ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির আগেই আমরা সফল হব

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ২১ এপ্রিল ২০১৯

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির আগেই আমরা সফল হব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গণফোরামের রাজনৈতিক দর্শনের কথা উল্লেখ করে দলটির সভাপতি ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘আমরা গর্ব করি যে, আমরা টাকার বিনিময়ে রাজনীতি করি না। আমরা ধর্মকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতি করি না। আমরা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করি জনগণের ওপর ভিত্তি করে।’ গণফোরাম এখন আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে দাবি করে একে আরও শক্তিশালী করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক কামাল হোসেন। শনিবার নিজের ৮৩তম জন্মদিনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন তিনি। সভা শুরুর আগে দলের নেতাকর্মীরা কামাল হোসেনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর দলীয় নেতা-কর্মী ও শুভাকাক্সক্ষীদের নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটেন কামাল হোসেন। নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু দলের সভাপতিকে কেক খাইয়ে দেন। বৈঠক শুরুর আগে জন্মদিনের সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে একজন শিল্পী দুটি গানও গেয়ে শোনান। এসময় উপস্থিত ছিলেন গণফোরাম নেতা মফিজুল ইসলাম খান কামাল, আলতাফ হোসেন, সিরাজুল হক, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, রেজা কিবরিয়া, আ ম সা আ আমিন, মহসিন রশিদ, জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোশতাক আহমেদ, রফিকুল ইসলাম পথিক প্রমুখ। কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যেসব তরুণ সম্পৃক্ত ছিল তাদের জন্য সামনের দিনগুলোতে উজ্জ্বল ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে এমন ভবিষ্যত বাণীর কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির আগেই জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে সফল হবে। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হবে। ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে সফল হবে। আমরা স্বাধীনতার ৫০ বর্ষপূর্তির আগেই সফল হব। দেশ আরও এগিয়ে যাবে। তিনি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। গণফোরামে নতুন যোগ দেয়া নেতাদের নাম উল্লেখ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, তারা প্রত্যেকেই বিশিষ্ট ব্যক্তি। তারা নিজ নিজ জায়গায় বিখ্যাত এবং গ্রহণযোগ্য। কামাল হোসেন বলেন, এবার ভাল ভাল লোকজন এগিয়ে এসে আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন। তারা যোগদান করছেন এজন্য যে, আমাদের দল কর্মক্ষম, আমাদের দলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং তারা এসে অবদান রাখতে চান। তাই আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ হবে সাংগঠনিক কাজে নিজেদের নিয়োজিত করা। সদস্য সংগ্রহ বাড়াতে হবে। এটা বাড়াতে হবে এই কারণে যে আমরা মনে করি, এই দলটি দেশের জাতীয় দল যা সকল মহলের প্রতিনিধিত্ব করবে। প্রায় তিন দশক আগে আওয়ামী লীগ ছেড়ে গণফোরাম গঠনের পর এখনই দলটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত। গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে ভোটে অংশ নেয়ার পর অনেকে এই দলে যোগ দেন। হঠাৎ করে বিএনপির সঙ্গে তিনি গাটছড়া বাঁধায় সমালোচিতও হতে হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। তবে এই প্রথম সংসদ নির্বাচনে দুটি আসনে বিজয়ীও হয়েছে কামাল হোসেনের দল। ভোটের ফল প্রত্যাখ্যানের পর পুনর্নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে গণফোরাম। গঠনমূলক রাজনীতির মধ্য দিয়ে পরিবর্তন আনতে চাওয়ার কথা জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, যে পরিবর্তন সবাই চাচ্ছে সেটা হচ্ছে কার্যকর গণতন্ত্র। আমাদের এই গঠনমূলক রাজনীতির মধ্য দিয়ে, গঠনমূলক কর্মসূচীর ভিত্তিতে যে রাজনীতি দেশে গড়ে উঠছে, তার মধ্য দিয়ে আকাক্সিক্ষত পরিবর্তন আমরা আগামীতে আনতে পারব দেশে। আবারও দলকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে শক্তিশালী সংগঠন ছাড়া অর্থপূর্ণ কাজ করা যাবে না, দেশে পরিবর্তন আনা যাবে না। আমরা গর্ব করি যে, আমরা টাকার বিনিময়ে রাজনীতি করি না। আমরা ধর্মকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতি করি না। আমরা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করি জনগণের ওপর ভিত্তি করি। অবিভক্ত ভারতের কলকাতায় ১৯৩৭ সালে কামাল হোসেনের জন্ম। তিনি বিয়ে করেছেন মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেনকে। তাদের দুই মেয়ে সারা হোসেন ও দিনা হোসেন। কামালের শিক্ষাজীবন শুরু কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে ১৯৪৪ সালে। ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুলে মাধ্যমিক এবং নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন তিনি। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের নটর ডেম ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৫৫ সালে অর্থনীতিতে ডিগ্রী নেন কামাল। এরপর ১৯৫৭ সালে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন শাস্ত্রে স্নাতক এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ ও ১৯৬৪ সালে যথাক্রমে বিসিএল ও ডক্টরেট ডিগ্রী নেন। ১৯৫৯ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতিও ছিলেন। স্বাধীনতার আগে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া কামাল হোসেন ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান তৈরির জন্য যে কমিটি হয়েছিল, সেই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামালে তিনি প্রথমে আইনমন্ত্রী, পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্যও ছিলেন কামাল। ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে ১৯৯৩ সালে গঠন করেন গণফোরাম। গত বছর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তিনি বিএনপি, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, নাগরিক ঐক্যকে নিয়ে গঠন করেন সরকারবিরোধী নির্বাচনী জোট ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। এই জোটের শীর্ষনেতা হিসেবে সক্রিয় রয়েছেন তিনি।
×