ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বেতনের দাবিতে বাড্ডায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের রাস্তা অবরোধ

প্রকাশিত: ১১:০০, ২১ এপ্রিল ২০১৯

বেতনের দাবিতে বাড্ডায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের রাস্তা অবরোধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাসের প্রথম সপ্তাহে বেতনের দাবিতে স্টার গার্মেন্টস লিমিটেড নামে ঢাকার একটি তৈরি পোশাক কারখানার শত শত কর্মী রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। টানা প্রায় এক ঘণ্টার বিক্ষোভে বাড্ডা, রামপুরা এলাকা, গুলশান লিংক রোড, কুড়িল বিশ্বরোড, বসুন্ধরা, যমুনা ফিউচারপার্কসহ আশপাশের এলাকা পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছিল। তবে বিক্ষোভকালে শ্রমিকরা কোন যানবাহনে ভাংচুর করেনি। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। শনিবার বেলা সোয়া এগারোটার দিকে ঘটনার সূত্রপাত। ঢাকার মধ্যবাড্ডার মোল্যা টাওয়ারের কাছেই ছয়তলা স্টার গার্মেন্টস লিমিটেডের অবস্থান। বিক্ষোভকারীদের ভাষ্য, মার্চের বেতন এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে দেয়ার কথা ছিল। বেতন না দেয়ার সূত্র ধরে গার্মেন্টসের শ্রমিকদের মধ্যে অস্থিরতা চলছিল। সর্বশেষ রবিবার পবিত্র শব-ই-বরাতের আগের দিন শনিবার বেতন পরিশোধের কথা দিয়েছিল মালিকপক্ষ। কিন্তু সকাল দশটা বাজার পরেও মালিকপক্ষের বা হিসাব বিভাগের কোন লোকজন অফিসেই আসেনি। এতে করে শ্রমিকদের মধ্যে বেতন পাওয়া নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়। বেলা এগারোটা পর্যন্ত তারা গার্মেন্টসের ভেতরেই অবস্থান করতে থাকে। নানাভাবে মালিকপক্ষের সঙ্গে গার্মেন্টস ও গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের লোকজনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু মালিকপক্ষের কোন লোকজনকেই পাওয়া যায়নি। এরই প্রেক্ষিতে শ্রমিকরা গার্মেন্টসের সামনের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। গার্মেন্টসের প্রায় নয়শ’ শ্রমিক রাস্তাজুড়ে অবস্থান নেয়। তারা রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করেনি। তবে রাস্তায় অবস্থানের কারণে যানবাহন স্বাভাবিক কারণেই বন্ধ হয়ে যায়। বেলা সোয়া এগারোটা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা গার্মেন্টস শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এতে করে মধ্যবাড্ডা, রামপুরা, বাড্ডার দিক থেকে গুলশান যাওয়ার লিংক রোড, কুড়িল বিশ্বরোডসহ আশপাশের সব এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুরো এলাকার জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে। প্রচ- রোদের মধ্যে যানজটের কবলে পড়া লোকজনের মধ্যে রীতিমতো নাভিশ্বাস ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এদিকে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকেই অতিরিক্ত পুলিশ পুরো এলাকায় নজরদারি বাড়ায়। বাড্ডা থানার ওসি মোঃ রফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, প্রচ- রোদে বিক্ষোভকালে শ্রমিকরা অস্থির হয়ে পড়েছিল। তাদের মধ্যে বাড়তি উত্তেজনা বিরাজ করছিল। অন্যদিকে মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ না হওয়ায় এবং কোন প্রকার সাড়া না পাওয়ায় পরিস্থিতি আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হ্যান্ডমাইকযোগে শ্রমিকদের উদ্দেশে নানা ঘোষণা দিয়ে পরিবেশ অনুকূলে রাখার চেষ্টা করা হয়। পাশাপাশি মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপের কারণে মালিকপক্ষ ঘটনাস্থলে আসে। এরপর শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মালিকপক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। রাস্তায় আগের মতোই স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, গার্মেন্টসটিতে নয়শ’ শ্রমিক আছে। গত পাঁচ মাস ধরে গামের্ন্টসটি নিয়মিত বেতন দিতে পারছে না। কোন কোন মাসের বেতন পরের মাসের শেষের দিকে দিচ্ছে। এতে করে শ্রমিকরা পড়েছেন মহাবিপাকে। কারণ অধিকাংশ শ্রমিকদেরই মাসের প্রথম সপ্তাহেই বাসা ভাড়া দিতে হয়। নিয়মিত বাসা ভাড়া না দিতে পারলে শ্রমিকদের নানা আপত্তিকর কথা শুনতে হয় বাড়িওয়ালার কাছে। এজন্য গত পাঁচ মাস ধরেই শ্রমিকরা মালিকপক্ষের ওপর বেশি ক্ষিপ্ত। গার্মেন্টসটিতে সর্বমোট ৭৬ লাখ টাকা বেতন। শব-ই-বরাতের আগে বেতন না দেয়ার সূত্র ধরেই অবরোধের ঘটনাটি ঘটেছে।
×