ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে হানিফ

বিএনপির সংসদে যেতে খালেদার মুক্তি শর্ত হতে পারে না

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২১ এপ্রিল ২০১৯

বিএনপির সংসদে যেতে খালেদার মুক্তি শর্ত হতে পারে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিএনপিকে সংসদে আনার কোন পরিকল্পনা সরকারের নেই জানিয়ে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তাদের সংসদে যাওয়া- না যাওয়ার সঙ্গে দ-িত কয়েদির মুক্তি বা জামিনের সম্পর্ক থাকতে পারে না। বরং দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে বিএনপির দরকষাকষি দেশের রাজনীতির জন্য বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। শনিবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক দলের সম্পাদকম-লীর সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সংসদে যাওয়া, না যাওয়ার সঙ্গে কারও (খালেদা জিয়া) মুক্তির সম্পর্ক নেই। কারণ যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা ভোটারদের কাছে দায়বদ্ধ। কোন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির মুক্তির জন্য ভোটাররা তাদের ভোট দেয়নি। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন নাহার লাইলী, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেন, ইকবাল হোসেন অপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়ার বিষয়ে মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘আমরা বার বার বলেছি, খালেদা জিয়া আদালতের দ-প্রাপ্ত আসামি। উনি কিন্তু রাজনৈতিক কারণে কারাগারে নয়। আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী একজন দ-প্রাপ্ত কয়েদির মুক্তির বিষয়টি আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। এর বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আর দ্বিতীয় আরেকটি পন্থা হচ্ছে, সেটা হলো কোন দ-প্রাপ্ত কয়েদি তার অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করলে তিনি মুক্তি পেতে পারেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বা বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এখন অবধি আবেদন করেছে কি না, আমাদের জানা নেই।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, কারাগারে থাকা কারও নিকট আত্মীয়দের মধ্যে কেউ মারা গেলে বা অসুস্থ হয়ে পড়লে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে প্যারোলে মুক্তি পাওয়া যায়। এজন্য যিনি প্যারোলে মুক্তি নিতে চান তাকে অথবা তার পরিবারের কোন সদস্যকে আবেদন করতে হবে। বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য বা প্যারোলের জন্য কেউ আবেদন করেছে বলে তাঁর জানাই নেই উল্লেখ করে হানিফ আরও বলেন, কারাগারে থাকা কোন ব্যক্তি যদি গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে মেডিক্যাল বোর্ডের সুপারিশ নিয়েও চিকিৎসার জন্য তিনি বিদেশে যেতে পারেন। বেগম জিয়ার প্যারোলে মুক্তি চেয়ে বিএনপির নেতারা বা তাঁর পরিবারের কোন সদস্য আবেদন করেননি। তাঁর চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল বোর্ডও বিদেশে চিকিৎসার জন্য কোন পরামর্শ দেয়নি। এ ধরনের কোন পরিস্থিতি হলে আদালত তা বিবেচনা করবে। সংসদে বিএনপির যোগদান প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, নিশ্চয়ই কোন ভোটার কাউকে মুক্তির জন্য কিংবা দ-প্রাপ্ত কয়েদির মুক্তির জন্য তাঁকে (এমপি) ভোট দেয়নি। বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে সংসদে শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত যারা নিয়েছেন, এটা একটা খুব বাজে সিদ্ধান্ত হিসেবে বাংলাদেশে থাকবে। ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনকে গ্রেফতার করার পর দল থেকে কোন ব্যবস্থা নেবেন কি না, তা জানতে চাইলে জবাবে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, কেউ যদি অপরাধী হিসেবে প্রমাণিত হয়, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে দলের যারা কাজ করেছেন, তাদের বিষয়ে হানিফ বলেন, বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন তারা। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয়, তখন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা হিসেবে পদক্ষেপ নিতে পারব। সম্পাদকম-লীর সভার বিষয়ে হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন এবং দলকে তৃণমূল থেকে ঢেলে সাজানোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতির পিতার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে নানা ধরনের স্মৃতি জড়িত রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কারও কোন স্মৃতি থাকলে, সে সকল স্মৃতির সঙ্গে জড়িত কেউ বেঁচে থাকলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সে সকল স্মৃতি সংগ্রহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে কারও কাছে কোন ছবি থাকলে সেগুলো সংগ্রহ করা এবং বঙ্গবন্ধুর হাতের লেখা চিঠি কারও কাছে থাকলে তা সংগ্রহ করার জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সারাদেশে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে জোরদার করতে গঠিত আটটি টিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা এ কার্যক্রম দেখভাল করবেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উপ-কমিটি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে জমা দেবে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ অনুমোদন দেয়ার পর তা বাস্তবায়িত হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে গঠিত জাতীয় কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে দলীয় কর্মসূচী প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। আর তৃণমূল থেকে আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ জন্য দায়িতপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা কর্মপদ্ধতি ঠিক করবেন। আর দলের ডাটাবেজ তৈরি করতে সকল পর্যায়ের নেতাদের যাবতীয় তথ্য কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×