ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে চলছে বিরামহীন কর্মযজ্ঞ

প্রকাশিত: ১০:২৬, ২১ এপ্রিল ২০১৯

কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে চলছে বিরামহীন কর্মযজ্ঞ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বন্দরনগরী চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নির্মাণে চলছে বিরামহীন কর্মযজ্ঞ। দক্ষিণ এশিয়ার ও দেশের প্রথম এই সুড়ঙ্গপথ নির্মাণে কাজ চলছে রাতদিন। নদীটির তলদেশ দিয়ে তিন কিলোমিটার লম্বা এই টানেলের প্রায় দেড় শ’ মিটার খনন কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। নদীর তলদেশ দিয়ে একটি পাকা সড়ক টেনে নিতে এই সুড়ঙ্গ পথ তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে যে বিশেষ যন্ত্র তার নাম- টানেল বোরিং মেশিন বা ‘টিবিএম’। কর্ণফুলী টানেল এর প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে টানেল উদ্বোধনের পর প্রতিদিন ৫ মিটার করে টানেল মাটির তলদেশে ঘুরে ঘুরে নদীর দিকে এগুচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় শ’ মিটার খনন শেষ হয়েছে। তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় খনন কাজ চালিয়ে যাবে মেশিনটি। প্রতিদিন প্রায় পাঁচ মিটার করে খনন চালিয়ে পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে আনোয়ারার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে অত্যাধুনিক এই টিবিএম। এটি কেবল কর্ণফুলীর তলদেশ খননই করছে না একইসঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সড়কপথ তৈরি করে যাচ্ছে। মেশিনটি এমনভাবে কাজ করছে যা একপ্রান্ত থেকে পথঘাট শুরু করে অপরপ্রান্ত দিয়ে বের হয়ে যাবে। কর্ণফুলী টানেল সূত্র জানিয়েছে, অত্যাধুনিক বোরিং মেশিনটি এখনও পুরোদমে চালু করা হয়নি। এটি পুরোদমে শুরু হলে দিনে প্রায় ১০ মিটার করে খনন কাজ করা যাবে। এদিকে এই টিভিএম মেশিন দিয়ে খননের পাশাপাশি টানেলের সেগমেন্ট বসিয়ে দেয়া হবে। কংক্রিটের সেগমেন্টগুলো একটি রেল ট্র্যাক দিয়ে ঢুকবে। ঢুকে ৮টি ভাগে ভাগ হয়ে রিং আকারে একটির সঙ্গে অন্যটি লেগে যাবে। প্রতি ৮টি সেগমেন্টে দুই মিটারের একটি রিং তৈরি হবে। এভাবে টিবিএমের সামনের অংশ খনন করতে করতে এগুতে থাকবে আর পেছনে স্বয়ক্রিয়ভাবে সেগমেন্ট যুক্ত হতে থাকবে। বঙ্গবন্ধুর টানেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান জানায়, পুরো টানেল নির্মাণে ১৯ হাজার ৪ শত ৮৮টি সেগমেন্ট লাগবে। এরই মধ্যে ৮ হাজার ৭০০টি সেগমেন্ট তৈরি হয়েছে। প্রায় ২০০০ সেগমেন্ট চীন থেকে চট্টগ্রামে এনে রাখা হয়েছে। চীনের কারখানায় দিনে ৩২টি সেগমেন্ট তৈরি হচ্ছে। কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী, নদীর তলদেশে দুটি টানেল টিউব নির্মিত হবে। এর একটি দিয়ে গাড়ি শহরপ্রান্ত থেকে প্রবেশ করবে, আরেকটি টিউব দিয়ে ওপার থেকে শহরের দিকে আসবে। টানেলের প্রতিটি টিউব চওড়ায় হবে ১০ দশমিক ৮ মিটার বা ৩৫ ফুট এবং উচ্চতায় হবে ৪ দশমিক ৮ মিটার বা প্রায় ১৬ ফুট। একটি টিউবে বসানো হবে দুটি স্কেল। এর ওপর দিয়ে দুই লেনে গাড়ি চলাচল করবে। পাশে হবে একটি সার্ভিস টিউব। মাঝে ফাঁকা থাকবে ১১ মিটার। যেকোন বড় যানবাহন দ্রুত স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারবে এই টানেল দিয়ে। কর্ণফুলী টানেল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অত্যাধুনিক বোরিং মেশিন নেভাল একাডেমির কাছেই নদীর দিকে মুখ করে খনন চালাচ্ছে। মেশিনটি ৯৪ মিটার দীর্ঘ ও ২২ হাজার টন ওজনের। চীন থেকে নিয়ে আসা টিভির মেশিনটি এখানে প্রায় আট মাস ধরে জোড়া লাগানো হয়। এরপর গত ফেব্রুয়ারি থেকে এটি খনন কাজ শুরু করে। প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান প্রায় ৩০ শতাংশ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে গেছে। চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ করছে। প্রকল্পের নিরাপত্তার জন্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা চুক্তিতে কাজ করছে নৌবাহিনীর সদস্যরা।বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে আট হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন অর্থায়ন করবে প্রায় ৪ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকারের নিজস্ব। প্রকল্প শেষে ২০২২ টানেল দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে। বঙ্গবন্ধু টানেলের সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই টানেল চালুর প্রথম বছর ৬৩ লাখ গাড়ি নদীর তলদেশ দিয়ে চলাচল করবে। এক সময় এই সংখ্যা এক কোটি ৪০ লাখে গিয়ে ঠেকবে। চালুর প্রথম বছরে চলাচলকারী গাড়ির প্রায় ৫১ শতাংশ হবে কনটেইনার পরিবহনকারী ট্রেইলর ও বিভিন্ন ধরনের ট্রাক ও ভ্যান। বাকি ৪৯ শতাংশের মধ্যে ১৩ লাখ বাস ও মিনিবাস, আর ১২ লাখ কারসহ বিভিন্ন ছোট গাড়ি।
×