ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুবীর নন্দীর কাগজপত্র সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়েছে

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ২১ এপ্রিল ২০১৯

সুবীর নন্দীর কাগজপত্র সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরেণ্য শিল্পী সুবীর নন্দীর অসুস্থতার সর্বক্ষণিক খবর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশেই চিকিৎসাধীন এই শিল্পীর চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যবস্থাপত্র সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমতি এলে এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে করে শিল্পীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেয়া হবে। আজ রবিবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। শনিবার রাতে এ তথ্য জানান শিল্পীর পারিবারিক বন্ধু জাতীয় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক সামন্তলাল সেন। এ বিষয়ে সামন্তলাল সেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইতোমধ্যেই সকল ব্যবস্থাপত্র সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তারা সেগুলো পেয়েছেনও। তবে সমস্য হলো শনি ও রবিবার তাদের অনেক কাজ বন্ধ থাকে। আমি আগামীকাল (২১ এপ্রিল) সকালে সুবীর নন্দীকে দেখতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে যাব। এর মধ্যে সেখানে থেকে কোন ডাক এলে আমরা সেখানে নেয়ার বিষয়ে বাকি সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারব। এদিকে গত শুক্রবার বরেণ্য এই শিল্পীর সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে সন্ধ্যায় গণভবন যান চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। এই দলে ছিলেন সামন্তলাল সেন, শিল্পী রফিকুল আলম, তপন চৌধুরী ও কুমার বিশ্বজিৎ। প্রধানমন্ত্রী সময় নিয়ে সুবীর নন্দীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেন। সামন্তলাল সেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী সুবীর নন্দীর বিষয়ে অনেক আন্তরিক এবং অনেক আগ থেকেই সুবীর নন্দীকে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি আরও যতœবান হওয়ার কথাও জানান তিনি। কারণ, দীর্ঘদিন ধরেই সুবীর নন্দী ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। পহেলা বৈশাখের রাতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয় শিল্পী সুবীর নন্দীকে। সে রাতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শিল্পীকে সিএমএইচে নিয়ে আসা হয়। অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকলে রাত ১১টার দিকে সুবীর নন্দীকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। সুবীর নন্দী দীর্ঘদিন ধরেই কিডনির অসুখে ভুগছেন। ল্যাব এইড হাসপাতালে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করানো হয় তার। কিডনি ছাড়াও বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন সুবীর নন্দী। একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী সুবীর নন্দী ৪০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আড়াই হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন। পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৫৩ সালের ১৯ নবেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার নন্দীপাড়ায় সুবীর নন্দীর জন্ম। প্রাইমারিতে পড়াকালীন মা পুতুল রানীর কাছে সঙ্গীতের হাতেখড়ির পর ওস্তাদ বাবর আলী খানের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নেন তিনি। সিলেট বেতারে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৬৭ সালে। এরপর ঢাকা রেডিওতে সুযোগ পান ১৯৭০ সালে। রেডিওতে তার প্রথম গান ‘যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয়’। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে গেয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। ১৯৭৬ সালে আবদুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্লেব্যাকে আসেন সুবীর নন্দী। সুবীর নন্দীর গাওয়া অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মধ্যে ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’, ‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘পাহাড়ের কান্না দেখে’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘আশা ছিল মনে মনে’, ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে’, ‘বন্ধু তোর বরাত নিয়া’, ‘তুমি এমনই জাল পেতেছ’, ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার’, ‘কতো যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, ‘আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি’, ‘ কেন ভালোবাসা হারিয়ে যায়’, একটা ছিল সোনার কইন্যা’, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’ মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
×