ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রথম আসরেই চ্যাম্পিয়ন হতে চায় বাংলার বাঘিনীরা

প্রকাশিত: ১০:৫০, ২১ এপ্রিল ২০১৯

প্রথম আসরেই চ্যাম্পিয়ন হতে চায় বাংলার বাঘিনীরা

রুমেল খান ॥ নিজেদের মাটিতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হবে জাতির জনকের সহধর্মিণীর নামে আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট। এই আসরকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রথম আসরেই বাজিমাত করতে চায় বাংলার বাঘিনীরা। ঘরের ট্রফি ঘরেই রেখে দিতে চায় লাল-সবুজবাহিনী। উপভোগ্য ফুটবল খেলার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে তারা। বঙ্গমাতা অনুর্ধ-১৯ নারী আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হচ্ছে কাল সোমবার থেকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হওয়া প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশ দলের প্রতিপক্ষ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। বাংলাদেশ বাদে এশিয়ার পাঁচ অঞ্চলের ৫ দল থাকছে এই টুর্নামেন্টে। গ্রুপিং অনুযায়ী বাংলাদেশ পড়েছে ‘বি’ গ্রুপে। এই গ্রুপের অন্য দেশটি হলো কিরগিজস্তান। ‘এ’ গ্রুপে আছে মঙ্গোলিয়া, তাজিকিস্তান এবং লাওস। টুর্নামেন্টের প্রতিটি খেলাই সরাসরি সম্প্রচারিত হবে বাংলাদেশ টেলিভিশন, নাগরিক টিভি এবং আরটিভিতে। এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ দলকে যথাক্রমে ১৫ হাজার ও ১০ হাজার ডলার অর্থ পুরস্কার দেয়া হবে। লন্ডনের বিখ্যাত ট্রফি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইনকারমেন্টের তৈরি ট্রফির আনভেলিং সিরোমনি আয়োজন করবে বাফুফে। টুর্নামেন্টের ট্রফিটি তৈরি করা হয়েছে সোনার প্রলেপ দিয়ে। এছাড়া চ্যাম্পিয়ন দলকেও দেয়া হবে সোনার মেডেল। বিনা টিকেটে ম্যাচ দেখার সুযোগ পাবে স্কুল শিক্ষার্থীরা। তবে সাধারণ দর্শকদের ৫০ এবং ২০০ টাকা মূল্যের টিকেট কিনে খেলা দেখতে হবে। টিকেট পাওয়া যাবে বাফুফে ভবনে এবং বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গেটগুলোতে। এই টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখা যেতে পারে ফিফা কিংবা এএফসির বড় কোন কর্মকর্তাকে। খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা ইস্যুতে সব মন্ত্রণালয়কে কাজ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাফুফে। তবে টুর্নামেন্টটি বিঘিœত হতে পারে ঝড়-বৃষ্টি-বজ্রপাতে। সামান্য বৃষ্টি হলেই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের মাঠটি জলমগ্ন হয়ে খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তখন জল নিষ্কাশন করতে বাফুফেকে অবলম্বন করতে হয় প্রাচীন পদ্ধতি, যেটা চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের কয়েকটি ম্যাচেই দেখা গেছে। সেটা হলোÑ বল বয়রা হার্ডবোর্ড দিয়ে মাঠের জল হাতে সেচে সরায়। কিন্তু তাতে খেলা শুরু করতে ঘণ্টাখানেক লেগে গেছে। বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টেও কি এমন দৃশ্য দেখা যাবে? বাফুফে জানিয়েছেÑ এমনটা হলে মাঠ খেলার উপযোগী করে তুলতে তারা তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে জল নিষ্কাশন করার চেষ্টা করবে। এক্ষেত্রে তারা প্রয়োজনীয় জনবল ও দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। জাতীয় বা সিনিয়র দলের শিরোপা-সাফল্য না থাকলেও বিভিন্ন বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে কিন্তু বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের ঈর্ষণীয় সাফল্য লক্ষণীয়। সেই পরিসংখ্যানের আলোকেই আশা করা হচ্ছে আগামী ৩ মে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় ফাইনালে প্রতিপক্ষ দলকে হারিয়ে আরেকটি শিরোপা জিতে নিজেদের সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত করবে বাংলার বাঘিনীরা। সেই লক্ষ্যে কাল সোমবার টুর্নামেন্টের ও নিজেদের প্রথম ম্যাচেই খেলতে নামছে তারা। অনুর্ধ-১৯ বা সিনিয়র পর্যায়ে না খেললেও আমিরাতের বিরুদ্ধে অনুর্ধ-১৬ পর্যায়ে এর আগে তিনবার খেলার অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশ দলের। এএফসি অনুর্ধ-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে ২০১৪ সালে প্রথম সাক্ষাতে বাংলাদেশ ৬-০ গোলে জেতে। একই আসরে ২০১৬ সালে ৪-০ গোলে জয় পায় ছোটনের শিষ্যারা। সর্বশেষ ২০১৮ সালে একই আসরেও জেতে লাল-সবুজরা। এবারের ব্যবধানটা আরও বড় ৭-০। সোমবার প্রধান অতিথি হিসেবে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। গত মার্চে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেয়া বাংলাদেশ দলের একমাত্র সাবিনা খাতুনই অনুর্ধ-১৯ দলে ঠাঁই পাননি। সেটা বয়সের কারণে। দলের বাকিরা কোন না কোন বয়সভিত্তিক দলে এর আগেও খেলেছেন। দলের একমাত্র নতুন মুখ ফরোয়ার্ড মোসাম্মৎ সুলতানা। মঙ্গোলিয়া এবং লাওস বাংলাদেশের জন্য অচেনা প্রতিপক্ষ। তবে তাজিকিস্তানের বিপক্ষে অনুর্ধ-১৯ পর্যায়ে এবং কিরগিজস্তানের বিপক্ষে অনুর্ধ-১৬ পর্যায়ে খেলেছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কোন প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা হয়নি বাংলাদেশের। অবশ্য এ নিয়ে ভাবিত নন কোচ ছোটন, আমরা সাম্প্রতিক সময়ে ৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছি। সেগুলোকেই প্রস্তুতি হিসেবে ধরে নিয়েছি। সিনিয়র পর্যায়ে তার দল এখনও চূড়ান্ত সাফল্য না পেলেও বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টগুলোতে কিন্তু দুর্বার বাংলাদেশ। পাঁচটি শিরোপা জিতেছে লাল-সবুজরা ছোটনের অধীনে। এখন দেখার বিষয়, সংখ্যাটিকে ছয়ে উন্নীত করতে পারেন কি না তিনি।
×