ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সত্যজিৎ রায়ের ২৭তম মৃৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ২৩ এপ্রিল ২০১৯

সত্যজিৎ রায়ের ২৭তম মৃৃত্যুবার্ষিকী আজ

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ উপমহাদেশের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। গুণী এই চলচ্চিত্র নির্মাতা ১৯৯২ সালের আজকের দিনে পরলোক গমন করেন। বিশ্ব চলচ্চিত্র মানচিত্রে ভারতের অবস্থানকে তুলে ধরার পাশাপাশি অন্যান্য চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য এক অনুপ্রেরণার নাম। লেখক পরিবারে বেড়ে ওঠেন সত্যজিৎ রায়। প্রথম জীবনে তিনি ওরিয়েন্টাল আর্টের খুব ভক্ত ছিলেন। ভারতীয় শিল্পের প্রতি সত্যজিতের নিখাঁদ ভালবাসার পরিচয় পাওয়া যায় তার ‘পুনঃপুন অজান্তা’, ‘ইলোরা’ এবং ‘ইলিপানথা গুহা’ ভ্রমণের মধ্য দিয়ে। একজন অলঙ্করণ শিল্পী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু হয়। বিভিন্ন কোম্পানিতে তিনি কাজ করেন। এমনকি জনপ্রিয় ভারতীয় কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেরা কাজ ‘পথের পাচালি’র ছোটদের ভার্সন ‘আম আটির ভেপু’র অলঙ্করণের কাজও করেন তিনি। আর ওই বইয়ের অলঙ্করণ করতে গিয়ে সত্যজিৎ বইটির গল্পের দ্বারা প্রচ- প্রভাবিত হন। ওই বইয়ের গল্পের জন্য যেসব শট অলঙ্করণ করেন সেগুলো পরবর্তীতে তার প্রথম চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেন। ফ্রান্সের চলচ্চিত্র পরিচালক জিয়ান রেনওইরের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর সত্যজিৎ চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। একবার তিনি টানা তিন মাস লন্ডনে অবস্থান করেন। সে সময় সত্যজিৎ মোট ৯৯টি চলচ্চিত্র দেখেন। এত চলচ্চিত্রের মধ্যে তার মনোজগতে দাগ কাটতে সক্ষম হয় ভিট্ররিও ডি সিকার ‘লাডরি ডি বিকিকলেটেটে’ চলচ্চিত্রটি। বলা হয়ে থাকে সত্যজিৎ এ চলচ্চিত্র দেখা শেষ করে থিয়েটার থেকে বের হয়েছিলেন একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হওয়ার সংকল্প নিয়ে। সত্যজিতের প্রথম চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’ নির্মাণ শেষ করতে সময় লাগে তিন বছর। সে সময় তাকে চলচ্চিত্র নির্মাণের পয়সার জোগার করতে হিমশিম খেতে হয়। অবশ্য চাইলেই তিনি এ চলচ্চিত্রে অর্থায়নের জন্য প্রযোজক পেতে পারতেন। গল্পে পরিবর্তন আনা বা প্রযোজকদের স্বেচ্ছাচারিতার কাছে হার মানতে চাননি বলে চলচ্চিত্র নির্মাণে অর্থ জোগার করতে তাকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়। একসময় আর কোন উপায় না পেয়ে হাত পাততে হয় বেঙ্গল গভর্মেন্টের কাছে। সরকারি ঋনের অর্থে চলচ্চিত্রের বাকি কাজ শেষ করেন। অবশেষে ১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ তার স্বপ্নের প্রথম চলচ্চিত্র মুক্তি দিতে সক্ষম হন। তারপরের গল্প শুধুই ইতিহাস। ‘পথের পাঁচালী’ দেশে-বিদেশে চলচ্চিত্র সমালোচকদের প্রশংসা পাওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও সফল হয়। অপু ট্রিলজি বিখ্যাত হওয়ার পর সত্যজিৎ ভিন্ন ঘরানার চলচ্চিত্র নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালান। তিনি ব্রিটিশ রাজ সময়কাল নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। নির্মাণ করেন বহু তথ্যচিত্র যার অন্যতম বিষয় ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আবার ‘মহাপুরুষ’ এর মত কমেডিও নির্মাণ করেন। এ সময় তার নির্মিত অন্যতম চলচ্চিত্রগুলো হলো ‘চারুলতা’, ‘দেবি’ ও ‘সন্দেশ’। পরের দিকে সত্যজিৎ ফ্যান্টাসি, সাইন্স ফিকশন, গোয়েন্দা কাহিনী ও ঐতিহাসিক ঘটনাসহ ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের উপর কাজ করেন। ১৯৯২ সালে দ্যা এ্যাকাডেমি অব মোশান পিকচার আর্টস এ্যান্ড সাইন্স সত্যজিৎকে সম্মানসূচক পুরস্কার প্রদান করে। সর্বোচ্চ এ সম্মান পাওয়ার বছরই ২৩ এপ্রিল চলচ্চিত্র জগতের মেধাবী এ বরপুত্রের জীবন প্রদীপ নিভে যায়।
×