ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আউটসোর্সিংয়ে আমরা আর অনুসরণ করব না, উদ্ভাবন করব

প্রকাশিত: ১১:০১, ২৩ এপ্রিল ২০১৯

আউটসোর্সিংয়ে আমরা আর অনুসরণ করব না, উদ্ভাবন করব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বের অনেক দেশকে পেছনে ফেলে গত ১০ বছরে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ বহুদূর এগিয়েছে। এখন আমরা আর অনুকরণ করব না, আমরা উদ্ভাবন করব বিপিও ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য -এই হোক আমাদের মূলমন্ত্র। এরই ধারাবাহিকতায় বিপিও (দেশী ও আন্তর্জাতিক বাজারে ‘বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং’, বিপিও) খাতের অবস্থান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, ধীরে ধীরে এ খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে চতুর্থবারের মতো দু’দিনের (রবি-সোম) এই বিপিও সামিটের উদ্বোধন করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। সজীব ওয়াজেদ জয় সরকারের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়; দেশের উন্নতি হচ্ছে। বিশে^র মধ্যে বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে। আমরা আরও দ্রুত দেশের উন্নয়ন করতে চাই। দক্ষ জনশক্তি তৈরির ক্ষেত্রে আইসিটি সেক্টরে তরুণদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে সরকার। কিন্ত দুঃখজনক হচ্ছে, আইসিটি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ এখনও দশভাগের কম। আমি চাই, এ সংখ্যা অচিরেই ৫০ ভাগে উন্নীত হবে। দশ বছর আগে কেউ কল্পনাও করেনি ইউনিয়ন পর্যায়ে মানুষ ইন্টারনেট সেবা পাবে। আওয়ামী লীগ সরকার সফলতার সঙ্গে সেটা করতে সক্ষম হয়েছে। আইসিটি খাতে উন্নয়নের জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এই উন্নয়ন অল্প খরচেই তা আমরা করে দেখিয়েছি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপত্বি করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, গত দশ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রযুক্তি খাতকে গুছিয়ে এনেছে। এখন দ্রুতবেগে অগ্রগতির পালা। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের সুফল হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে। অনুন্নত দেশের তালিকা থেকে আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছি। উন্নত দেশ হতে হলে প্রযুক্তি খাত থেকে আয় বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে বিপিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশাবাদী। বিশ্বব্যাপী বিপিও খাতের বাজার প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের বিপিও ব্যবসার বাজার ইতোমধ্যেই ৩০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। সেই সম্ভাবনা সবার সামনে তুলে ধরা এবং তরুণ প্রজন্মের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেয়ার এখনই সময়। ২০০৮ সালে যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ, বর্তমানে সেই সংখ্যা ৯ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। কেবল গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ানোই নয়, ব্যবহারকারীর জন্য ইন্টারনেট যেন নিরাপদ হয় সেজন্যও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ২০০৫ সালে যে ব্যান্ডউয়িথের দাম ছিল ৭৫ হাজার টাকা, সরকার এখন তা ৪০০ টাকায় নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। মোবাইল ফোন ইন্টারনেটে আমরা ইতোমধ্যেই ফোরজি সেবা চালু করেছি। অচিরেই একে ফাইভজিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান মোস্তাফা জব্বার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মোট জনগোষ্ঠীর দুই-তৃতীয়াংশ তরুণ। এ হিসেবে তরুণের সংখ্যা প্রায় ১১ কোটি। এই তরুণ জনগোষ্ঠীই আমাদের সম্পদ। বিপিও খাতে এখন বাংলাদেশের প্রচুর দক্ষ জনবল প্রয়োজন। আমরা যদি তরুণদের প্রশিক্ষিত করে এই খাতে কাজে লাগাতে পারি তাহলে আমরা খুব দ্রুতই বিপিওর বিশ্ব বাজারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অর্জন করতে পারব। প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব এন এম জিয়াউল আলম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান জহুরুল হক। