ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আরব আমিরাতকে হারিয়ে শুরু চায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:৪২, ২১ এপ্রিল ২০১৯

আরব আমিরাতকে হারিয়ে শুরু চায় বাংলাদেশ

রুমেল খান ॥ দলটা প্রথমবারের মতো গঠিত। টুর্নামেন্টটাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রথমবারের মতো। শিরোপাটাও যদি প্রথমবারের মতো নিজেদের করে নেয়া যায় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। আর এটাই চাইছেন গোলাম রব্বানী ছোটন। তার মতে- বঙ্গমাতা অনুর্ধ-১৯ নারী আন্তর্জাতিক গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হবার দাবিদার বাংলাদেশ। জাতীয় বা সিনিয়র দলের শিরোপা-সাফল্য না থাকলেও বিভিন্ন বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে কিন্তু বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের ঈর্ষণীয় সাফল্য লক্ষণীয়। সেই পরিসংখ্যানের আলোকেই আশা করা হচ্ছে আগামী ৩ মে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় ফাইনালে প্রতিপক্ষ দলকে হারিয়ে আরেকটি শিরোপা জিতে নিজেদের সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত করবে বাংলার বাঘিনীরা। সেই লক্ষ্যে কাল সোমবার টুর্নামেন্টের ও নিজেদের প্রথম ম্যাচেই খেলতে নামছে তারা। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হওয়া এই ম্যাচে স্বাগতিক দলের প্রতিপক্ষ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। বাংলাদেশ বাদে এশিয়ার ৫টি অঞ্চলের ৫ দল থাকছে এই টুর্নামেন্টে। গ্রুপিং অনুযায়ী বাংলাদেশ পড়েছে ‘বি’ গ্রুপে। এই গ্রুপের অন্য দুটি দেশ হলো আমিরাত এবং কিরগিজস্তান। এই দুই দলের সঙ্গেই খেলার অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের। অর্থাৎ দেশ দুটো হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য চেনা প্রতিপক্ষ। ‘এ’ গ্রুপে আছে মঙ্গোলিয়া, তাজিকিস্তান এবং লাওস। অনুর্ধ-১৯ বা সিনিয়র পর্যায়ে না খেললেও আমিরাতের বিরুদ্ধে অনুর্ধ-১৬ পর্যায়ে এর আগে তিনবার খেলার অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশ। এএফসি অনুর্ধ-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে ২০১৪ সালে প্রথম সাক্ষাতে বাংলাদেশ ৬-০ গোলে জেতে। একই আসরে ২০১৬ সালে ৪-০ গোলে জয় পায় ছোটনের শিষ্যারা। সর্বশেষ ২০১৮ সালে একই আসরেও জেতে লাল-সবুজরা। এবারের ব্যবধানটা আরও বড় ৭-০। টুর্নামেন্ট উপলক্ষে শনিবার বেলা ৩টার পরে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে)। এই সংবাদ সম্মেলনে শুধু উপস্থিত ছিল বাংলাদেশ দল। অন্য পাঁচ দল না আসার কারণ ছিল, কোন দল তখনও ঢাকায় না আসা, কোন দল অল্প সময় আগে ঢাকায় আসায় ক্লান্ত হওয়ায় বিশ্রামে থাকায়। প্রথম দল হিসেবে শুক্রবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে ঢাকায় আসে তাজিকিস্তান। শনিবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে আসে আমিরাত, দুপুর ১টায় আসে মঙ্গোলিয়া এবং সন্ধ্যা ৬টায় লাওস। সর্বশেষ দল হিসেবে কিরগিজস্তান ঢাকায় আসবে আজ রবিবার ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে। সোমবার প্রধান অতিথি হিসেবে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। টুর্নামেন্ট স্মরণীয় করে রাখতেই এই আসরের ট্রফি জিততে চায় বাংলাদেশ। মোট কথা, ঘরের ট্রফি ঘরেই রেখে দিতে চায় লাল-সবুজরা। প্রথমবারের মতো হতে যাওয়া টুর্নামেন্টটি স্মরণীয় করে রাখতেই দ্রুতগতির ফুটবল খেলে শিরোপা জিতে ট্রফিটি ঘরে রাখতে চায় টিম বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে নিজেদের লক্ষ্য সম্পর্কে মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, মেয়েদের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ নতুন মাত্রা যোগ করবে। এই টুর্নামেন্ট দিয়ে আরও সামনে এগিয়ে যাবে মেয়েরা। ম্যাচ বাই ম্যাচ জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফাইনালিস্ট হওয়াই আমাদের লক্ষ্য। