ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পৃথিবী বাসযোগ্য করতে দূষণ কমাতে সচেতনতা বাড়াতে হবে

প্রকাশিত: ১০:৩১, ২১ এপ্রিল ২০১৯

পৃথিবী বাসযোগ্য করতে দূষণ কমাতে সচেতনতা বাড়াতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবহাওয়ার বৈরীভাব সারা পৃথিবীতেই বিরাজমান। জল-স্থল ও বায়ুম-লে দূষণের মাত্রা অসহনীয়। বায়ু দূষণে প্রতিবছর পৃথিবীতে ১১.৬ শতাংশ মানুষ মারা যাচ্ছে। এছাড়া খাদ্যের কারণে মানবদেহে বাড়ছে নানা ধরনের রোগ। নষ্ট হচ্ছে বনায়ন। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে কার্বন ডাই অক্সাইড। নানা সমস্যায় ধরিত্রী তথা পৃথিবীতে সমস্যা শুধু বাড়ছেই। এই অবস্থায় ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী করতে দায়িত্ব নিতে হবে বসবাসকারী প্রত্যেকের বলে মত দেন বিশিষ্টজনরা। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের দূষণ কমাতে ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানোর কথাও বলেন। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ধরিত্রী বাংলাদেশের ১৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘পৃথিবী আমার, দেশ আমার, সমাজ আমার, কাজও আমার’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত মতবিনময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বিশ^ শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানম, বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম এনামুল হক, আশা বিশ^বিদ্যালয় বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ডালেম চন্দ্র বর্মণ ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব নওয়াজীশ আলী খান। মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তাওহীদা রশিদ বলেন, বর্তমানে মানুষের নানাবিধ কর্মকা-, অতিমাত্রা জ¦ালানি ও বিদ্যুত শক্তির ব্যবহার, অপরিকল্পিত কৃষিকাজ, বৃক্ষ নিধন, পরিবেশ দূষণ, সর্বোপরি অত্যাধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি আমাদের ধরিত্রীকে বসবাসযোগ্য রাখতে সহায়ক হচ্ছে না। প্রতিবছর ৭৪ মিলিয়ন জনসংখ্যা যোগ হচ্ছে ধরিত্রীতে। যাদের বাসস্থান, খাদ্য যোগান দিতে বনায়ন নষ্ট হচ্ছে। মূল প্রবন্ধে বলেন, বায়ু দূষণে বাংলাদেশে ২০১৭ সালে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ মারা গেছে। দূষণের ফলে পৃথিবীর ৭০ শতাংশ সমুদ্ররাশির অনেক অংশ মৃতক্ষেত্র বা ডেড জোনে পরিণত হয়েছে। যেখানে অক্সিজেনের অভাবে কোন প্রাণ বেঁচে থাকতে পারে না। একে বাসযোগ্য করতে বসবাসরত মানুষকেই দায়িত্ব নিতে হবে। ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতন না হলে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব হবে না। প্রতিটি কাজ হতে হবে পরিবেশবান্ধব। তিনি বলেন, প্রতি কিলো মাংস খাদ্যাভাসে যে পরিমাণ গ্রীনহাউজ গ্যাস বিশেষ করে কার্বন পরিবেশে জমা হয় তা ৬৩ মাইল গাড়ি চালিয়ে কার্বন নির্গমনের সমান। তিনি প্রবন্ধে আরও বলেন, পরিমিত ও ঋতুভিত্তিক খাবার গ্রহণ, মাংস ও পনির জাতীয় খাবার কম খাওয়া, জ¦ালানির ব্যবহার হ্রাস করা, পরিমিত কাপড় পরিধান, বৃক্ষ রোপণ, নিজ গৃহে সবুজায়ন, পরিবেশবান্ধব এপ্লায়েন্স ব্যবহারের মাধ্যমে দূষণ নিয়ন্ত্রণে নিজেদের ভূমিকা রাখতে হবে বলেও জানান। এর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ধরিত্রী বাংলাদেশের সম্পাদক হারুণ-অর-রশিদ বাংলাদেশে অতিরিক্ত জনসংখ্যা, সততার অভাব আর আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতি পরিবেশ সমস্যাসহ তিনটি সদস্যা তুলে ধরেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সঙ্কট আমাদের তবুও যেন অসহায়। বঙ্গবন্ধু এই দেশকে সমস্ত জীবনে যেভাবে দেখেছেন সেভাবেই গড়ে তুলতে চেয়েছেন। সোনার বাংলা করতে চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব কর্মসূচী নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু বলেন। কিন্তু সেটি যদি আমরা দেখি তাহলে দেখতে পাই বাংলাদেশ কিভাবে সোনার বাংলা হবে তা সবই ছিল