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সূচনা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার এ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্য) সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ। সোমবার ছিল সামিটের দ্বিতীয় দিন। সকাল এগারোটা থেকে একটা পর্যন্ত প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁর বলরুমে অনুষ্ঠিত হয় ‘ফ্রিল্যান্সার টু এন্টারপ্রেনর’ শিরোনামে এ সেমিনার। একই সময় সুরমা হলে হয়েছে ‘ব্যাংকিং এ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস বিপিও : ইমার্জিং রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এ্যান্ড সিকিউরিটি ট্রেন্ডস’ শিরোনামে সেমিনার। বেলকনি হলে সকাল এগারোটায় ‘হেলথ্ কেয়ার আউটসোর্সিং’ শিরোনামে সেমিনার। দুপুর দুটায় হয় দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় পর্বের আয়োজন। সুরমা হলে অনুষ্ঠেয় ‘রুরাল বিপিও : দ্যা নিউ হরাইজন অব এমপ্লয়মেন্ট ফর ইয়ং ভিলেজেস অব বাংলাদেশ’ সেমিনারের মাধ্যমে বিপিও সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটে। এবারের বিপিও সামিটে ৪০ স্থানীয় স্পীকার, ২০ আন্তর্জাতিক স্পীকার অংশগ্রহণ করেছিলেন। এবার বিপিও সামিটে তেরোটি সেমিনার ও কর্মশালা হয়েছে। দুই দিনের মূল আয়োজনের আগে ৩০ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাক্টিভেশন কার্যক্রম হয়। সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে’র আওতাধীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতর এবং বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার এ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্য) আয়োজনে এই সামিট হয়েছে। আয়োজনে অংশীদার হিসেবে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), বাংলাদেশ ওমেন ইন টেকনোলজি, আইএসপি এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ও বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ)। বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০১৯-এর প্রথম দিন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ও তরুণ দর্শনার্থীর ভিড় ছিল বেশি। অংশ নেয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টল ঘুরে কোন কোন শিক্ষার্থী সিভি জমা দিয়েছেন। কেউ জেনে নিয়েছেন আউটসোর্সিং খাতের অজানা তথ্য। আবার কোন কোন দর্শনার্থী অংশ নেন সেমিনারে। সেখানে অভিজ্ঞরা তুলে ধরছেন তাদের সাফল্যের কথা। বিপিওতে চার হাজার ৮ শ’ রকমের কাজ আছে। ‘বিপিও এজ এ ক্যারিয়ার ফর ইয়ুথ এ্যান্ড লেবারজিং বিপিও ফর এমপ্লয়মেন্ট’ শিরোনামে সেমিনার। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এ সেমিনারে তরুণদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। বিদেশী প্রযুক্তিবিদ জেমস পয়সান্ট তার উপস্থাপনায় তরুণদের উদ্দেশে বলেন, পেশা কি হবে সেটা নিজের কাছে। তবে যেটাতে আপনি সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন সেটাই পেশা হিসেবে নেয়া দরকার। বিপিওর কথা বলতে গেলে, এটা সম্পূর্ণই একটা আনন্দদায়ক মনভাবে থাকার পেশা। তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন, ইন্টারনেট আমরা সবাই ব্যবহার করি। কিন্ত সেটা কোন্ উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যবহার করছি সেটাই¥ুখ্য। আমরা এখন সবকিছুই ইন্টারনেটেই পাই। তাই এটাকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে হবে। সিএনসি ডেটার এমডি রাজ মহান ভাইরামুথু বলেন, তরুণরা চাইলে যেকোন দেশ বদলে দিতে পারে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বাংলাদেশের তরুণরা এখন খুব ভাল কাজ করছে। বিপিও খাতটিও তাদের জন্য এগিয়ে যাবে। সেমিনারটিতে বক্তা এবং প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব জিয়াউল আলম, ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি এ্যান্ড সার্ভিসেস এ্যালায়েন্সের মহাসচিব জেমস পয়সান্ট, আইসিটি বিভাগের ডিজি এএমএ আরশাদ হোসেন, দ্য উইনার্স সার্কেলের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ওয়াজেদ সালাম, সিএনসি ডেটা (এলএলসি) এমডি রাজ মহান ভাইরামুথু, রেডিসন টেকনোলজিসের এমডি দেলোয়ার হোসেন ফারুক। সেমিনারটি পরিচালনা করেন বাক্যর সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন।
×