স্টাফ রিপোর্টার ॥ দাদির কাছে গল্প শুনেছি, যখন ছুটির সময় হতো তখন দাদি আমগাছের নিচে এসে দাঁড়াতেন। খোকা আসবে, দূর থেকে রাস্তার ওপর নজর রাখতেন। একদিন দেখেন তার খোকা গায়ের চাদর জড়িয়ে হেঁটে আসছে, পরনের পায়জামা-পাঞ্জাবি নেই। কী ব্যাপার? এক গরিব ছেলেকে তার শত ছিন্ন কাপড় দেখে সব দিয়ে এসেছেন। এভাবেই বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশবকে স্মৃতিকথায় মেলে ধরেছিলেন মেয়ে শেখ হাসিনা। স্মৃতিকথামূলক সেই আত্মজৈবনিক গ্রন্থের শিরোনাম ছিল ‘আমার পিতা শেখ মুজিব’। এবার সেই বইটি অবলম্বনে রাকীব রাজ্জাক ও আবদুল্লাহ মামুনের চিত্রাঙ্কনের আশ্রয়ে প্রকাশিত হলো নতুন গ্রাফিক নভেল ‘খোকা যখন ছোট্ট ছিলেন’। জাতির জনকের শৈশবকে চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। জুনায়েদ হালিম ও দুরন্ত বিপ্লবের সম্পাদনায় বইটি রচনা করেছেন সুদীপ্ত সাহা ও সাজ্জাদ আহমেদ। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে গবেষণাধর্মী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন হাসুমণির পাঠশালা। একইসঙ্গে গ্রাফিক নভেলটি অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে গ্রাফিক চলচ্চিত্র। সাজ্জাদ আহমেদের চিত্রনাট্যে এটি পরিচালনা করেছেন সুদীপ্ত সাহা। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের শ্রদ্ধার্ঘ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে গ্রন্থটি এবং নির্মিত হয়েছে গ্রাফিক চলচ্চিত্র। শনিবার সকালে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে বইটির মোড়ক উন্মোচন ও চলচ্চিটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। সেই সঙ্গে ছিল প্রদর্শনালয়জুড়ে সজ্জিত ছিল শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর, তারুণ্য থেকে নানা বয়সের চিত্রকর্ম। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি। প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। হাসুমণির পাঠশালার সভাপতি মারুফা আক্তার পপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আকরাম আল হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম এ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের অধ্যাপক জোনায়েদ হালিম।
উদ্বোধনী বক্তব্যে শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আপোসহীন নেতা। আজীবন অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে লড়াই সংগ্রাম করেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর জীবন আদর্শ আমাদেরকে তার গভীর জীবনবোধ, রাজনৈতিক দর্শন এবং দেশ ও জনগণের প্রতি অপরিসীম ভালবাসার কথাই মনে করিয়ে দেয় প্রতিনিয়ত। নদী, মাটি আর কাদাজল মেখে বেড়ে ওঠা খোকা ছিলেন অদম্য সাহসী আর প্রতিবাদী। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই মহান নেতা যিনি ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে ভয় পাননি। দেশের মানুষের প্রতি নিবিড় ভালবাসা বঙ্গবন্ধুর আসন স্থায়ী করে রেখেছে প্রতিটি বাঙালীর হৃদয়ে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা জাতির জীবনে সব সময় আসে না। আমরা ধন্য যে বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা পেয়েছিলাম। আর সেই মহান নেতার শিশুবেলাকে শিশুদের মানস উপযোগী করে মেলে ধরা হয়েছে এই গ্রাফিক নোবেলে। খোকা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর বেড়ে ওঠা এবং শৈশবেই মানুষের প্রতি তার ভালবাসার চিত্র উঠে এসেছে বইটিতে। গ্রন্থটিতে শিশুদের কাছে পৌঁছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হবে। পাশাপাশি প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু বুক কর্নার গড়ারও উদ্যোগ নেয়া হবে।
কে এম খালিদ বলেন, পৃথিবীর কোন দেশেই জাতির পিতাকে নিয়ে বিতর্ক নেই। সে রকম আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে না। এ বিষয়ে কোন আপোস চলবে না। একটি মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সুপরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও চেতনা ছড়িয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
মারুফা আক্তার পপি জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে হাসুমণির পাঠশালার উদ্যোগে দেশব্যাপী ‘আমার পিতা শেখ মুজিব’ উৎসব পর্যায়ক্রমে সারাদেশে পরিচালিত হবে।
বইটির মোড়ক উন্মোচন ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনভিত্তিক ধারাবাহিক চিত্রকর্মের উদ্বোধন হয়। সে সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে উপজীব্য করে সৃজিত সূচিশিল্পও প্রদর্শিত হচ্ছে। এ প্রদর্শনী শেষ হবে আজ রবিবার।