সেখানে। বঙ্গবন্ধু হত্যা না হলে অনেক আগেই সোনার বাংলা গড়া যেত। তিনি আরও বলেন, আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এখন। ভিয়েতনামের উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমি দেখেছি এক লোক ভিয়েতনামে কলা খেয়ে খোসা ফেলেছে রাস্তায় অন্য লোক দায়িত্ব নিয়ে সেটি ডাস্টবিনে ফেলল। এই বোধগুলো আমাদেরও জাগাতে হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটা পরিবর্তনের মধ্যে দেশ চলে এসেছে। সবাই এখন ভাল থাকতে চায়। কেউ কেউ রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়াতে চাইলেই মানুষ সাড়া দেয় না। তারা শান্তি চায়। নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বড় বড় দখলদাররা নদী দখলে রাখতে চায়। দখলদারদের ফোন পাচ্ছি। অনুষ্ঠানে বসেও পেয়েছি। নদী রক্ষায় যে মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন হবে এবং এর মাধ্যমে বুড়িগঙ্গাপারেও এক সময় পর্যটন গড়ে উঠবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকালীনই বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর উপযুক্ত সময় মন্তব্য করে খালিদ মাহমুদ বলেন, এই মুহূর্তে যদি পৃথিবীর নেতৃত্বগুলো দেখি। শেখ হাসিনার মতো এমন কোন নেতৃত্ব কোন দেশে, কোন অঞ্চলে নেই। বহুমাত্রিক সমস্যা মোকাবেলা করে একটা দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো নেতৃত্ব শেখ হাসিনা ছাড়া পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় কোন দেশে নেই। আমাদের দেশ হলো সেই দেশ, যেখানে এখনও কিছু মানুষ স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। সেই দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আর এমন নেতৃত্ব আসবে কিনা- তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ববোধকে জাগ্রত করতে হবে। দায়িত্ববোধ যদি জাগ্রত না হয়, তাহলে ধরিত্রীকে বাঁচাতে পারব কিনা সন্দেহ রয়েছে। নদীতীর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ঢাকাসহ দেশবাসীর সমর্থনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রতিমন্ত্রী। আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, দূষণ আজ সবজায়গাতেই। এটি কারা করছে? আমরাই কোন না কোনভাবে করছি। এই সমস্যা যেমন আমরা করছি তা থেকে উত্তরণের জন্য সমাধানও আমাদের করতে হবে। অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, আমাদের মানবিক মূল্যবোধ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। সবাই অর্থ উপার্জন নিয়ে ব্যস্ত। যেকোন মূল্যে সবার অর্থ চাই। আর এই যে অর্থ চাওয়ার প্রতি মোহ জাতিকে এই মোহ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে মারার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা কতটা বিবেকহীন হয়ে গেছি। বিবেকসম্পন্ন সমাজ না হলে সুফল আশা করা যায় না বলেও জানান তিনি। আশা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ডালেম চন্দ্র বর্মন বলেন, আমাদের সবাইকে মিলেমিশে সুন্দর পৃথিবী গড়ার কাজ করতে হবে। আমাদের পরবতী প্রজন্ম সেটি যেন ভালভাবে উপভোগ করতে পারে। আমরা এখন প্রতিদিন খবর শুনতে পাই নদী মরে যাচ্ছে। এসবও দেখতে হবে, বাঁচাতে হবে। প্রকৃতিকে সঙ্গে নিয়েই তো আমরা। বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম এনামুল হক বলেন, আমরা পরিবেশ ধ্বংস করে নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারছি। তিনি বলেন, আপনি যত কম খাবেন, তত সুস্থ থাকবেন অথচ এটি আমরা কেউ মানতে পারি না। পৃথিবীতে বর্জ্য হবে তবে তা কমিয়ে রাখতে হবে বলেও মত দেন তিনি। জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আলোচনায় এটি স্পষ্ট হয়েছে আমরা বিপন্নতার মধ্যে রয়েছি। পরিবেশ বিষয়ে আমরা সচেতন নই। সচেতন হতে হবে, অন্যকেও সচেতন করতে হবে এই শিক্ষা নিয়ে আমরা এখান থেকে যাচ্ছি। এ সময় অন্যান্য বিশিষ্টজনও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ধরিত্রী বাংলাদেশ সংস্কৃতি সংসদ দেশাত্মবোধক বিভিন্ন গান পরিবেশনা করে।
×