারের পথ পরিহার করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ইউনাইটেডে কী মজা পেলেন? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর চিকিৎসা চলছে। তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন চিকিৎসকরা।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বিএনপি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। এ কারণে দেনদরবার করে খালেদার মুক্তি চান তারা। এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে? আজ বিএনপি-জামায়াতকে কোণঠাসা করতে পেরেছি, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি পরাজিত করতে পারিনি। আজ উগ্রসাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। উগ্রসাম্প্রদায়িক শক্তি শ্রীলংকায় হামলা করেছে। এদেশকে আমরা এ ধ্বংসের কিনারায় ঠেলে দেব কিনা আজ আমাদের ভাবতে হবে।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, যারা মুজিবনগর দিবস পালন করে না তারা পাকিস্তানের দালাল। পাকিস্তানপন্থী বিএনপি মুজিবনগর দিবসকে অস্বীকার করে। জামায়াত ও জঙ্গীবাদকে এই বিএনপি পৃষ্ঠপোষকতা করে। এই বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে বিতারিত না হলে গণতন্ত্র মজবুত হবে না। এদের রাজনীতির মঞ্চ থেকে চিরতরে বিদায় জানাতে হবে। এদের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, ঐক্যবব্ধ থাকতে হবে।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, যারা ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস পালন করে না তারা স্বাধীনতার পক্ষের বা স্বাধীনতার বিশ্বাস করে এটা আমার বিশ্বাস হয় না। হঠাৎ করে স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়নি। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে এই প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু তৈরি করেছিলেন। জিয়াউর রহমান কারফিউ দিয়ে দেশ চালিয়েছে, এটার মধ্যে বিএনপি ও বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরা গণতন্ত্র খুঁজে পায়। আসলে বিএনপি নামের এই দলটি তৈরি করেছিল পাকিস্তান। এই দলের লক্ষ্য বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। এই বিষফোঁড়া দলটি যত দিন থাকবে তত দিন দেশের উন্নয়নের বাঁধা থাকবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: