ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নুসরাত হত্যা ॥ আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন রিমান্ডে

জাবেদ ও মনির স্বীকারোক্তি, আরেক পরিকল্পনাকারী রানা গ্রেফতার

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ২১ এপ্রিল ২০১৯

জাবেদ ও মনির স্বীকারোক্তি, আরেক পরিকল্পনাকারী রানা গ্রেফতার

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলার আরেক পরিকল্পনাকারী রানাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে আলোচিত আসামি সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনকে ৫ দিনের রিমান্ড নিয়েছে পিবিআই। এছাড়া আসামি জাবেদ ও কামরুন নাহার মনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি জবানবন্দী দিয়েছে। এই ঘটনায় ব্যবহৃত একটি বোরকা উদ্ধার করা হয়েছে। নুসরাত হত্যাকান্ডে অর্থ লেনদেনে কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সিআইডি। তাদের খুঁজতে মাঠে নেমেছে তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ইফতেখার উদ্দিন রানা (২১) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মঈনউদ্দিন জানান, শুক্রবার শেষ রাতে রাঙ্গামাটি সদরের টিএ্যান্ডটি আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে রানাকে গ্রেফতার করা হয়। সে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারীদের একজন। সোনাগাজীর চরগনেশ এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে রানা ওই হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে রাঙ্গামাটি চলে গিয়েছিলেন বলে জানান তিনি। এদিকে ফেনীর নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, শনিবার বিকেলে নুসরাত আগুন পুড়িয়ে হত্যা মামলার আলোচিত আসামি সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনকে ৫ দিনের রিমান্ড নিয়েছে পিবিআই। এছাড়া আসামি জাবেদ ও কামরুন নাহার মনিকে আদালতে হাজির করেন। পরে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন। এর আগে শনিবার বিকেলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক শাহ আলম তাদের ফেনীর সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শারাফ উদ্দিনের আদালতে হাজির করেন। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই-এর পরিদর্শক মোঃ শাহ আলম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, বিকেলে এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত রুহুল আমিনকে রিমান্ডে নেয়ার জন্য আদালত আনা হয়। পরে আদালত তাকে ৫ দিন রিমান্ড দিয়েছে। এছাড়া আরেক অন্যতম আসামি জাবেদ ও কামরুন নাহার মনিকে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি জবানবন্দী দিতে রাজি হওয়ায় তাদের আদালতে আনা হয়। তিনি জানান, শুক্রবার সোনাগাজী তাকিয়া রোড থেকে রুহুল আমিনকে আটক করা হয়। আর কামরুন নাহার মনিকে ১৫ এপ্রিল সোনাগাজী থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৭ এপ্রিল তাকে ৭ দিনের রিমান্ড দেন আদালত। অপরদিকে জাবেদকে ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। ওইদিন থেকে তাকে ৭ দিনের রিমান্ড দেয়া হয়। শুক্রবার বিকেলে ফেনীর সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সারাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে আবারও জাবেদকে তিন দিনের রিমান্ড দেয়। পরিদর্শক শাহ আলম জানান, পরে জাবেদ ও কামরুন নাহার মনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেবেন বলে জানান। এরপরই তাদের শনিবার বিকেলে আদালতে আনা হয়। এদিকে এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া এজাহারভুক্ত আসামি নূর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন। তখন জাবেদ ও কামরুন নাহার মনির নাম উল্লেখ করেন তিনি। তারা জানান, জাবেদ ও মনি সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নেয়। জাবেদ নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়। মনি বোরকা সংগ্রহ ও নুসরাতের হাত-পা চেপে ধরে আগুন লাগিয়ে দেয়। অপরদিকে ওই ঘটনায় আওয়ামী লীগের রুহুল আমিন হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতেন বলেও এ দুইজনের জবানবন্দীতে উঠে আসে। কিলিং অপারেশনের পর কিলাররা রুহুল আমিনকে ফোন করেন। তখন রুহুল আমিন বলেন, আমি জানি, তোমরা চলে যাও। হত্যার মিশনের ব্যবহৃত বোরকাটি খাল থেকে উদ্ধার ॥ মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ব্যবহার করা একটি বোরকা উদ্ধার করেছে পিবিআই তদন্ত টিম। শনিবার দুপুরে পৌর শহরের সরকারী কলেজ সংলগ্ন ডাঙ্গি খাল থেকে বোরকাটি উদ্ধার করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফেনীর পিবিআই পরিদর্শক মোঃ শাহ আলম জানান, নুসরাতের সহপাঠী জোবায়ের এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। রিমান্ডে থাকা তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুপুরে সোনাগাজী সরকারী কলেজের পেছনের খাল থেকে তারা এই বোরকাটি উদ্ধার করেন। হত্যার সময় ব্যবহৃত তিনটি বোরকার মধ্যে একটি উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি বোরকাগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। জোবায়ের এই মামলার এজহারভুক্ত আট আসামির একজন। তাকে গত ৯ এপ্রিল সোনাগাজী থেকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, নুসরাত হত্যা মামলার অন্যতম আসামি গ্রেফতারকৃত জোবায়েরকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় পিবিআই। জোবায়েরের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাঙ্গি খাল থেকে হত্যাকা-ের ব্যবহৃত একটি বোরকা উদ্ধার করা হয়। কিলিং মিশনে অংশ নেয়া পাঁচজনের মধ্যে ছিল জোবায়েরও। ইতোমধ্যে আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে মামলাটির অন্যতম আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম জানিয়েছেন, নুসরাতে মেঝেতে শুইয়ে ফেলার পর নুসরাতের ওড়না দুই টুকরো করে হাত ও পা বেঁধে ফেলেন জোবায়ের। জাভেদ তখন রাফির সারা শরীরে কেরোসিন ঢেলে দেয়। এরপর শাহাদাত হোসেন শামীমের চোখের ইশারায় জোবায়ের তার পকেট থেকে দিয়াশলাই বের করে নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর পাঁচজনই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায়। নামতে নামতেই তিনজন ছাত্র তাদের বোরকা খুলে শরীর কাপড়ের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলে। ছাত্রী দু’জন মাদ্রাসায় তাদের পরীক্ষার কক্ষে চলে যান। আর বাকি তিনজন নিজেদের মতো করে পালিয়ে যায়। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার ইতোমধ্যে এজাহারভুক্ত আট আসামিসহ ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। পরিদর্শক শাহ আলম বলেন, নুসরাতের সহপাঠী জোবায়ের এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোনাগাজী সরকারী কলেজের পেছনে একটি খালে অভিযান চালানো হয়। এর আগে শুক্রবার দুপুরে অপর আসামি কামরুন নাহার মনির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআই জেনেছে সোনাগাজী পৌর শহরের মানিক মিয়া প্লাজার একটি দোকান থেকে মনি বোরকা কেনেন। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া পুরুষদের গায়ে যে তিনটি বোরকা ছিল তার একটি উদ্ধার করল পিবিআই। নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকাণ্ডে অর্থের যোগানদাতাদের খুঁজছে ॥ ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকাণ্ডে অর্থের যোগানদাতাদের খুঁজছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরইমধ্যে ওই ঘটনায় অর্থ লেনদেনে কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে বলেও জানা গেছে। এর সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। শনিবার দুপুরে রাজধানীর সিআইডি প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম এ কথা জানান। মোল্যা নজরুল বলেন, সম্প্রতি নুসরাত হত্যাকাণ্ডে অবৈধ অর্থ লেনদেনের অভিযোগ সংক্রান্ত সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে এ বিষয়টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি জানান, হত্যাকাণ্ড ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে কিংবা ঘটনা ধামাচাপা দিতে কোন অবৈধ লেনদেন হয়েছে কি না? কিংবা কে বা কারা এসব লেনদেনের সঙ্গে জড়িত সেসব বিষয় খতিয়ে দেখতে কাজ শুরু করছে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট। বিশেষ পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম জানান, নুসরাত হত্যাকাণ্ডে অনেকে টাকা ইনভেস্ট করেছেন। কেউ কেরোসিন কিনে দিয়েছেন। কেউ বোরকা কিনে দিয়েছেন। আবার কেউ এই ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য টাকা পয়সা ইনভেস্ট করেছেন। সুতরাং সিআইডি যেহেতু মানিলন্ডারিং দেখে থাকে সেখানে অবৈধ টাকার লেনদেন হয়েছে কিনা? সেটা আমরা খতিয়ে দেখি। মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, সংস্থার অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরা আগামী সপ্তাহে বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য ফেনীর সোনাগাজীতে যাবে। সেখানে সংশ্লিষ্ট অন্যসব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো হবে বলে জানান তিনি। সে বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল গ্রেফতারের পর স্বস্তি ॥ এদিকে রুহুল আমিন গ্রেফতার হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার ও সোনাগাজী স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি। এই নেতার বিরুদ্ধে প্রথম থেকে অভিযোগ করেন নুসরাতের পরিবার। তারা বলেছিল, রুহুল আমিনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্দনেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। অবশেষে পিবিআই রুহুল আমিনকে আটক করায় খুশি নুসরাতের পরিবার, স্বজন ও গ্রামবাসীরা। এমন প্রভাবশালী নেতাকে আটক করায় এ হত্যাকাণ্ডের সুবিচারের আশাবাদী তারা। নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান জানান, বোনের হত্যার সুবিচার পাবো বলে আমরা এখন আশাবাদী। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি জানান, তিনি প্রমাণ করেছেন অপরাধী যে দলেরই হোক না কেন, কোন ছাড় নেই। অপরাধী যত শক্তিশালী হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আসতেই হবে। আশাবাদী নুসরাতের ছোট ভাই রায়হানও। নুসরাতের বাবা মাওলানা একেএম মুসা মানিক জানান, বুকের ভেতর দাউ দাউ করছে। আমি শুধু মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই। নুসরাতের বাড়ি সোনাগাজী পৌরশহরের উত্তরচর চান্দিয়া এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, মূলহোতাদের ধরে ফেলেছে পুলিশ। এখন শুধু বিচারের আশা। আশা করা যায় এখন সুবিচার পাওয়া যাবে। এদিকে স্থানীয় কয়েক জনপ্রতিনিধি জানান, সাবেক জামায়াত নেতা সিরাজ উদ দৌলার মূল খুঁটির জোর ছিল রুহুল আমিন। তার মদদেই সিরাজ উদ দৌলা এবং তার সহযোগীরা নুসরাতকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। শুধু সিরাজের সঙ্গে মিলে উপকর্ম নয়। পুরো উপজেলার সব কিছুতেই প্রভাব বিস্তার করত এ রুহুল আমিন। উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ফয়জুল কবির জানান, কাগজে-কলমে আমিই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আমি তো রিজাইন করিনি। আমাকে বাদ দিয়ে কোন চিঠিও দেয়া হয়নি। সাবেক সংসদ সদস্য হাজী রহিম উল্লাহকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করা হয়েছিল। এরপর তার এবং জেলা কমিটির লোকজনের দাপটে প্রথমে আমি সক্রিয় হতে পারিনি। পরে রুহুল আমিন কিভাবে সভাপতি হয়েছেন তা আমার জানা নেই। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহমান বিকম জানান, নুসরাত মৃত্যুর ঘটনায় আমরা শোকাহত। এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় এরইমধ্যে সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর মুকছুদ আলমকে বহিষ্কারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রুহুল আমিনের বিষয়েও অনেকে বলছেন। প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। নুসরাতের পরিবার বলছে, ২৭ মার্চে নুসরাতকে যৌন হয়রানির পর রুহুল আমিনের কথা বলেই সিরাজ উদ দৌলা তাদের হুমকি দিয়েছিল। সিরাজ গ্রেফতার হওয়ার পরে তার পক্ষে যারা মানববন্ধন করেছে তাদের বিষয়েও কোন ব্যবস্থা নেননি রুহুল আমিন। সেই শম্পা ॥ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে করে বোরকা পরিহিত দুর্বৃত্তরা। কিলিং মিশনে অংশ নেয়ার সময় ছদ্মবেশী শম্পার আসল নাম উম্মে সুলতানা পপি। তিনি ঘটনার প্রকৃত অভিযুক্ত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার ভাগনি। আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ডে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন পপি ওরফে শম্পা। জবানবন্দীতে পপি জানান, ঘটনার সঙ্গে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। ঘটনার দিন নুসরাতকে ছাদে ডেকে নেন পপি এবং কিলিং মিশনে অংশ নেন। পপি আরও জানান, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের তিনটি সভার মধ্যে প্র্রথমটিতে তিনি ও মনি উপস্থিত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের সময় পপি ও মনি হাত বাঁধে জাবেদ ও জোবায়ের কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়। পরে তারা পরীক্ষার হলে অবস্থান করে। এ কাজে অংশ নিতে নূর উদ্দিন ও হাফেজ আবদুল কাদের তাদের নানাভাবে উৎসাহ দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় মুখোশধারীরা। এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে তারা চাপ দেয়। ২৭ মার্চ সিরাজের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা হয়েছিল। দগ্ধ নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে মারা যান নুসরাত। এ ঘটনায় সোমবার (৮ এপ্রিল) রাতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ্য করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন অগ্নিদগ্ধ রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। শ্লীলতাহানির মামলায় আগে থেকেই কারাবন্দী অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। হত্যা মামলা হওয়ার পর এখন পর্যন্ত এজহারের ৮জন গ্রেফতারসহ মোট ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। সিরাজ উদ দৌলার ‘ঘনিষ্ঠ’ নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, শরীফ ও হাফেজ আবদুল কাদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। এই চারজনের স্বীকারোক্তিতেই নুসরাত হত্যার ঘটনায় রুহুল আমিনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে। বাকি আসামিদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
×