ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে তেল পরিশোধনের ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে বেসরকারী উদ্যোক্তাকে

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ২১ এপ্রিল ২০১৯

দেশে তেল পরিশোধনের ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে বেসরকারী উদ্যোক্তাকে

রশিদ মামুন ॥ পেট্রোকেমিক্যাল নীতিমালায় বেসরকারী উদ্যোক্তাকে দেশে তেল পরিশোধনের ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে। এখন কনডেনসেট (গ্যাসের উপজাত), ন্যাপথা আমদানি করে তা পরিশোধন করে বিক্রি করাতে পারেন পেট্রোকেমিক্যাল প্ল্যান্টের মালিকরা। তবে সরকার এই নীতিমালা চূড়ান্ত করার পর অপরিশোধিত জ¦ালানি তেল আমদানি করে দেশে পরিশোধন করতে পারবেন বেসরকারী উদ্যোক্তারা। সম্প্রতি জ¦ালানি বিভাগ যে খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করেছে তার ধারা ৩ এ অপরিশোধিত তেল বা ক্রুড অয়েল আমদানির বিধান সংযোজন করা হচ্ছে। দেশের একটি প্রভাবশালী শিল্প গ্রুপ অনেক দিন থেকে অপরিশোধিত জ¦ালানি তেল পরিশোধন এবং বিক্রির জন্য সরকারের কাছে অনুমতি চেয়ে আসছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে তাদের চাওয়ার অর্ধেকটা পূরণ হতে যচ্ছে। তবে পরিশোধনের পর এই তেল খোলা বাজারে চুরি করে বিক্রি করলে সরকারের রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি সৃষ্টি হতে পারে। যে কারণে নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগে বিষয়টি বিশেষ বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে বেসরকারী উদ্যোক্তারা গ্যাসের উপজাত কনডেনসেট নিয়ে পরিশোধন করে বিপিসির কাছে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিপিসির তেলে বিক্রি বৃদ্ধির বদলে কমে গেলে বিষয়টির অনুসন্ধানে নামে বিপিসি। দেশের পেট্রোলপাম্পগুলোতে অভিযান চালিয়ে দেখা যায় পেট্রোকেমিক্যাল প্ল্যান্টের মালিকরা পরিশোধন না করে সরাসরি খোলাবাজারে এসব তেল বিক্রি করছে। পরে এ বিষয়ে বিপিসি কঠোর হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ¦ালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ ছোট ছোট পেট্রোকেমিক্যাল প্লান্ট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে বিপিসি। এখন ক্রুড অয়েল আমদানি করে বড় আকারের পরিশোধন ক্ষমতা দিলে তারা যে পরিশোধিত তেল দেশের অভ্যন্তরে বিক্রি করবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? তিনি বলেন, এতদিন যেসব পেট্রোকেমিক্যাল প্ল্যান্ট খোলা বাজারে তেল বিক্রি করছিল তাদের পেট্রোবাংলা কনডেনসেট সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু পরে নানামুখী চাপে তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। অর্থাৎ সরকার তাদের কোন শাস্তি দেয়া তো দূরের কথা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও কঠোর হতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দেশে এখন একমাত্র জ¦ালানি তেল পরিশোধন ক্ষমতা রয়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারির। ইস্টার্ন রিফাইনারি বছরে ১৫ লাখ টন জ¦ালানি তেল পরিশোধন করতে পারে। এর বাইরে দেশের কনডেনসেট থেকে উৎপাদিত পেট্রোল ও অকটেন সরবরাহ করে থাকে পেট্রোবাংলা এবং বেসরকারী উদ্যোক্তাদের ফ্যাকশনেসন প্ল্যান্ট। এসব কারখানা গ্যাস ক্ষেত্রের উপজাত কনডেনসেট ব্যবহার করে। এর বাইরে সব জ¦ালানি তেলই দেশের বাইরে থেকে পরিশোধিত অবস্থায় আমদানি করা হয়। প্রতি বছর দেশে জ¦ালানি তেলের চাহিদা রয়েছে ৬০ লাখ টনের মতো। এই চাহিদা দিনের পর দিন আরও বাড়ছে। এখন লিটার প্রতি তেল বিক্রি থকে সরকার সাত থেকে আট টাকা পর্যন্ত কর আদায় করে। এই কর ভোক্তার কাছ থেকে পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন আদায় করে সরকারের কাছে জমা দেয়। কিন্তু বেসরকারী উদ্যোক্তাদের হাতে ছেড়ে দিলে এই রাজস্ব আদায়েও টান পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটের ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে দেশে জ¦ালানি তেলের পরিশোধন ক্ষমতা বেড়ে হবে ৪৫ লাখ টন। এর মধ্যে বেসরকারী খাতে পরিশোধন ব্যবস্থা ছেড়ে দিলে সরকারী এই পরিশোধনাগারকে বসে থাকতে হবে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, ক্রুড অয়েল আমদানির ক্ষেত্রে বিপিসিকে নির্ধারিত হারে সরকারী রয়্যালটি দিতে হবে। উৎপাদিত ডিজেল সরকার নির্ধারিত দামে বিপিসির কাছে বিক্রি করা যাবে বা নিজস্ব উদ্যোগে রফতানি করা যাবে। কোন অবস্থায়ই দেশের বাজারে বিক্রি করা যাবে না। একই নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে জেট ফুয়েল, কেরোসিন ও অকটেনের ক্ষেত্রেও। তবে নীতিমালায় ফার্নেস অয়েল দেশের বিদ্যুত কেন্দ্রের কাছে সরাসরি বিক্রি করার বিধান রাখা হচ্ছে।
×