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, মেয়েরা ধারাবাহিকভাবে অনুশীলনের মধ্যেই আছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ মার্চের মধ্যে আমরা দু’টি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছি। সেই অভিজ্ঞতাগুলো এই টুর্নামেন্টে আমাদের অনেক কাজে আসবে। সেখানে আমাদের যে ভুলত্রুটিগুলো ছিল সেগুলো নিয়ে কাজ করা হয়েছে। সাফের পর মাত্র ৭ দিনের শারীরিক ও মানসিক রিকভারি করেছে মেয়েরা। ২৮ মার্চ থেকে আবারও অনুশীলনেই ছিল তারা। দলীয় অধিনায়ক মিশরাত জাহান মৌসুমী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মায়ের নামে টুর্নামেন্ট। সেটি স্মরণীয় করে রাখতে নিজেদের ঘরে ট্রফি ধরে রাখতে আমরা সর্বোচ্চটা দেব। আমাদের ভাল প্রস্তুতি হয়েছে। দলের সবাই সুস্থ আছে। আমরা যেন ভাল ফল উপহার দিতে পারি সে জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। সহকারী অধিনায়ক মারিয়া মান্দার ভাষ্য, নেপাল ও মিয়ানমারে আমাদের যে ভুলত্রুটিগুলো ছিল সেগুলো শুধরে নিয়ে উন্নতি করেছি। টুর্নামেন্টে আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ এগোতে চাই। গত মার্চে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেয়া বাংলাদেশ দলের একমাত্র সাবিনা খাতুনই অনুর্ধ-১৯ দলে ঠাঁই পাননি। সেটা বয়সের কারণে। দলের বাকিরা কোন না কোন বয়সভিত্তিক দলে এর আগেও খেলেছেন। দলের একমাত্র নতুন মুখ ফরোয়ার্ড মোসাম্মৎ সুলতানা। কোচ ছোটন আরও জানালেন, আমরা প্রথমত গ্রুপের ম্যাচগুলোতে জিততে চাই। এরপর সেমিফাইনাল জিতে ফাইনালে খেলতে চাই। টুর্নামেন্টটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ঘরের ট্রফি ঘরেই রাখতে চাই আমরা। মেয়েরা ট্যাকটিক্যালি এবং টেকনিক্যালি কতটা উন্নতি করেছে সেটি তো আপনারা মাঠেই দেখেছেন। জাতিগত কারণেই বাংলাদেশের মেয়েদের চেয়ে ফিজিক্যালি অনেক এগিয়ে প্রতিপক্ষ অন্য দেশগুলো। সেটি মাথায় রেখেই রণকৌশল প্রণয়ন করবেন ছোটন। মঙ্গোলিয়া এবং লাওস বাংলাদেশের জন্য অচেনা প্রতিপক্ষ। তবে তাজিকিস্তানের বিপক্ষে অনুর্ধ-১৯ পর্যায়ে এবং কিরগিজস্তানের বিপক্ষে অনুর্ধ-১৬ পর্যায়ে খেলেছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কোন প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা হয়নি বাংলাদেশের। অবশ্য এ নিয়ে ভাবিত নন ছোটন, আমরা সাম্প্রতিক সময়ে ৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছি। সেগুলোকেই প্রস্তুতি হিসেবে ধরে নিয়েছি। সিনিয়র পর্যায়ে তার দল এখনও চূড়ান্ত সাফল্য না পেলেও বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টগুলোতে কিন্তু দুর্বার বাংলাদেশ। পাঁচটি শিরোপা জিতেছে লাল-সবুজরা ছোটনের অধীনে। এগুলো হলো : এএফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা চ্যাম্পিয়ন (আঞ্চলিক) আসরে দু’বার (২০১৫ ও ২০১৬), এএফসি অনুর্ধ-১৬ আসরের (২০১৬) আঞ্চলিক বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন একবার, সাফ অনুর্ধ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে (২০১৭) একবার এবং জকি ক্লাব গার্লস ইন্টাঃ ইয়ুথ ইনভাইটেশনাল ফুটবল টুর্নামেন্টে (২০১৮) একবার। এছাড়া রানার্সআপ হয়েছে সাফ অনুর্ধ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে (২০১৮) এবং এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বে (২০১৯)। বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ জাতীয় নারী ফুটবল দল ॥ রূপনা চাকমা, মাহমুদা আক্তার, ইয়ামিন আক্তার, মাসুরা পারভীন, নার্গিস খাতুন, আঁখি খাতুন, শিউলি আজিম, মিশরাত জাহান মৌসুমী (অধিনায়ক), শামসুন্নাহার সিনিয়র, নিলুফার ইয়াসমীন নীলা, নাজমা আক্তার, মারিয়া মান্দা (সহ-অধিনায়ক), মনিকা চাকমা, ইশরাত জাহান রত্না, মারজিয়া আক্তার, রাজিয়া খাতুন, সানজিদা আক্তার, সিরাত জাহান স্বপ্না, কৃষ্ণা রানী সরকার, শামসুন্নাহার জুনিয়র, সাজেদা খাতুন, তহুরা খাতুন এবং মোসাম্মৎ সুলতানা।
×